আজকের পর্বে আমরা জানব ব্যাবিলনীয়, গ্রিক ও রোমান পদ্ধতি সম্পর্কে। ব্যাবিলনীয়দের নিয়েই তবে আজকের আলোচনা শুরু করা যাক! তোমাদের সবার আগে বলে দিই যে ব্যাবিলনীয়দের সঙ্গে ৬০–এর একটা চুক্তি ছিল। তারা ৬০ সংখ্যাটা খুব ভালোবাসত। অনেকের মনেই প্রশ্ন এসেছে, ৬০–ই কেন? এর কোনো যৌক্তিক উত্তর আমার কাছে নেই। কিন্তু তুমি একটু ভেবে দেখলেই বুঝতে পারবে যে ৬০–এর মোট উৎপাদক আছে ১২টি:
১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ১০, ১২, ১৫, ২০, ৩০, ৬০
ব্যাবিলনীয়রা দেখল যে দৈনন্দিন জীবনে যেসব সংখ্যার সঙ্গে তাদের ওঠাবসা করতে হয়, সেগুলো সবই আছে এই জাদুকরি ৬০–এর মধ্যে! তাই তারা একেই কাজে লাগিয়ে আবিষ্কার করে ফেলল অনেক কিছু। যেমন ধরো, বৃত্তকে ৩৬০° কোণে বিভক্তকরণ এবং ৬০ মিনিটে ১ ঘণ্টা ও ১২ (৬০–এর নিকটাত্মীয়) ঘণ্টায় ১ দিনের প্রচলন কিন্তু ব্যাবিলনীয়রাই করেছিল অর্থাৎ ব্যাবিলনীয় ১ মিনিট ছিল আমাদের এখনকার ২ মিনিটের সমান।
ব্যাবিলনীয়দের অর্জিত জ্ঞানের বেশির ভাগই কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেলেও মাটির পাত্রে আঁকা ও পাথরের ফলকে খোদাই করা লেখা থেকে জানা যায়, ব্যাবিলনীয়রা আরেকটু বুদ্ধি খাটালে হয়তো পিথাগোরাসের উপপাদ্যও আবিষ্কার করতে পারত! এ ছাড়া দ্বিপদী উপপাদ্য নিয়েও যথেষ্ট মাথা ঘামিয়েছে তারা।
তবে সংখ্যা নিয়ে তাদের কাজের সঙ্গে মিসরীয়দের অনেক মিল পাওয়া যায়। মিসরীয়রা তো ১০–এর সূচকীয় গুণিতক দিয়ে কাজ করেছিল আর ব্যাবিলনীয়রা সেই একই কাজ করেছে তাদের আত্মীয় ৬০–কে দিয়ে। আবার মিসরীয়দের মতো এরাও শূন্যের ব্যবহার জানত না। অর্থাৎ এদের সংখ্যাপদ্ধতি ছিল ৬০–এর গুণিতক দিয়ে, যেটাকে ষাটমূলক পদ্ধতিও বলা হয়ে থাকে। চলো ব্যাবিলনীয় সংখ্যাপদ্ধতি দেখে নিই:
এখানে একটা ব্যাপার মনে রাখতে হবে, আমাদের মতো চমৎকার গুণ–ভাগ করার পদ্ধতি সে সময় জানা ছিল না। বর্তমানে আমরা যে দশমিক অঙ্কপাতন পদ্ধতিতে যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ করি, সেটা আবিষ্কৃত হয়েছে ব্যাবিলনীয়দের আরও ৩,০০০–৩,৫০০ বছর পরে ভারতবর্ষে।
এ ছাড়া ব্যাবিলনীয়রা এক সৌর বৎসরের দৈর্ঘ্য হিসাব করেছিল ৩৬০ দিন (সেই ৬০–এর নিকটাত্মীয়), যেটার প্রকৃত দৈর্ঘ্য ৩৬৫ দিনের বেশ কাছাকাছি। তাদের ১২ ঘণ্টায় ১ দিন, ৬০ মিনিটে ঘণ্টার কথা তো আগেই জেনেছ তোমরা। বলতে গেলে তাদের সংখ্যায় ৬০–এর ছড়াছড়ি।
