টাবুর হিটের গোপন রহস্য
বাবার নাম জামাল হাশমী, মায়ের নাম রিজওয়ানা। হায়দরাবাদের এক সাধারণ মুসলিম পরিবারে তাঁর জন্ম। ছোটবেলায় তাঁর জন্মের পরই বাবা আর মা আলাদা হয়ে যান। তাঁর মা স্কুলশিক্ষক। তাঁর নানা গণিত আর নানি ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। তিনি অভিনেত্রী হবেন, এমন কথা ছিল না। কিন্তু তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি বলিউডে দাপটের সঙ্গে দেখিয়ে যাচ্ছেন তাঁর অভিনয়প্রতিভা। তিনি দুবার শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার আর ছয়টি ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন। শাহরুখ খানের যখন সর্বশেষ তিনটি ছবি ব্যর্থ, তখন তাঁর সর্বশেষ দুইটি ছবিই বক্স অফিস এবং সমালোচকদের কাছ থেকে নিয়ে এসেছে ভালো খবর। তিনি তাবাসসুম ফাতিমা হাশমি। যদিও নামের ‘হাশমি’ অংশটুকু তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন। কারণ তিনি মনে করেন, তাঁর জীবনে বাবার কোনো ভূমিকা নেই। হ্যাঁ, এটাই তাঁর আসল নাম। আর ভারতের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি তাঁকে চেনে টাবু নামে।
টাবুকে সর্বশেষ দেখা গেছে ‘আন্ধাধুন’ এবং ‘দে দে পেয়ার দে’ ছবিতে। দুটো ছবিই বক্স অফিসে অভাবনীয় হাসিমুখ দেখেছে। ‘আন্ধাধুন’ ছবিতে টাবুকে দেখা গেছে মোহময়ী এক খুনির ভূমিকায়, অন্যদিকে ‘দে দে পেয়ার দে’ ছবিতে দর্শক তাঁকে একেবারে অন্য রকম একটা চরিত্র মঞ্জু রায়ের ভূমিকায় পেয়েছে। ৪৮ কোটি টাকা খরচ করে বানানো ‘আন্ধাধুন’ ছবি বক্স অফিস থেকে তুলে এনেছে ৬৬৩ কোটি টাকা। ‘দে দে পেয়ার দে’ ছবি আয় করেছে আশাতীত। বলিউড হাঙ্গামাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে টাবু তাঁর ছবির সাফল্যের রহস্য বললেন।
টাবুর বয়স যখন মাত্র ১৪, তখন ‘হাম নওজয়ান’ ছবিতে তিনি দেব আনন্দের ধর্ষিতা বোনের ভূমিকায় অভিনয় করেন। সেই ১৯৮৫ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রতিটি ছবিতে দর্শক তাঁকে দেখেছে নতুন নতুন ভিন্ন রকম সব চরিত্রে। এই তিনি চোর, আবার পরের ছবিতেই তিনি পুলিশ। তিনি অবহেলিত প্রেমিকা তো সেই তিনিই আবার মমতাময়ী মা। ‘হায়দার’ ছবিতে শহীদ কাপুর তথা হ্যামলেটের মা আর ‘মকবুল’ ছবিতে লেডি ম্যাকবেথের চরিত্রের জন্য দর্শক তাঁকে মনে রাখতে বাধ্য। অন্যদিকে ‘চিনি কম’ ছবিতে অমিতাভ বচ্চনের প্রেমিকা আর ‘দৃশ্যম’ ছবিতে পুলিশ চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের মন জয় করেছেন তিনি।
ক্যারিয়ারের প্রথম দিকে ‘বিজয় পথ’, ‘স্বজন চলে শ্বশুরাল’, ‘জিত’, ‘মাচিস’ প্রভৃতি ছবি দিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন টাবু। হিন্দি ছাড়াও অসংখ্য ইংরেজি, তামিল, তেলেগু, মালায়াম, মারাঠি ছবিতেও দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেছেন টাবু। তাঁর প্রতিটি ছবিতে দর্শক নতুন টাবুকে পেয়েছেন। চলচ্চিত্রে তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য ২০১১ সালে ভারত সরকার তাঁকে চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘পদ্মশ্রী’তে ভূষিত করে।
বলিউড হাঙ্গামাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে টাবু বললেন, তাঁর ছবির সাফল্যের রহস্য। আরও বললেন চিত্রনাট্য আর চরিত্র বাছাইয়ের কৌশল। টাবু এত বড় অভিনেত্রী অথচ তিনি নাকি কখনোই চক দিয়ে ক্যারিয়ার প্ল্যান আঁকেননি। দীর্ঘ ৩৪ বছর ধরে বড় পর্দায় টাবুকে দেখেও মন ভরেনি দর্শকদের। তাই কয়েক বছর ধরে অভিযোগ আসছে, তিনি নাকি অভিনয় কমিয়ে দিয়েছেন। টাবুর চরিত্র বাছাইয়ের পদ্ধতিও কোনো রকেট সায়েন্স না। তিনি কোন চরিত্র করবেন আর কোনটি করবেন না, সেটি খুবই সহজভাবে নির্ধারণ করেন। চিত্রনাট্যে নিজের চরিত্র শুনে যদি মনে ধরে, তবেই সেই ছবিকে ‘হ্যাঁ’ বলেন। আর না হলে ‘না’। তবে শর্ত এটুকুই যে ওই চরিত্রে তাঁর অভিনয় করে দেখানোর সুযোগ থাকতে হবে। নতুন কিছু করার জায়গা থাকতে হবে।
বক্স অফিসে তাঁর ছবি যে এত বড় বড় সংখ্যা রোজগার করে, তাঁর ‘গোপন’ রহস্য খুবই ছোট, এই এটুকুই!