সিনেমার মালিকানা নির্ধারণ হবে আদালতে
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি ও প্রযোজক সমিতির কয়েকটি বৈঠকের পরও ‘নোলক’ সিনেমা নিয়ে জটিলতার সুরাহা হয়নি। এরপর পরিচালকের মর্যাদা ফিরে পেতে রাশেদ রাহা থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পাল্টা জিডি করেন প্রযোজক সাকিব ইরতেজাও। ‘নোলক’ সিনেমার পরিচালক ও প্রযোজককে এবার সরাসরি আদালতে হাজির হতে হচ্ছে। ২৫ মার্চ সকালে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির হতে পরিচালক রাশেদ রাহা ও প্রযোজক সাকিব ইরতেজা সনেটকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বাবলুর রহমান।
পরিচালক-প্রযোজক দ্বন্দ্বে শাকিব খান ও ববি অভিনীত ‘নোলক’ সিনেমা নিয়ে অনেক জল ঘোলা হয়েছে। জমকালো মহরতের পর টানা ২৮ দিন ভারতের হায়দরাবাদে শুটিং করেন পরিচালক রাশেদ রাহা। শুটিং শেষে ইউনিট নিয়ে দেশে ফেরার পর পরিচালকের সঙ্গে দ্বন্দ্ব শুরু হয় প্রযোজকের। এরই জেরে পরের লট থেকে প্রযোজক সাকিব ইরতেজা পরিচালক রাশেদ রাহাকে ছাড়াই শুটিং শুরু করে দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগে অনেক সময় পার হয়ে যায়। শুরুতে পরিচালক ও প্রযোজক সমিতিতে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করেন পরিচালক রাশেদ রাহা। অভিযোগের পর চলচ্চিত্রের দুই সমিতি একত্র হয়ে পরিচালক ও প্রযোজককে ডেকে পাঠান। মৌখিকভাবে পরিচালককে দিয়ে ছবির কাজ শেষ করার সিদ্ধান্ত হলেও তা মানেননি প্রযোজক। তিনি সাকিব-সনেট অ্যান্ড টিমের নামে ছবির কাজ শেষ করার উদ্যোগ নেন। বিষয়টি টের পেয়ে রাশেদ রাহা তাঁর সিনেমার পরিচালকের মালিকানা ফিরে পেতে আইনের আশ্রয় নেন। ঢাকার তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় জিডি করেন তিনি। পরিচালকের সেই জিডির পর সিনেমার মালিকানার বিষয়টি সুরাহার জন্য এখন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত পর্যন্ত গড়াচ্ছে।
আদালতের বিষয়টি পরিচালক রাশেদ রাহা জানতে পেরেছেন বলে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা থেকে আজ সকালেই জিডির তদন্ত কর্মকর্তা বাবলুর রহমান আদালতে হাজির হওয়ার আদেশের চিঠি আমার কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। আদালত যেহেতু আমাকে ডেকেছেন, সেখানেও আমার কথা বলব।’
সম্প্রতি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি ও প্রযোজক সমিতির নেতারা প্রস্তাব দিয়েছিলেন, ছবিতে পরিচালক হিসেবে দুজনের নাম রাখার। রাহা বলেন, ‘আলোচনার একপর্যায়ে এই প্রস্তাব দেওয়া হয়। আমি কিন্তু বিষয়টা মানিনি। এরই মধ্যে দেখি ফেসবুকে ছবিটির প্রচারণা চালানো হচ্ছে, সেখানে পরিচালক ও প্রযোজক হিসেবে সাকিব-সনেট অ্যান্ড টিম লেখা হচ্ছে!’
আদালতের বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে সাকিব ইরতেজাকে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। খুদে বার্তা পাঠালেও সাড়া দেননি তিনি।
চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব বদিউল আলম খোকন বিষয়টি প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সমস্যাটি শোনার পর আমরা পরিচালক ও প্রযোজক দুই পক্ষকেই ডেকে নিয়ে আলোচনায় বসি। সব সমস্যা শোনার পর পরিচালক হিসেবে দুজনের নাম রাখার প্রস্তাব দিই। তবে শুরুতে অবশ্যই রাশেদ রাহার নাম, পরে সাকিব ইরতেজা। এ প্রস্তাবের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো জানা যায়নি।’
রাশেদ রাহার নাম বাদ দিয়ে ছাড়পত্রের জন্য ছবিটি চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডে জমা দেওয়া কিংবা প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দেওয়া সম্ভব? বদিউল আলম বলেন, ‘এটা কোনো অবস্থায় সম্ভব নয়। সবাই জানেন, এই ছবির পরিচালক রাশেদ রাহা। মহরতে তাঁকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতিতে এটা রাশেদ রাহার ছবি হিসেবে নিবন্ধিত।’
এদিকে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড বরাবরও একটি চিঠি ইস্যু করেছেন পরিচালক রাশেদ রাহা। ১৯ মার্চ চিঠিটি গ্রহণ করেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের চলচ্চিত্র পরিদর্শক আরিফুর রহমান। চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সেন্সর বোর্ডের এই কর্মকর্তা। তিনি জানিয়ে রাখেন, এখনো ছবিটি সেন্সর ছাড়পত্রের জন্য জমা পড়েনি।
চিঠিতে রাশেদ রাহা উল্লেখ করেন, ‘একজন পরিচালকের কাছে তাঁর সৃষ্টি সন্তানতুল্য। সৃষ্টি হারানোর আশঙ্কায় আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। তাই “নোলক” সিনেমাটি পরিচালনায় আমার নাম ছাড়া সেন্সর প্রদর্শন বা সেন্সর ছাড়পত্র যাতে না পায় জানিয়ে রাখলাম।’
সাধারণ ডায়েরির তদন্ত কর্মকর্তা বাবলুর রহমান খান আজ প্রথম আলোকে বলেন, বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে এখন এই সমস্যার সমাধান হবে। এদিকে নোলক সিনেমার প্রযোজক সাকিব ইরতেজাও তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন বলে জানান বাবলুর রহমান। ২৫ মার্চ একই দিনে আদালত তাঁর কথাও শুনবেন বলে জানান জিডির এই তদন্ত কর্মকর্তা।
২০১৭ সালের ১ ডিসেম্বর ভারতের হায়দরাবাদে ‘নোলক’ ছবির শুটিং শুরু হয়। শাকিব খান, ববি, মৌসুমী, ওমর সানী, তারিক আনাম খান ছাড়াও এই ছবির অভিনয়শিল্পীরা হলেন নিমা রহমান, রেবেকা, ভারতের রজতাভ দত্ত, সুপ্রিয় দত্ত, অমিতাভ ভট্টাচার্য প্রমুখ।