‘আমি সব সিন্ডিকেটে আছি’

লিফটে অমিতাভ রেজা চৌধুরীর সঙ্গে পরিচয়। তাঁর প্রস্তাবেই প্রথম বিজ্ঞাপনের মডেল। সেই মডেল থেকে ঘটনাক্রমে নাটকে নাম লেখান চট্টগ্রামের ছেলে অভিনেতা ইমতু রাতিশ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন মনজুরুল আলম

অভিনেতা রাতিশ ইমতু। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

প্রথম আলো :

ঈদের জন্য কী কী কাজ করছেন?

একাধিক সেলিব্রিটি শো উপস্থাপনা করব। তিনটা মিউজিক ভিডিও আসবে। আটটির মতো নাটকে দর্শক দেখবেন। বেশির ভাগ গল্পেই দর্শকদের পছন্দের কথা মাথায় রেখেছি। বৈচিত্র্য থাকবে এবার। কারণ, এবার ‘অমুক শালা-দুলাভাইয়ের মধ্যে নাই’, ‘বাবা–মায়ের চোখে জল’, ‘জামাই–বউ চানাচুর’—এমন গতানুগতিক কোনো কাজ করছি না। বিটিভিসহ বেশির ভাগ টেলিভিশন ও ইউটিউবের জন্য ভালো কিছু গল্পে কাজ করেছি।

প্রথম আলো :

শোনা যাচ্ছে, কিছু কাজ এক দিনেই করতে হচ্ছে?

আমাদের কিছু নাটকের প্রোডাকশন ডিজাইনটাই এমন যে এক দিনে শুটিং শেষ করতে হবে। আমি সময় চাইলে তো হবে না। পরিচালক–প্রযোজককে চাইতে হবে। তাঁরা দ্রুত কাজ শেষ করতে চান। এভাবে এখন অভ্যস্ত। এক দিনেই কাজগুলোকে যথাযথভাবে করার চেষ্টা করছি। ভাই রে, বাংলাদেশের আর্টিস্ট তো, সবই সম্ভব! তবে এটাও মনে হয়, আরেকটু সময় পেলে ভালো হতো। কী আর করা, এ নিয়ে আফসোস নেই।

অভিনেতা রাতিশ ইমতু। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

প্রথম আলো :

বাজেটের কারণে অনেক সময় সিনিয়র গুণী অভিনয়শিল্পীদের বাদ দেওয়া হয়। কাজের জায়গায় এটা উপলব্ধি করেন?

কারা থাকছেন, এটা তো চিত্রনাট্যের ওপর নির্ভর করে। এখন কাজের অনেক দরজা খোলা। দেখা যায়, অনেক সিনিয়র শিল্পী অন্য কাজে যুক্ত থাকার কারণেও তাঁদের শিডিউল পাওয়া যায় না। এবার বিটিভির একটি নাটকে ডা. এজাজ, নাজনীন হাসান আপাসহ অনেককেই পাশে পেয়েছিলাম। সিনিয়র থাকলে অনেক কিছু শেখা যায়। নতুন নতুন অভিজ্ঞতা হয়। আমি বলতে পছন্দ করি না, সব জানি। ‘আমি সব জানি’র মানসিকতার হলে হবে না।

প্রথম আলো :

আপনি তো একই সঙ্গে নিয়মিত অভিনেতা, মডেল ও উপস্থাপক। একসঙ্গে সব সামলান কীভাবে?

এখানেও আমি মানিয়ে নিয়েছি। একেক দিন একেকটা কাজ করছি। যখন যেটা করছি, মনোযোগ দিয়ে করছি। নাটক থেকে মডেলিং আলাদা, আবার উপস্থাপনায় আলাদা। বলা যায়, শিল্পী হিসেবে কাজের বৈচিত্র্য তৈরি হয়েছে। কোনো কাজই আমার কাছে চ্যালেঞ্জিং নয়। নিজের কাজটা ঠিকমতো করছি কি না, মনোযোগ দিয়ে করছি কি না, সেই চেষ্টা করি।

অভিনেতা ইমতু রাতিশ। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

প্রথম আলো :

নিজের কোন পরিচয়টা দিতে পছন্দ করেন?

আমি একজন অভিনেতা হওয়ার চেষ্টা করছি। অভিনেতাই আমার পরিচয়। যদি বলেন, কেন? তাহলে বলব, একজন অভিনেতা নিজেকে ভাঙতে পারে। কিন্তু উপস্থাপনা বা মডেলিংয়ে তা সম্ভব হয় না। একজন অভিনেতাই চ্যালেঞ্জ নিতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলি, আমি আমার সব কস্টিউম রেখে দিই। দেখা যায়, ৫–১০ বছর পর হলেও এগুলো আবার অভিনয়ের জন্য পরার সুযোগ তৈরি হয়। এটা নেশার মতো। প্রেমিক, লোভী, মাস্তান—নানা চরিত্র উপভোগ করি।

প্রথম আলো :

ইদানীং কেউ কেউ বলছেন, বিনোদন অঙ্গনে সিন্ডিকেটের প্রভাব আছে। আপনার অভিজ্ঞতা কী?