এবার এল আবিষ্কারের দুনিয়ার মধ্যমণি গ্রিকরা। রোমানরাও কাজ করেছে এটা নিয়ে। মজার ব্যাপার হলো, গ্রিক ও রোমানরাও কিন্তু শূন্যের ব্যবহার জানত না। এর একটি বড় কারণ গ্রিক ও রোমানরা অনেক ব্যাপারেই মিসরীয় কিংবা ব্যাবিলনীয়দের দ্বারা প্রভাবিত ছিল।
১০০, ২০০ প্রভৃতি সংখ্যাকে এখনকার মতো এক বা দুইয়ের পিঠে দুই শূন্য—এভাবে না লিখে তারা বরং ব্যাবিলন ও মিসরের মতো আলাদা প্রতীক ব্যবহার করত। তবে গ্রিকরা সংখ্যার জন্য কোনো আলাদা প্রতীক উদ্ভাবন করেনি। বরং গ্রিক বর্ণমালার অক্ষরের সাহায্যে তারা সংখ্যা প্রকাশ করতে শুরু করল। এতে গণনাও হলো, আবার মনোভাব প্রকাশ করাও হলো। দেখেছ গ্রিকদের বুদ্ধি? নিচের চার্টে গ্রিক বর্ণমালার মান দেখে নাও!
ওপরের সারণি থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি λ দ্বারা বোঝানো হতো ৩০; কারণ λ এর অবস্থান তৃতীয় সারিতে এবং Tens (কলামে) এবং β দ্বারা বোঝানো হতো ২। কারণ, দ্বিতীয় সারি আর Units কলামে অবস্থান। অর্থাৎ গ্রিক পদ্ধতিতে ৩২ লিখতে চাইলে তোমাকে লিখতে হবে λ β! কিন্তু সমস্যা হলো, সারণি থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি ১ থেকে ৯৯৯ পর্যন্ত সংখ্যা লিখতেই গ্রিকরা ২৭টা আলাদা আলাদা অক্ষর ব্যবহার করত। ১০০০ থেকে শুরু করে আরো বড় সংখ্যা লেখার জন্য গ্রিকরা নানারকম পদ্ধতি ব্যবহার করতো।
কখনো একের বেশি প্রতীক একসাথে মিলে নতুন প্রতীক তৈরি করে বড় সংখ্যা বোঝানো হতো। আবার কখনো আগের ২৭ টি প্রতীকের উপরে নিচে ডানে বায়ে নানারকম চিহ্ন দিয়ে বড় সংখ্যাগুলি প্রকাশ করা হতো। নিচের লিংকে গিয়ে দশমিক সংখ্যাপদ্ধতিতে কোন সংখ্যাকে গ্রিকরা কীভাবে লিখতো সেটা দেখে নিতে পারো: http://www.russellcottrell.com/greek/utilities/greeknumberconverter.htm
এদিকে রোমানদের পদ্ধতিটি ছিল অনেকটা মিসরীয়দের মতো। যেমন তুমি রোমান পদ্ধতিতে ২০২২ লিখতে চাইলে তাকে দুইটা এক হাজার (M), দুইটা দশ (M) এবং দুইটা এক (I) পাশাপাশি লিখতে হতো। তার মানে রোমান পদ্ধতিতে আমাদের বর্তমান সালকে “MMXXII” লেখা হবে। রোমান পদ্ধতির প্রতীকগুলো হলো—
এই পদ্ধতিতে কোনো কিছুর বাঁয়ে আরেকটা কিছু লেখা মানে বিয়োগ করা আর ডানে লেখা মানে যোগ করা। যেমন X এর বামে I দেওয়া হলে হবে IX অর্থাৎ (X–I)=(১০–১)=9; আবার XI দিয়ে বুঝায় ১১!
এর চেয়ে কিন্তু আমরা আরেকটা মজার ব্যাপার দেখতে পারি! বাঁয়ে থাকলে বিয়োগ আর ডানে থাকলে যোগ—এভাবেই কিন্তু রোমান সংখ্যা থেকে তুমি তার দশমিক মান বের করতে পারো!