মন্দ লোকের নতুন কোন চরিত্র

নানা রকম চরিত্র দিয়ে মিজু আহমেদকে চ্যালেঞ্জর মুখে ফেলে দিতেন পরিচালক কাজী হায়াৎ। সেসব চরিত্রে উতরে গিয়ে সিনেমায় মজবুত অবস্থান তৈরি করেছিলেন অভিনেতা মিজু আহমেদ। মিজু আহমেদ মানেই ছিল মন্দ লোকের নতুন কোনো চরিত্র! দেড় শতাধিক ছবির এই অভিনেতা ২০১৭ সালের ২৭ মার্চ প্রয়াত হয়েছিলেন।
ঢালিউডের দাপুটে খলনায়ক ছিলেন মিজু আহমেদ। তাঁর অভিনয়ের বিশেষ ঢং পছন্দ করতেন দর্শক। সত্তর দশকের শেষের দিকে সিনেমায় যুক্ত হলেও জনপ্রিয় হয়ে উঠতে তাঁকে অপেক্ষা করতে হয়েছে নব্বই দশক পর্যন্ত। এই মিজু আহমেদ সিনেমায় প্রতিষ্ঠা পান পরিচালক কাজী হায়াতের হাত ধরে। এই পরিচালকের ছবিগুলোর নিয়মিত অভিনেতা ছিলেন মিজু। তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা ছবিগুলোর অধিকাংশই কাজী হায়াতের পরিচালনায় নির্মিত। তিনি কাজ করেছেন হায়াতের ‘তেজী’, ‘আম্মাজান’, ‘কষ্ট’, ‘ধর’, ‘বাস্তব’, ‘ইতিহাস’ ছবিগুলোতে। কাজী হায়াতের ‘ত্রাস’ (১৯৯২) এবং ‘ওরা আমাকে ভালো হতে দিল না’ (২০১০) ছবি দুটিতে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন মিজু আহমেদ।
আজ মিজু আহমেদের প্রয়াণের দিনে তাঁকে স্মরণ করেছেন কাজী হায়াৎ। তিনি বলেন, ‘মিজু আহমেদ আমার বন্ধু ছিল। প্রিয় মানুষ ছিল। প্রিয় অভিনেতা ছিল। তাঁর সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিল। ব্যক্তিগত অনেক কিছুই সে আমাকে জানাত। অনেক শলা-পরামর্শ করে দুজনে কাজ করেছি। সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া ‘বীর’ ছবিটায় তাঁর করার মতো চরিত্র ছিল। তাঁকে খুব মিস করেছি। অনেক বছর তাঁকে ছাড়া কাজ করিনি আমি।’

মিজু আহমেদের সঙ্গে সম্পর্কের শুরুর দিকের কথা জানতে চাইলে কাজী হায়াৎ বলেন, ‘আমি তাঁকে নিয়ে প্রথম কাজ করি ‘দাঙ্গা’ ছবিতে। এর আগেও সে সিনেমায় কাজ করেছে। ভিলেনের চামচা চরিত্রে। সেগুলোয় ‘ইয়েস বস’, ‘হুকুম দেন’ এসব সংলাপের বাইরে যেতে পারেনি। আমার ছবিতেই প্রথম বড় চরিত্র করেছে সে। তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় প্রয়াত প্রযোজক কে এম আর মঞ্জুর সাহেবের মাধ্যমে। তিনিই একদিন আমাকে বললেন, “দেখেন এই অভিনেতাকে কাজে লাগানো যায় কি না। ইউনিভার্সিটিতে পড়েছে। সিনেমায় এসে কুলিয়ে উঠতে পারছে না। তাঁর কথা শুনলে, পোশাক-আসাক দেখলে মনে হবে না যে, ভার্সিটিতে পড়েছে। কথা বলে দেখেন।” আমি মিজু আহমেদের সঙ্গে কথা বললাম। বোঝার উপায় ছিল না যে ভার্সিটি পড়ুয়া ছেলে। পরে জানতে পারলাম, সে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছে। আমার একটা দুর্বলতা সৃষ্টি হলো। তারপর কাজ করতে গিয়ে সে আমাকে মুগ্ধ করে দিল।’

মিজুর কোন অপছন্দের দিক ছিল? কাজী হায়াৎ বলেন, ‘ওর একটা সমস্যা ছিল। অভিনয় করার সময় ভেচকি মারত। অন্যরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারত না তাঁকে। আমিই তাঁকে ওটা করতে দিতাম না।’ কাজী হায়াতের নিয়মিত অভিনেতাদের মধ্যে প্রয়াত হয়েছেন রাজিব, মান্না, দিলদার এবং মিজু আহমেদ। তাঁদের শূন্যতা কি পূরণ হয়েছে? কাজী হায়াৎ মনে করেন, কারও শূন্যতা কেউ পূরণ করতে পারে না। তিনি বলেন, ‘হয়তো আরও ভালো অভিনেতা ভবিষ্যতে আসবে। মৃত্যুর ধারাকে তো আর রুখে দেওয়া যাবে না। সবাইকেই যেতে হবে।’ তবে মিজুকে মিস্ করেন কাজী হায়াত। সেটা স্বীকার করতে কার্পণ্য করেননি তিনি।
মিজু আহমেদ ১৯৫৩ সালের ১৭ নভেম্বর কুষ্টিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৭ সালে নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত ‘তৃষ্ণা’ ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন তিনি। অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি প্রযোজনার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। বন্ধু ও সহশিল্পী রাজিবের সঙ্গে যৌথভাবে তিনি প্রযোজনা করেন ‘মহৎ’, ‘চালবাজ’, ‘আসামী গ্রেফতার’, ‘জবরদখল’ ছবিগুলো। শিল্পী সমিতির সভাপতিও ছিলেন মিজু আহমেদ। জন্ম বা প্রয়াণের দিনে সেই সমিতি কি মনে রেখেছে তাঁকে?