আমি মনে করি, এটা একধরনের ফিল করার বিষয়। মানে আপনি পরিস্থিতিটাকে কীভাবে নিচ্ছেন, সেটা। আর এটা নিয়ে খুব বেশি ভাবি না। কাজ জানলে ডাকবেই। আমি আমার সেই জায়গায় আছি। সবার সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক। কাজের প্রয়োজনে সবার সঙ্গেই যোগাযোগ রয়েছে। আমি সব সিন্ডিকেটে আছি। ইন্ডাস্ট্রির সবাই মিলে একটা পরিবার। একটা কথা আমি মানি, কাজ জানলে, সময়ের সঙ্গে নিজের মধ্যে পরিবর্তন আনলে, এখানে কাজের অভাব নেই।

নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে সহশিল্পীদের সঙ্গে ইমতু। ছবি: ফেসবুক

প্রথম আলো :

আপনি তো ছোটবেলায় থিয়েটারে যুক্ত ছিলেন...

শৈশব থেকে অভিনেতা হওয়ার ইচ্ছা ছিল। চট্টগ্রামের শিল্পকলা একাডেমির সংগীত ও নাট্যকলা বিভাগের ছাত্র ছিলাম। এ ছাড়া শাপলা কুঁড়ির আসর ও আব্বাস উদ্দিন স্মৃতি সংসদের সাংস্কৃতিক সব কর্মে সংশ্লিষ্টতা ছিল। এখান থেকে অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসা। এখন ঢাকায় মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়ের হয়ে নিয়মিত মঞ্চে অভিনয় করি।

প্রথম আলো :

টিভিতে...

চট্টগ্রাম থেকে পড়াশোনার জন্য ঢাকায় আসা। একবার এক বন্ধুর অফিসে যাওয়ার সময় লিফটে দেখা হয় পরিচালক অমিতাভ রেজা চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি লিফটে দেখেই আমাকে মডেল হওয়ার প্রস্তাব দেন। সেই সময় অমিতাভ রেজা আলোচনার তুঙ্গে। পরে অমিতাভ ভাইয়ার বিজ্ঞাপনে কাজ করি। সেখান থেকে আমাকে আরও অনেকেই ডাকেন। এভাবে ২০০৭ সালে একদিন চ্যানেল ওয়ান থেকে ডাকা হলে দেখা করতে যাই। সেখানে কোনো একটি কাজে এসেছিলেন পরিচালক পারভেজ আমীন। তিনি আমাকে দেখে নাটকে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। শুরু হলো একক নাটকের কাজ। সহশিল্পী ছিলেন মোনালিসা। প্রথম ধারাবাহিকে যুক্ত হওয়ার গল্পটাও একই। একুশে টিভির অফিসে বসে আছি। সেখানে আমাকে মামুনুর রশীদ ভাই দেখে বললেন, দক্ষিণায়ন নামে একটি ধারাবাহিকে অভিনয় করতে হবে।

নাটকের একটি লুকে ইমতু্। ছবিঃ ফেসবুক

প্রথম আলো :

কখনো কি মনে হয়, আপনার ক্যারিয়ার আরও ভালো জায়গায় থাকতে পারত?

এই কথা আমাকে অনেকেই বলেন। আমি আসলে নিজের কাজটাই করে যেতে চাই। কাজই তার জায়গা ঠিক করে দেয়। এখনো পাবলিক প্লেসে ছবি তোলার কথা বললে বিব্রত হই। আমি কোথায় আছি, সেটা ভাবায় না। হঠাৎ সাফল্যের চূড়ায় উঠলে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। জীবনে এটা–ওটা করে ফেলতে হবে, ভাবি না। আমার কাজ দেখেই সব সময় নির্মাতারা ডেকেছেন। আমি আসলে বাসার গৃহকর্মীর মতো। আমাকে কাজের জন্য সবাই ডাকে। এটাই আশীর্বাদ। কোনো সিন্ডিকেটে আমাকে যেতে হয় না।

প্রথম আলো :

এবার ঈদ করবেন কোথায়?

চট্টগ্রামে পরিবারের সঙ্গে। আসলে নিজের এলাকার বাইরে ঈদ তো ভাবতেও পারি না। ঈদ করেই আবার মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠান করতে যেতে হবে।

অভিনেতা ইমতু রাতিশ। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে