কাছে আসার গল্পগুলো
ভালোবাসা দিবসে টেলিভিশনের পর্দায় পাওয়া যাবে হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া কিছু প্রেমের গল্প। সেসব গল্পে থাকবে প্রেম, দুঃখ, সুখের মতো নানা আবেগের উপস্থিতি। এমনটা এখন রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর পেছনে বেশ বড় ভূমিকা আছে ‘ক্লোজআপ কাছে আসার গল্প’ প্রকল্পের। এবারের প্রচ্ছদে থাকছে এই প্রকল্পের বিস্তারিত।
সাফার হ্যাট্রিক
২০১৮ সাল থেকে টানা ‘ক্লোজআপ কাছে আসার গল্প’ প্রকল্পের নাটকগুলোয় অভিনয় করছেন সাফা কবির। এবারও করলেন। এই প্রকল্পে সাফার রীতিমতো হ্যাটট্রিক হলো। এ বছরের নাটকের নাম শেষটা সবাই জানে। এই নাটকের মধ্য দিয়ে সাফা আবারও কাজ করলেন নুহাশ হুমায়ুনের সঙ্গে। এর আগে নুহাশ পরিচালিত প্রিতম হাসানের ‘খোকা’ গানের মিউজিক ভিডিওতে অভিনয় করেছিলেন সাফা।
দারুণ উৎফুল্ল হয়ে সাফা বললেন, ‘ভালোবাসা দিবসের এই প্রজেক্টে কাজ দারুণ উপভোগ করি। কাজের প্রস্তুতি থেকে শুরু করে মিটিং, শুটিং, ডাবিং পর্যন্ত একটা পিকনিক পিকনিক মুডে থাকি।’ এবার ‘কাছে আসার অসমাপ্ত গল্প’ প্রকল্পের কাজটির সঙ্গে ছোট ছোট অনেক স্মৃতি সাফার। এমনকি নাটকের গল্পটিও নাকি সাফাকে বেশ প্রভাবিত করেছে। তিনি বলেন, ‘নাটকে কিছু দৃশ্য আছে যা করতে গিয়ে আমি খুব আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছিলাম। শট শেষে কিছু সময় খুব বিষণ্ন হয়ে ছিলাম।’
এ বছরের ‘কাছে আসার গল্প’ প্রকল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্রের প্রায় সবাই তুলনামূলক নতুন। শুধু সাফার অভিজ্ঞতার ঝুলিটাই সবচেয়ে ভারী। সেই অভিজ্ঞতা থেকে সাফা বলেন, ‘প্রতিবছর এই প্রকল্পের নাটকগুলো হয় বিরাট আয়োজন করে। কাজে যত্ন থাকে। এ জন্য একে ঘিরে সবার আগ্রহও থাকে বেশি। আমার নিজের ভক্তদের মধ্যেও সেই আগ্রহ আমি দেখেছি।’
চার নতুনের প্রথম কাজ
‘ক্লোজআপ কাছে আসার অসমাপ্ত গল্প’ প্রকল্পের নাটকগুলোয় প্রধান ছয় চরিত্রের মধ্যে চারজনই নতুন। তাঁরা হলেন সুনেরাহ্ বিনতে কামাল, জুনায়েদ, আয়েশা খান ও খাইরুল বাশার।
এর আগে সুনেরাহ্ সিনেমায় অভিনয় করলেও টেলিভিশন নাটকে এটাই তাঁর প্রথম কাজ। সুনেরাহ্র সঙ্গে তোমার পাশে হাঁটতে দিও নাটকে দেখা যাবে আরেক তরুণ অভিনেতা খায়রুল বাসারকে। নাটকে কম কাজ করেন খায়রুল। তবে এরই মধ্যে ইতি, তোমারই ঢাকা সিনেমার ‘আকাশের পোষা পাখি’ অংশে অভিনয় করেছেন তিনি। তাঁকে দেখা যাবে মাসুদ হাসান উজ্জ্বলের ঊনপঞ্চাশ বাতাস সিনেমাতেও। ‘কাছে আসার অসমাপ্ত গল্প’ এবারের প্রকল্পে অভিনয় নিয়ে খায়রুল বাসার বলেন, ‘প্রতিবছর এ প্রকল্পের নাটক দেখার জন্য দর্শক অপেক্ষা করে। আগে আমারও দর্শক হিসেবে অনেক আগ্রহ ছিল এই নাটকগুলো নিয়ে। এখন নিজে এতে অভিনয় করতে পেরে ভালো লাগছে। নিজেকে একটু এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ পেলাম।’
