কিন্ডারগার্টেন খুলে দেওয়ার দাবি শিক্ষকদের
বাংলাদেশের প্রায় সব কিন্ডারগার্টেন স্কুল-কলেজ ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান নিজস্ব অর্থায়নে ভাড়া বাড়িতে পরিচালিত হয়। দেশে এ রকম প্রতিষ্ঠান আছে ৬৫ হাজারের মতো। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক–কর্মচারী আছেন প্রায় ১২ লাখ। এ প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত টিউশন ফি দ্বারা পরিচালিত হয়। মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এরপর থেকে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আয়ের উৎসও বন্ধ। শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনও দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে দু–এক মাসের মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগ প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে।
করোনা সংকটে কিন্ডারগার্টেন স্কুল-কলেজ ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে মানববন্ধনে এসব কথা বলেন শিক্ষকেরা। আজ সোমবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয় কিন্ডারগার্টেন স্কুল-কলেজ ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ঐক্য পরিষদ এবং বাংলাদেশ কিন্ডাগার্টেন স্কুল-কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের যৌথ উদ্যোগে আর্থিক প্রণোদনা, বার্ষিক মূল্যায়ন পরীক্ষা নেওয়া দাবিতে এ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকেরা।
আয়োজকদের দাবি, বাংলাদেশের প্রায় সব কিন্ডারগার্টেন স্কুল-কলেজ ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান নিজস্ব অর্থায়নে ভাড়া বাড়িতে পরিচালিত হয়। সারা বাংলাদেশে এ রকম প্রতিষ্ঠান আছে ৬৫ হাজারের মতো। এতে প্রায় ১২ লাখ শিক্ষক কর্মচারী নিয়োজিত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সম্পূর্ণভাবে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত টিউশন ফি দ্বারা পরিচালিত হয়। করোনাভাইরাসের কারণে গত ১৬ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে প্রায় সব প্রতিষ্ঠান কার্যত অচল হয়ে পড়ে। আয়ের উৎসও বন্ধ হয়ে যায়। যার ফলে আজ পর্যন্ত আট মাসের বাড়িভাড়া দেওয়াও সম্ভব হয়নি। এমনকি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনও দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বাড়িওয়ালারা ভাড়ার জন্য প্রতিনিয়ত চাপ দিচ্ছেন। এই অবস্থা চলতে থাকলে আগামী দ–এক মাসের মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগ প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে এবং লাখো শিক্ষক, কর্মচারী ও পরিচালক বেকার হয়ে যাবেন। ইতিমধ্যে অনেক স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে।
মানববন্ধনে শিক্ষকদের পক্ষে জাতীয় কিন্ডারগার্টেন স্কুল-কলেজ ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ঐক্য পরিষদ সভাপতি আহসান সিদ্দিকী প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করে তিন দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবি গুলো হলো বৈশ্বিক মহামারি করোনা পরিস্থিতির দুর্যোগকালে কিন্ডারগার্টেন স্কুল-কলেজ ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালকদের উদ্যোক্তা ঘোষণার মাধ্যমে আর্থিক প্রণোদনা/সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা, ২০২১ সালের ভর্তির সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা প্রদান এবং বার্ষিক মূল্যায়ন পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ দেওয়া।
বাংলাদেশ কিন্ডাগার্টেন স্কুল-কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষকেরা জাতির বিবেক। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা প্রায় দুই কোটি শিশুকে একাডেমিক শিক্ষা ও এক কোটি শিশুকে সাংস্কৃতিক শিক্ষাসেবা দান করে আসছেন। মহামারি করোনার প্রভাবে এই সেক্টরের সঙ্গে জড়িত সব শিক্ষক, কর্মচারী ও পরিচালক আজ অসহায় ও মানবেতর জীবন যাপন করছেন। আমরা কোথাও ত্রাণের জন্য হাত পাততে পারছি না। আবার আমাদের এসব প্রতিষ্ঠানে ব্যাংকগুলোও ঋণ প্রদান করে না। এমতাবস্থায় ভরসার সর্বশেষ কেন্দ্রস্থল প্রধানমন্ত্রী যদি আমাদের প্রতি সুনজর না দেন, তাহলে আমরা সর্বস্বান্ত ও নিঃস্ব হয়ে না খেয়ে ধুকে ধুকে মরে যাব।’
শিক্ষকনেতা মান্নান মনিরের সঞ্চালনায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, পরিচালক, সংগঠক ও সংস্কৃতিকর্মী মানববন্ধনে বক্তব্য দেন। পরে সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে বর্তমানে শিক্ষকদের পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়।