চার গুণীজনকে সম্মাননা জানিয়ে শেষ হলো আইডিএলসি নাট্য উৎসব
‘জীবন একটি রঙ্গমঞ্চ এবং আমরা সবাই সেই মঞ্চের অভিনেতা’। জীবন ও সমাজ থেকে নেওয়া গল্পই তো মঞ্চের নাটক। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির এক ঐতিহ্যবাহী, আদিম, অকৃত্রিম বিনোদনের ধারা এই মঞ্চনাটক। এ সময়ের তরুণদের কাছে মঞ্চনাটককে তুলে ধরতে সম্প্রতি ‘তারুণ্যের জয়গানে আসুন আনন্দের মঞ্চে’ স্লোগান সামনে রেখে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হলো ‘আইডিএলসি নাট্যোৎসব-২০১৯’।
১৯ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া পাঁচ দিনব্যাপী এ নাট্যোৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সাবেক চেয়ারম্যান ম হামিদ এবং আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের সিইও ও এমডি আরিফ খান। এ ছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব ও কলাকুশলীরা।
মনোমুগ্ধকর সব নাটক পরিবেশনার জন্য অংশগ্রহণকারী দলগুলোকে আইডিএলসি ফাইন্যান্সের পক্ষ থেকে উৎসব সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। দর্শকনন্দিত এই দলগুলো হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগ, নাট্যচক্র, তাড়ুয়া, নাগরিক নাট্যাঙ্গন, ঢাকা পদাতিক নাট্য সংসদ, শব্দ নাট্যচর্চা কেন্দ্র, সময় নাট্যদল, ঢাকা থিয়েটার, আরশিনগর ও থিয়েটার।
এবারের নাট্যোৎসবের বিশেষ ও গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল মঞ্চের পেছনের কলাকুশলীদের সম্মাননা প্রদান, যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে বাংলা সংস্কৃতির গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় মঞ্চনাটককে সমৃদ্ধ করার জন্য নিরলস পরিশ্রম করছেন। উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের নাট্য প্রকৃতি ও দেশীয় সংস্কৃতি বিকাশে আলোকসজ্জা, মঞ্চসজ্জা, মেকআপ ও পোশাক পরিকল্পনা—এই চার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য চারজন গুণী কলাকুশলীকে ‘নাট্যজন সম্মাননা ২০১৯’ স্মারক প্রদান এবং নগদ অর্থ পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। নাট্যজগতের এই চারজন কলাকুশলী হলেন—
আলোকসজ্জায় রায়হান আবেদীন: কাগজে-কলমে নাম রায়হান আবেদীন হলেও থিয়েটারপাড়ায় তাঁকে সবাই একনামে চেনে ঠান্ডু রায়হান নামে। আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে নাট্যজগতে যাত্রা শুরু তাঁর। আলোক নির্দেশক হিসেবে ঠান্ডু রায়হান কাজ করেছেন অসংখ্য নাটকে এবং কুড়িয়েছেন অকুণ্ঠ সুনাম। শ্রেষ্ঠ আলোক নির্দেশক হিসেবে অর্জন করেছেন নুরুন্নাহার সামাদ পুরস্কার, সাপ্তাহিক ছায়াছন্দ পুরস্কার এবং সম্মানজনক মোহাম্মদ জাকারিয়া পুরস্কার।
মঞ্চসজ্জায় আলী আহমেদ মুকুল: আলী আহমেদ কর্মজীবন শুরুই করেন মঞ্চসজ্জা বা সেট ডিজাইনার হিসেবে। নাট্যাঙ্গনে পথচলার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সেট ডিজাইন করেছেন ৭০টিরও বেশি নাটকে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির বহুবিধ কার্যক্রমে প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করেছেন আলী আহমেদ।
পোশাক পরিকল্পনায় আইরিন পারভিন লোপা: নাট্যজগতে আইরিন পারভিন লোপার পথচলা সেই শৈশবে, পাঁচ বছর বয়স থেকেই। উচ্চতর পড়াশোনা করেছেন নাটক নিয়েই, ভারতের রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বিশেষ কৃতিত্বে পেয়েছেন স্বর্ণপদক। বর্তমানে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে নাট্য বিভাগের ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে কাজ করছেন। দেশে-বিদেশে বিভিন্ন গুণী কলাকুশলীর সঙ্গে কাজ করে শিখেছেন এবং অর্জন করেছেন অনেক সম্মাননা।
মেকআপে শুভাশীষ দত্ত তন্ময়: শুভাশীষ দত্ত তন্ময়ের বাবা ও দাদু দুজনেই ছিলেন রূপসজ্জাশিল্পী। তাঁদের হাত ধরেই তন্ময় নাট্যাঙ্গনে আসেন রূপসজ্জাশিল্পে। মঞ্চনাটককে ভালোবেসে ২৪ বছর ধরে শুধু মঞ্চের রূপসজ্জাতেই কাজ করে গেছেন অসংখ্য দর্শকনন্দিত নাটকে। বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগে রূপসজ্জাবিষয়ক কোর্সটি তিনিই পড়ান।
অনুষ্ঠানে আইডিএলসির সিইও আরিফ খান বলেন, ‘আইডিএলসি নাট্যোৎসবে তরুণদের অংশগ্রহণ, অগ্রজদের অনুপ্রেরণা এবং দর্শকের আগ্রহ আমাদের মুগ্ধ করেছে। এই উৎসবে অংশগ্রহণকারী কলাকুশলীদের ধন্যবাদ জানাই। আর কৃতজ্ঞতা জানাই চারজন বিশিষ্ট কলাকুশলীকে, যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে মঞ্চনাটককে সমৃদ্ধ করার জন্য কাজ করছেন।’