এই প্রকল্পের মধ্য দিয়ে অভিষেক হচ্ছে আরেক তরুণ শিল্পী জুনায়েদের। তাঁর কাছে অনুভূতিটা ‘স্বপ্নপূরণ’ হওয়ার মতো। জুনায়েদ ‘কে হবেন মাসুদ রানা?’ প্রতিযোগিতার প্রথম রানারআপ ছিলেন। তাঁকে দেখা যাবে শেষটা সবাই জানে নাটকে, সাফা কবিরের সঙ্গে। জুনায়েদ জানান, ‘কে হবেন মাসুদ রানা?’ রিয়েলিটি শোর মঞ্চেই অনুষ্ঠানটির ক্রিয়েটিভ টিমের সদস্য পুলক অনিল তাঁকে ‘ক্লোজআপ কাছে আসার গল্প’ প্রকল্পে কাজের ব্যাপারে প্রস্তাব করেছিলেন। জুনায়েদ বলেন, ‘তখন থেকেই স্বপ্ন দেখা শুরু। শেষ পর্যন্ত কাজটি করতে পেরেছি। একটা স্বপ্ন সত্যি হলো।’
অভিনেত্রী হিসেবে নতুনের তালিকায় আছে আয়েশা খানের নামটিও। তিনি মডেল ও উপস্থাপক। এই প্রকল্পের এবারই তাঁর প্রথম কাজ, নাটকেও প্রথম। নাটকে নতুন হলেও এই প্রকল্পের দর্শক হিসেবে তিনি বেশ পুরোনো। আয়েশা বলেন, ‘এটি ছিল আমার স্বপ্নের কাজ। ভাবিনি কখনো ক্লোজআপ কাছে আসার গল্প প্রজেক্টের নাটকে অভিনয় করব।’
শাওনের দ্বিতীয় দান
এ নিয়ে পরপর দুবার শাওনকে দেখা যাবে ‘ক্লোজআপ কাছে আসার গল্প’ প্রকল্পে। গত বছর অনম বিশ্বাসের এই গল্পের শেষ নেই নাটকে অভিনয় করেছিলেন। এবার আসছেন তানভীর আহসানের সঙ্গে। এবারের নাটকে কাজ করতে গিয়ে নাকি বেশ টান টান অভিজ্ঞতা হয়েছে শাওনের। তিনি বলেন, ‘শুটিং হয়েছে চট্টগ্রামে। শুটিংয়ের মাঝখানে বিমানে করে ঢাকায় এসে আরেকটি কাজ শেষ করে আবার চট্টগ্রামে গিয়ে এই নাটকটির শুটিং করতে হয়েছে। এমন দৌড়ঝাঁপের মধ্য দিয়ে কাজটি করেছি।’ এ বছরের নাটকে বিশেষত্ব কী? এককথায় জানতে চাইলে শাওন বলেন, ‘এবারের গল্পের সঙ্গে ভয়ংকর মিল আছে আমার জীবনের।’
‘কাছে আসার অসমাপ্ত গল্প’ প্রকল্প এ বছর সাজানো হয়েছে তিনটি নাটক নিয়ে। প্রতিবারের মতো এবারও দর্শকের পাঠানো হাজার হাজার গল্প থেকে বাছাই করে তিনটিকে নিয়ে তৈরি হয়েছে প্রযোজনাগুলো। এবারের প্রযোজনায় গল্পকার হিসেবে দেখা যাবে আহমেদ সেজান, শাহনেওয়াজ মিঠু ও জেরিন তাসনিমের নাম। বিজয়ী তিন গল্পকে পর্দায় তুলে ধরেছেন নির্মাতা অনম বিশ্বাস, নুহাশ হুমায়ূন ও তানভীর আহসান। ভালোবাসা দিবসের জন্য তৈরি নাটকগুলো নিয়ে কথা বলেছেন তিন নির্মাতা।
এবারই প্রেমের নাটক করলাম: নুহাশ হুমায়ূন
নাটক: শেষটা সবাই জানে
নুহাশ হুমায়ূনের চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় তৈরি হয়েছে শেষটা সবাই জানে। কাছে আসার গল্প এই নাটক দিয়েই অভিষেক হচ্ছে নুহাশের। নির্মাতা মনে করেন, তাঁর এই নির্মাণ দেখেও দর্শক সেই নতুনত্বের স্বাদ পাবেন। নুহাশ বলেন, ‘আমি সাধারণত প্রেমের নাটক দেখি না, পরিচালনাও করি না। কিন্তু এবারই প্রেমের নাটক করলাম।’
‘কাছে আসার গল্প’ প্রকল্পের মধ্য দিয়ে অনেক নির্মাতাই পেয়েছেন প্রশংসা ও খ্যাতি। এবার নুহাশ যুক্ত হলেন, যিনি এরই মধ্যে নির্মাতা হিসেবে নিজেকে অনেকটাই প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আলোচিত এই প্রকল্পে আবার নিজেতে তুলে ধরা নিয়ে কোনো চাপ তাঁর মধ্যে ছিল কি না, আমরা তা জানতে চাই নুহাশের কাছে। তিনি বলেন, ‘একদমই চাপ ছিল না। নিজের মতো করে কাজ করেছি।’
সাধারণ দর্শকদের পাঠানো ভালোবাসার এই গল্পগুলো সাধারণত অনেকের সঙ্গেই প্রতিবছর মিলে যায়। তাঁর নির্মিত ‘শেষটা সবাই জানে’ গল্পের ব্যাপারেও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না। নিজের জীবনের সঙ্গেও নুহাশ নাকি এ গল্পের মিল পেয়েছেন! নির্মাতা বলেন, ‘গল্পের কিছু জায়গা নিজের সঙ্গে মিলে গেছে। এ কারণে কাজটি করতে গিয়ে রোমাঞ্চিত ছিলাম।’
কখনো প্রেম করিনি, অভিজ্ঞতা কম: তানভীর আহসান
নাটক: তোমার কাছেই যাব
‘ক্লোজআপ কাছে আসার গল্প’ প্রকল্পে নির্মাতা তানভীর আহসান কাজ করলেন প্রথমবারের মতো। তানভীর তাঁর এই নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে বললেন, ‘বড় বাজেট নিয়ে প্রতিবছর কাজটি করা হয়, এবারও হয়েছে। অনেক সহযোগিতাও পেয়েছি। তাই প্রথম অভিজ্ঞতাও ভালো ছিল।
প্রেমের এই গল্প তানভীর কী করে ফুটিয়ে তুললেন পর্দায়? এ কথা জানাতে গিয়ে নির্মাতা বলেন, কাজটি কেমন হলো? তানভীর বলেন, ‘ক্লোজআপের এই প্রকল্পের নাটকে যে ধরনের প্রেমের গল্প বলা হয়, আমি তেমন প্রেমের গল্প তুলে ধরার সাহস দেখাতে পারি না। আমি কখনো প্রেম করিনি, অভিজ্ঞতা কম। কিন্তু এই কাজটি সাহস করে করেই ফেললাম।’
তানভীর চেষ্টা করেছেন প্রতিবছর এই প্রকল্পে যে ধরনের নাটক নির্মিত হয়, তার থেকে বেরিয়ে এসে গল্পকে ভিন্ন আঙ্গিকে তুলে ধরতে। তাই এ জন্য তানভীর ‘কাছে আসার গল্প’ প্রকল্পের আগের কিছু নাটকের কাজ দেখে নিজেকে প্রস্তুত করেছেন।
গল্পগুলো সাহসী হয়, অপ্রতিরোধ্য হয়: অনম বিশ্বাস
নাটক: তোমার পাশে হাঁটতে চাই
‘কাছে আসার গল্প’–এর সঙ্গে নুহাশ ও তানভীর নতুন করে যুক্ত হলেন। তবে অনমের এটা দ্বিতীয় কাজ। পরপর দু বছর ধরে এই প্রকল্পের সঙ্গে আছেন তিনি। গত বছর অনমের নির্মাণের নাম ছিল এই গল্পের শেষ নেই। এই নির্মাতা বলেন, ‘ক্লোজআপ-এর ব্র্যান্ডিংয়ে ভালোবাসা দিবসে যে নাটকগুলো আগে হতো, সেগুলোয় দেখতাম প্রেমের একটা সুন্দর সমাপ্তি। গত বছর থেকে এই ব্র্যান্ড অসমাপ্ত প্রেম নিয়ে কাজ শুরু করে। তাই সাধারণ দর্শক গল্প লিখে পাঠালেও এগুলো মোটেও কিন্তু গতানুগতিক হয় না। গল্পগুলো সাহসী হয়, অপ্রতিরোধ্য হয়, আর একেবারেই আলাদা হয়।’
নিজের এবারের নির্মাণ নিয়ে অনম বলেন, ‘নাটকগুলো বাস্তবের কাছাকাছি রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে, যেন তা দর্শককে সহজেই স্পর্শ করতে পারে।’
অনমের নাটকের গল্পে আশির দশকের প্রেমের ধারা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। গল্পে দেখানো হয়েছে ওই সময়ের এক পক্ষাঘাতগ্রস্ত মেয়ের সঙ্গে এক অপরিচিত ব্যক্তির প্রেম। এটুকু বলেই আর কিছু জানালেন না অনম। শুধু বললেন, ‘আমার জীবনের কিছু আবেগ এই নাটকের কিছু অংশে উঠে এসেছে। আবেগঘন সেই ভাব বিনিময় আবার হয়েছে কবিতার ভঙ্গিতে।