দেয়ালে দেশহারা মানুষের যাতনা
দেশ ছেড়ে প্রাণ নিয়ে পালিয়েছিলেন লাখ লাখ মানুষ। চোখে ঘর আর দেশ হারানোর যাতনা। কেউ কেউ মা-বাবা, সন্তানকে ফেলেও চলে এসেছেন পরদেশে। মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার লাখ লাখ রোহিঙ্গার ঠাঁই হয়েছে বাংলাদেশের কক্সবাজারের শরণার্থীশিবিরে। বিভিন্ন সময় আলোকচিত্রীদের তোলা রোহিঙ্গাদের সেসব ছবি নিয়ে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু হয়েছে প্রদর্শনী ‘ফ্ল্যাশ অন রোহিঙ্গা জেনোসাইড’।
গত বৃহস্পতিবার সকালে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালায় শুরু হয়েছে এই আলোকচিত্র প্রদর্শনী। ২০১২ সাল থেকে আলোকচিত্রী কে এম আসাদ, মোহাম্মদ হোসেইন অপু, সুমন পাল ও সালাউদ্দিন আহমেদ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বহু ছবি তুলেছেন। সেগুলোর মধ্যে থেকে ৫৭ টি এবং বিভিন্ন সময়ে অন্য আলোকচিত্রীদের ধারণ করা মোট ১২০টি আলোকচিত্র নিয়ে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।
প্রধান অতিথি হিসেবে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার আমাদের শত্রু নয়। আমরা প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে চাই। আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি। চীন আমাদের সঙ্গে আছে, সমর্থনকারী অন্য দেশগুলো নিয়ে আইনি প্রক্রিয়ায় মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। আলোকচিত্রীদের পাশাপাশি চলচ্চিত্র নির্মাতাদেরও রোহিঙ্গাদের নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের অনুরোধ জানাই।’
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলীর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মীজানুর রহমান। লিয়াকত আলী বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যা শুধু বাংলাদেশের নয়, এটা মানবতা, সভ্যতা ও পৃথিবীর প্রায় সব দেশের সমস্যা। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ড্রামা থেরাপির আয়োজন করেছে, যেখানে ট্রমাটাইজ শিশুদের সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে।’ অনুষ্ঠানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ছবি তুলতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করেন আলোকচিত্রী ও সাংবাদিক কে এম আসাদ। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার প্রমুখ।
রোহিঙ্গা গণহত্যা নিয়ে আয়োজিত এ প্রদর্শনীতে দেখা যাবে গণহত্যার তথ্যচিত্র। রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনে আসা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন তারকাদের ছবিও দেখা যাবে সেখানে।
৮ জানুয়ারি পর্যন্ত জাতীয় চিত্রশালা ভবনের এক নম্বর গ্যালারিতে চলবে এ প্রদর্শনী। যৌথভাবে এ আয়োজন করেছে ভোরের কাগজ, বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি।