দেশের ২৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছেলেমেয়েরা এসেছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ক্যাম্পাসে, বুয়েট রোবো কার্নিভ্যালে অংশ নিতে। ১৭ ও ১৮ জানুয়ারি বুয়েট রোবটিকস সোসাইটির তৃতীয়বারে মতো আয়োজন করল এ উৎসব।
পাথফাইন্ডার, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অটোমেশন, সকার বট চ্যালেঞ্জ, কগনিশন: আইডিয়া কম্পিটিশন ও প্রকল্প উপস্থাপন—পাঁচটি ভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। রোবটিকস ক্লাবের সভাপতি, তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সুস্মিত হোসেন বলছিলেন, ‘রোবটিকস ও অটোমেশনের ব্যবহারিক দিকগুলো ছিল আমাদের ভাবনায়। কীভাবে এ প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন কাজ আরও সহজভাবে করা যায়, সেটিই উঠে এসেছে উৎসবে।’ পাথফাইন্ডার ও সকার বট চ্যালেঞ্জে অংশ নিয়েছেন কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও।
প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার
এক লাইনে, একটি দেয়াল অনুসরণ করে এগিয়ে নিতে হবে রোবটকে। এই হলো পাথফাইন্ডার প্রতিযোগিতার নিয়ম। ৩৩টি দলের মধ্যে প্রথম হয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দল ‘সাস্ট ক্র্যাকার নাট’। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান লাভ করে যথাক্রমে মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির দল ‘ওমেগা’ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ডিউ জিগজ্যাগ’। কারখানার কাজে কীভাবে রোবট ব্যবহার করা যায়, সেটি ছিল ইন্ডাস্ট্রিয়াল অটোমেশন প্রতিযোগিতার বিষয়।
কগনিশন: আইডিয়া কম্পিটিশন প্রতিযোগিতায় উঠে আসে দারুণ কিছু উদ্ভাবনী ভাবনা। ইলেকট্রনিক বর্জ্যনিষ্কাশন, দেশের কৃষিক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যাসহ শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করার জন্য প্রযুক্তির সাহায্য কীভাবে নেওয়া যায়—শিক্ষার্থীরা এসব বিষয়ে তাঁদের ভাবনা তুলে ধরেছেন ছয় মিনিটের প্রেজেন্টেশনে। প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া ২১টি দলের মধ্যে বিজয়ী হয় আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দল ‘কিংপিন’। প্রথম ও দ্বিতীয় রানারআপ হয় বুয়েটের দল ‘ইরিডিসেন্ট’ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের দল ‘রেভল্যুশন’। ডিজিটাল শ্রুতিলেখক, ডিজিটাল হুইলচেয়ারের মতো বিভিন্ন প্রকল্প উপস্থাপনের প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দল ‘রোবোগ্যাং’। দ্বিতীয় হয় অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং যুগ্মভাবে তৃতীয় হয় আর্মি ইউনিভার্সিটি ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির দল ‘ল্যাবএআর’ ও ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির দল ‘ফায়ারফ্লাই’।
উৎসবের সবচেয়ে উপভোগ্য অংশ ছিল সকারবোট। সহজ করে যাকে বলা যায় রোবটদের ফুটবল। এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় ৭০টি দল। বিজয়ী হয় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির দল ‘ডিআইইউ গ্র্যাভিটন’, প্রথম ও দ্বিতীয় রানারআপ হয় মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির ‘আর্ডিয়েন্ট সেন্সর’ ও ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ‘স্পিডি ফাইটার’।
সফল আয়োজনের আনন্দ
এত বড় উৎসব আয়োজনের পুরো কৃতিত্বই বুয়েট রোবটিকস সোসাইটির। অনেক পরিশ্রম শেষে সফল আয়োজনের পর হাসি ফুটেছিল আয়োজকদের মুখে। ‘এই আয়োজনের মাধ্যমে আমরা তিন ধরনের মানুষকে কাছাকাছি নিয়ে এসেছি। এক. যাদের অসাধারণ কিছু ভাবনা আছে। দুই. যাদের আছে সেই ভাবনা বাস্তবায়নের দক্ষতা। তিন. যারা ইতিমধ্যে এই উদ্ভাবনী ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে কিছু করে দেখিয়েছে। একই ছাদের নিচে এসে সবাই অনেক কিছু শিখতে পেরেছে, এটাই ছিল প্রতিযোগিতার মূল লক্ষ্য।’ বলছিলেন বুয়েট রোবটিকস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কাজী মুতাসিম বিল্লাহ। আয়োজনে কৌশলগত সহায়তা প্রদান করেছে আইইইই রোবটিকস অ্যান্ড অটোমেশন সোসাইটি বাংলাদেশ চ্যাপ্টার এবং আইইইই বাংলাদেশ সেকশন। প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিল বিকন পাওয়ার সিস্টেমস লিমিটেড, সহায়তা করেছে সুপারসাইন কেবলস লিমিটেড ও ফাইন্ডার জিপিএস ট্র্যাকিং সিস্টেমস।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বুয়েট রোবটিকস ক্লাবের মডারেটর, তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগের অধ্যাপক শেখ আনোয়ারুল ফাত্তাহ। প্রধান অতিথি ছিলেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ। তিনি জানান, পুঁজির অভাবে যেন কোনো তরুণের উদ্ভাবনী ভাবনা বিফলে না যায়, সে লক্ষ্যে স্টার্ট আপ বাংলাদেশ নামে একটি উদ্যোগ নেওয়া হবে শিগগিরই।