
বিকেলে কাঠি পড়ল রহিম ঢুলির ঢোলে। তৈরি হলো উৎসবের এক স্নিগ্ধ আবহ। শুরু হলো ‘বাংলা লোকনাট্য উৎসব-২০১৭’। বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের উদ্যোগে রাজশাহীর পুঠিয়ার রাজবাড়ি মাঠে ১৪ বছর ধরে পুঠিয়া থিয়েটার এই উৎসবের আয়োজন করছে। গতকাল শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী এই উৎসবে প্রতিবারের মতো দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকনাট্য দল অংশ নিচ্ছে।
পুঠিয়া রাজবাড়ির সামনে উৎসব মঞ্চটি এমনভাবে করা হয়েছে, দেখেই মনে হচ্ছে রাজবাড়ির বৈঠকখানা। মঞ্চের বাঁ দিকে রাখা হয়েছে মঞ্চসমান উঁচু বঙ্গবন্ধু, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ইসলাম, লালন সাঁই ও সেলিম আল দীনের পোর্ট্রেট। আর মাঠজুড়েই রয়েছে দৃষ্টিনন্দন আলোকসজ্জা। ‘আপন ঘরের খবর নেবার কাল এল এবার, এল শেকড়ের সুধারসে আত্মজাগরণের সম্ভাবনা’—এই ঘোষণা নিয়ে এবার উৎসবের উদ্বোধন করেন সাংসদ আবদুল ওয়াদুদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের প্রধান উপদেষ্টা কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক, সাংসদ আবুল কালাম, বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক তৌফিক হাসান। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ। স্বাগত বক্তব্য দেন উৎসবের প্রধান সমন্বয়কারী ও বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী সাঈদ হোসেন।
এবারের উৎসবে কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হককে সেলিম আল দীন লোকনাট্য সম্মাননা দেওয়া হয়। হাসান আজিজুল হকের হাতে সম্মাননা হিসেবে ক্রেস্ট, ১০ হাজার টাকা, একটি চাদর, বাংলার ঐতিহ্য আউস ধানের চাল, শিং মাছ, কই মাছ, সানকিভর্তি খই-মুড়ি, হাগরা আলু তুলে দেন উৎসবের প্রধান সমন্বয়কারী কাজী সাঈদ হোসেন। মানপত্র পাঠ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী ভূমিকা আজাদ।
সবটাই সাজানো হয়েছে বাংলার লোক ঐতিহ্যের সম্ভারে। অতিথিদের পরিবেশন করা হয় মোয়া, মুড়কি, তিলের নাড়ু, তিলের খাজা, গুড়ের গজা, খুরমা, বাদাম, কদমা, পেয়ারা, তরমুজসহ ১৪ রকমের খাবারদাবার।
বিকেলে পুঠিয়া উপজেলার শাহবাজপুরের লাঠিখেলা দলের খেলার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুরু হয়। সন্ধ্যায় মঞ্চের পূর্ব পাশের অস্থায়ী বেদিতে অতিথিরা প্রদীপ প্রজ্বালন করে মঞ্চে ওঠেন। তখন মঞ্চের পেছনের রাজবাড়ি ও সামনের দোলমন্দিরের আলোকসজ্জায় চারদিক আলোকিত হয়ে ওঠে। একই সঙ্গে মাঠের চারদিকে জ্বলে ওঠে শতাধিক ফানুস বাতি।