মাত্র ৮ ঘণ্টার জন্য ঢাকায়—কী হয়েছিল শাবনূরের
ঢালিউডের একসময়ের জনপ্রিয় নায়িকা শাবনূর এখন পরিবার নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে থাকেন। মাঝেমধ্যে দেশে আসেন। এসেই কয়েক মাস থাকেন। এরপর প্রয়োজনীয় সব কাজকর্ম সেরে আবার উড়াল দেন। এক দশকের বেশি সময় ধরে এভাবেই চলছে এই তারকার জীবন। এবারও দেশে এসেছেন, তবে একদম চুপচাপে এবং হঠাৎ করে। তা-ও এসেছেন মাত্র ৮ ঘণ্টার জন্য এলেন। শাবনূর জানালেন, তাঁর এবারের আসাটা অন্য সময়ের মতো ছিল না। সব সময় দেশে ফেরার খবরে আনন্দ থাকলেও এবার আসার পুরোটা সময় কেটেছে অস্থিরতায়। কখন তাঁকে বহনকারী উড়োজাহাজ দেশের মাটি স্পর্শ করবে, তা নিয়ে ছিল চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। শাবনূরের অবস্থাটা এমন, যত দ্রুত ঢাকায় নামতে পারেন, ততটাই স্বস্তির। শাবনূরের এই তাড়াহুড়ো ও হঠাৎ বাংলাদেশে আসার সিদ্ধান্ত তাঁর মায়ের অসুস্থতার কারণে।
শাবনূর জানালেন, সিডনি সময় ২৮ মার্চ তিনি ঢাকার উদ্দেশে রওনা করেন। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজে চড়ে তিনি একাই ঢাকায় আসেন। পথে ছিল পাঁচ ঘণ্টার ট্রানজিট। এবারের যাত্রাপথের সময়টা যেন তাঁর কোনোভাবেই শেষ হচ্ছিল না। মনে হচ্ছিল পথটা অনেক দীর্ঘ। ঢাকায় আসার এই কয়েক ঘণ্টার পথটা কীভাবে কেটেছে, তা কল্পনাও করতে পারেন না তিনি। গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় রাতে কথা হয় শাবনূরের সঙ্গে। জানালেন, শুধু অসুস্থ মাকে সঙ্গে নিয়ে উড়াল দিতে আট ঘণ্টার জন্য বাংলাদেশে এসেছিলেন। তাই এবার বাংলাদেশে এসে কাউকে কিছু জানাতে পারেননি।
কথাপ্রসঙ্গে শাবনূর জানালেন, মা, ভাই ও বোন এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যরা এখন স্থায়ীভাবে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে থাকেন। তবে সবাই কোনো না কোনো সময় আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকেন। এবার তাঁর মা ছয় মাসের বেশি সময় ধরে ঢাকায় ছিলেন। এর মধ্যে এক মাস ধরে শারীরিক নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
শাবনূর বললেন, ‘এক মাস ধরে আম্মা বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। প্রতিনিয়ত ফোনে কথাবার্তা হচ্ছিল। ঢাকার বড় বড় হাসপাতালের ৩-৪ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে তিনি দেখিয়েছেন। কিন্তু কোনোভাবেই তাঁরা আম্মার রোগ ধরতে পারছিলেন। এদিকে আম্মার শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকে। একটা সময় বোঝা গেল, আম্মার নিউমোনিয়া হয়েছে। এর বাইরে আরও কয়েকটি সমস্যা ছিল। ২৮ মার্চ তো এমন অবস্থা হয়েছিল, আম্মা কথা বলার মতো শক্তি হারিয়ে ফেলছেন। শ্বাসকষ্টে একদম কাবু হয়ে পড়েন। সেদিন আম্মার শারীরিক অবস্থা কেমন তা জানতে পারছিলাম না, কারণ তিনি কথা বলতেও পারছিলেন না। আম্মার দেখাশোনার দায়িত্বে যিনি ছিলেন, তাঁকে শুধু বলেছি, আমি আসা পর্যন্ত আম্মার সঙ্গে থাকতে। আম্মাকে মানসিকভাবে শক্তি ও সাহস দিতে। এরপর আমি টিকিট খোঁজা শুরু করলাম। সেদিন রাতেই অনেক কষ্টে টিকিট পেয়ে যাই। আমার বোন আর ভাইয়েরা বলছিল, এ অবস্থায় একা যেতে পারব তো? তাঁরা কেউ সঙ্গে আসবে নাকি? আমি বললাম, একাই যাব। কোনো সমস্যা হবে না। লাগেজ নিইনি, তাই কোনো কাপড়চোপড় নিইনি। বলা যায়, এককাপড়েই উড়াল দিই। পাসপোর্ট, টিকিট ও একটা ব্যাগপ্যাক সঙ্গী করেই আমি বাসা থেকে এয়ারপোর্টের উদ্দেশে রওনা হই। প্লেনের পুরোটা সময়, ট্রানজিটের সময়—কীভাবে যে কেটেছে, তা বলে বোঝাতে পারব না। আম্মার জন্য শুধু দোয়া করছিলাম।’
কথায় কথায় শাবনূর বললেন, ‘ঢাকায় খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম, চিকিৎসকেরা একের পর এক শুধু আম্মার টেস্ট করাতে বলছেন। একপর্যায়ে হাসপাতালে ভর্তি করাতেও বললেন। কিন্তু এ অবস্থায় আমি কোনোভাবে হাসপাতালে ভর্তি করাতে ভরসা পাচ্ছিলাম না। তাই বারবার আম্মার দেখাশোনা যে করছে, তাকে শুধু বলেছি, কোনো হাসপাতালে ভর্তি করানোর দরকার নেই। কষ্ট করে হলেও আমি আসা পর্যন্ত একটু অপেক্ষা করতে। কারণ, আমি আম্মাকে দেশে রাখব না। এসেই তাঁকে নিয়ে উড়াল দেব। শুনেছি, আম্মারও কষ্ট হচ্ছিল। এসেই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তাড়াহুড়ো করে আম্মার লাগেজ গুছিয়ে আবার উড়াল দিলাম।’
শাবনূর জানালেন, সিডনি যাওয়ার পরপরই তাঁর মাকে সেখানকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরদিন থেকে তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হতে শুরু করে। চিকিৎসকদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় তাঁর মা এখন পুরোপুরি সুস্থ। শাবনূর বললেন, ‘কয়েক দিন আম্মা হাসপাতালে ছিলেন। এখন তিনি বাসাতেই আছেন। একদম পুরোপুরি সুস্থ।’