প্যারিসে পুরস্কার জিতল 'শনিবার বিকেল'

ভেসুল উৎসবের দ্বিতীয় দিনে উৎসব পরিচালক জ্যঁ মার্ক থিরুয়ানের সঙ্গে ফারুকী ও তিশা। ছবি: সংগৃহীত
ভেসুল উৎসবের দ্বিতীয় দিনে উৎসব পরিচালক জ্যঁ মার্ক থিরুয়ানের সঙ্গে ফারুকী ও তিশা। ছবি: সংগৃহীত

দেশে মুক্তির জন্য সেন্সর ছাড়পত্রের অপেক্ষায় ‘শনিবার বিকেল’ বা ‘স্যাটারডে আফটারনুন’ ছবিটি। বোর্ডে অনেক দিন ধরে আটকে আছে। তবে ইতিমধ্যে দেশের বাইরে সাড়া ফেলেছে ছবিটি। আজ বুধবার সকালে দেশের বাইরে থেকে এল একটি সুখবর। প্যারিসের ভেসুল উৎসবে অংশ নিয়ে দুটি পুরস্কার অর্জন করেছে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর নতুন সিনেমা ‘শনিবার বিকেল’ অথবা ‘স্যাটারডে আফটারনুন’। ফেসবুকে ফারুকীর দেওয়া একটি পোস্ট থেকে এমনটাই জানা গেছে।

প্যারিসের ম্যাজিস্টিক সিনেমা হলে ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ছয়টায় ‘শনিবার বিকেল’ ছবির প্রদর্শনী হয়। ভেসুল উৎসবে অংশ নিয়ে ফারুকীর ছবিটি নেটপ্যাক জুরি প্রাইজ এবং হাইস্কুল জুরি অ্যাওয়ার্ড জিতে নিয়েছে। পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে ফারুকী উপস্থিত থাকতে পারেননি। ফারুকীর পক্ষে উৎসবের আটিস্টিক ডিরেক্টর বাস্টিয়ান মেরোসোন পুরস্কার দুটি গ্রহণ করেন।

উৎসবের প্রথম দিনে আমন্ত্রিত দর্শকদের উদ্দেশে কথা বলছেন ‘শনিবার বিকেল’ ছবির পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। পাশে আছেন এই ছবির অন্যতম অভিনয়শিল্পী তিশাও। ছবি: সংগৃহীত
উৎসবের প্রথম দিনে আমন্ত্রিত দর্শকদের উদ্দেশে কথা বলছেন ‘শনিবার বিকেল’ ছবির পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। পাশে আছেন এই ছবির অন্যতম অভিনয়শিল্পী তিশাও। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে নয়টায় প্যারিসে অবস্থান করা ফারুকীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এরপর সেখানকার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ছয়টায় ফারুকী প্রথম আলোকে হোয়াটসঅ্যাপে জানান, ভেসুলে তাঁর ছবিটির দুটি প্রদর্শনী হয়েছে। কেমন ছিল সাড়া জানতে চাইলে ফারুকী বলেন, ‘দুটি প্রদর্শনীতে অভাবনীয় সাড়া পেয়েছি। টিকিট সোল্ড আউট ছিল। প্রদর্শনী শেষে দর্শকের আবেগ, উচ্ছ্বাস, ভালোবাসা, কান্না, নানা ধরনের মন্তব্য এবং কখনো কখনো একদম পেছনের আসন থেকে চিৎকার—শব্দগুলো গত দুই দিন মাথায় বাজতে ছিল। প্যারিসে যেহেতু ২৭ ফেব্রুয়ারি আরেকটি প্রদর্শনী আছে, যেখানে স্থানীয় সাংবাদিক এবং শিল্পী সাহিত্যিকেরা উপস্থিত থাকবেন—এটার কাজে উৎসব ভেন্যু থেকে সমাপনী অনুষ্ঠানের আগেই চলে আসতে হয়েছে। প্যারিসে ফেরার পথে তিশার সঙ্গে কথা হচ্ছিল, পুরস্কার যে-ই জিতুক না কেন, তাতে আমাদের কোনো আক্ষেপ নেই। ভেসুল উৎসবের দর্শকেরা আমাদের হৃদয় জিতে নিয়েছে অথবা আমরা তাঁদের হৃদয় জিতে নিয়েছি। প্যারিসে আসার পর পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের ৩০ মিনিট আগে আমরা জানতে পারি, আমাদের ছবিটি দুটি পুরস্কার জিতেছে। পুরস্কার জিতলে যে কারওরই ভালো লাগে। আমি জীবনে এমন একজনকেও পাইনি, যে বলেছে পুরস্কার জিতে খারাপ লেগেছে। বাংলাদেশের ছবির নাম যতবার, যতভাবে যতদিকে ছড়াবে, ততই আমাদের সিনেমার জন্য মঙ্গল।’

দেশের বাইরে ছবিটির প্রদর্শন নিয়ে আনন্দের কথাও জানিয়েছিলেন ফারুকী। উৎসবে যাওয়ার আগে প্রথম আলোকে তিনি বলেছিলেন, ‘প্রথমবার এই উৎসবে যাচ্ছি। কয়েক বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন উৎসবে বাংলাদেশে চলচ্চিত্র জায়গা করে নিচ্ছে। ক্রমে এই সংখ্যা বাড়ছে। আমি মনে করি, আমাদের সিনেমার জন্য অত্যন্ত আনন্দের খবর। ক্রমাগত দেশের বাইরের উৎসবে বাংলাদেশের ছবি জায়গা করে নিচ্ছে, আমিও তার ছোট্ট একটা অংশ হতে পারছি—এটা নিঃসন্দেহে অনেক বেশি আনন্দের।’

‘শনিবার বিকেল’ ছবিটি এর আগে মিউনিখ, মস্কো, সিডনি, বুসান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালসহ বিশ্বের বিভিন্ন উৎসবে প্রদর্শিত ও প্রশংসিত হয়। মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিয়ে ‘শনিবার বিকেল’ ছবিটি দুটি ইনডিপেনডেন্ট জুরি পুরস্কার অর্জন করে।

এক বছর ধরে ‘শনিবার বিকেল’ ছবিটি সেন্সর ছাড়পত্রের অপেক্ষা করছে। কবে ছবিটি ছাড়পত্র পাবে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত কিছু বলা যাচ্ছে না। দেশের দর্শকেরা প্রেক্ষাগৃহে বসে ছবিটি কবে উপভোগ করতে পারবেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে ফারুকী বলেন, ‘আমরা ছবি বানাই দর্শকের কাছে পৌঁছার আশায়। ছবি বানানো এবং প্রদর্শনের মধ্যকার এই লম্বা দূরত্ব আমাদের ক্লান্ত করে। হতাশ করে। আশা করি দ্রুত এই হতাশার সমাপ্তি ঘটবে। আপাতত এটুকুই বলতে পারি।’