গানের জন্য পান বিসর্জন
সুবীর নন্দী বয়সে আমার অনেক ছোট। আমার ৭৪ আর ও ৬৭–তে চলে গেল। ওর মৃত্যুসংবাদ শুনে খুব খারাপ লেগেছে। ওর মতো একই সঙ্গে ভালো মানুষ আর এত ভালো শিল্পী আগামী ১০০ বছরেও হয়তো এই দেশ পাবে না। গান ছাড়া ও আর কিছুই বুঝত না। মানুষ হিসেবে ছিল সহজ–সরল।
একসময় সুবীর নন্দীর খুব পান খাওয়ার অভ্যাস ছিল। তখন বয়স অল্প ছিল, কিন্তু ওর মুখে সব সময়ই পান থাকত। একদিন বলল, ও নাকি দিনে এক বিড়া পান খায়! শুনে আমি তো অবাক। বলে কী! প্রখ্যাত সুরকার ও সংগীত পরিচালক সত্য সাহা তাঁর একটি ছবিতে গান গাওয়ার জন্য সুবীর নন্দীকে ডাকলেন। সত্য সাহার সামনে বসে সুবীর নন্দী গান গাইছে। কিন্তু একটা শব্দের উচ্চারণ ও কোনোভাবেই করতে পারছিল না। বারবার চেষ্টা করছে, কিন্তু হচ্ছে না।
সত্য সাহা তাকে বললেন, ‘হবে কীভাবে? সারা দিন মুখে পান দিয়ে রাখলে উচ্চারণ বের হবে?’
সেদিন সত্য সাহার এই মন্তব্য তার মনে দাগ কেটেছিল। যে মানুষটিকে মুখে পান ছাড়া দেখা যায় না, সে মুহূর্তেই পান ছেড়ে দিল। এরপর আর কখনো ওর মুখে পান দেখিনি।
সুবীর নন্দী ছিল খুব মজার মানুষ। ১৯৯৮ সালে আমরা গান গাওয়ার জন্য গিয়েছিলাম কাতারে। আমাদের যে হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করা হয়, সেখানে আমার যা যা প্রয়োজন, সব দেওয়া হয়। সুবীর আমাদের কিছুই ধরতে দেয়নি। ধরলেই নাকি বিল দিতে হবে। আমরাও সরল মনে ওর কথা বিশ্বাস করেছি। যখন চলে আসব, তখন বুঝতে পারি, আসলে ও আমাদের সঙ্গে মজা করেছে। দেশে ফিরে সেই ঘটনা নিয়ে সে কী আনন্দ!