বাংলা | প্রশ্নোত্তর

মাটির নিচে যে শহর

প্রশ্ন: উয়ারী-বটেশ্বর এলাকাটি বাংলাদেশের কোন অঞ্চলে অবস্থিত? এই এলাকার প্রত্নতাত্ত্বিক অঞ্চলে পরিণত হওয়ার পেছনে কী কারণ, তা লেখো।

উত্তর: উয়ারী-বটেশ্বর এলাকাটি বাংলাদেশের নরসিংদী জেলার বেলাব ও শিবপুর উপজেলায় অবস্থিত।

ভূমিকম্প, বন্যা, প্লাবন ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে নদীপাড়ের জমি, ঘরবাড়ি, গ্রাম আর রাস্তাঘাট প্রতিনিয়ত ভাঙছে। আবার অন্যদিকে বিস্তীর্ণ চর পড়ছে। শত শত বছর আগে থেকেই এভাবে চলে আসা ভাঙা-গড়ায় মাটিচাপা পড়ে যায় জনপদ। উয়ারী-বটেশ্বর তেমনিভাবে মাটির নিচে পড়ে থাকা একটি জনপদ, যেখানে পাওয়া গেছে বেশ কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। নানা রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণেই এ এলাকাটি প্রত্নতাত্ত্বিক একটি অঞ্চলে পরিণত হয়েছে।

প্রশ্ন: ব্রহ্মপুত্র নদ আগে কোথা দিয়ে প্রবাহিত হতো, আর এখন কোথায়?

উত্তর: ব্রহ্মপুত্র নদ আগে প্রাচীন সোনারগাঁ নগরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হতো। এখন নরসিংদী ও ভৈরবের মাঝখান দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

প্রশ্ন: কোন কোন নিদর্শন থেকে উয়ারী-বটেশ্বরের সময়কাল জানা যায়?

উত্তর: যেসব নিদর্শন থেকে উয়ারী-বটেশ্বরের সময়কাল জানা যায় তা হলো—

ক. ১৯৩৩ সালে উয়ারী গ্রামে শ্রমিকেরা মাটি খনন করার সময় একটা পাত্রে কিছু মুদ্রা পান। স্কুলশিক্ষক মোহাম্মদ হানিফ বঙ্গদেশের এবং ভারতের প্রাচীনতম রৌপ্যমুদ্রা চিহ্নিত করেন।

খ. ১৯৫৬ সালে উয়ারী গ্রামের মাটি খনন করার সময় ছাপাঙ্কিত রৌপ্যমুদ্রার ভান্ডার পাওয়া যায়, যা অনেক কাল আগের বলে ধারণা করা হয়।

গ. জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সুফি মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে উয়ারী-বটেশ্বরে মাটি খননের সময় আড়াই হাজার বছর আগের প্রাচীন দুর্গ শহরের পোড়ামাটির ফলক, মূল্যবান পাথর, কাচের পুতি ও মুদ্রাভান্ডার পান।

ঘ. ২০০০ সালে প্রাপ্ত কিছু নিদর্শন গবেষণা করে প্রত্নতত্ত্ববিদেরা নিশ্চিত হন যে উয়ারী–বটেশ্বরের সময়কাল আজ থেকে প্রায় ২,৪৬৩ বছর আগের।

প্রশ্ন: উয়ারী-বটেশ্বর এলাকাটি সম্পর্কে ঐতিহাসিকগণ যা ধারণা করেছেন তা বর্ণনা করো।

উত্তর: উয়ারী-বটেশ্বর এলাকাটি সম্পর্কে ঐতিহাসিকগণের ধারণা থেকে আমরা অনেক তথ্য জানতে পারি। ঐতিহাসিকেরা মনে করেন, ব্রহ্মপুত্র নদ হয়ে বঙ্গোপসাগরের মধ্য দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য চলত। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে সুদূর রোমান সাম্রাজ্য পর্যন্ত ‘উয়ারী-বটেশ্বর’ রাজ্যের যোগাযোগ ছিল। উয়ারী-বটেশ্বরের আশপাশে প্রায় পঞ্চাশটি পুরোনো জায়গা পাওয়া গেছে। আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের দুর্গ-প্রাচীর, ইটের স্থাপত্য, মুদ্রা, গয়না, ধাতব বস্তু, অস্ত্র থেকে শুরু করে জীবনধারণের অনেক প্রত্নবস্তু পাওয়া গেছে। আর তা থেকে সহজেই বোঝা যায়, এখানকার অধিবাসীরা যথেষ্ঠ সভ্য ছিলেন। এই স্থানের বসতি এলাকাটি সম্ভবত রাজ্যের রাজধানী ছিল।