পরাবৃত্তে প্রতিফলন

গণিত ইশকুলে বছরজুড়ে গণিত শিখি

কোলাজ: পড়াশোনা গ্রাফিক্সছবি: জিওজেব্রা থেকে

পরাবৃত্ত: ধরা যাক, সমতলে একটি নির্দিষ্ট বিন্দু ও একটি নির্দিষ্ট রেখা দেয়া আছে। সমতলে যে সব বিন্দু থেকে এই নির্দিষ্ট বিন্দুর দূরত্ব ও নির্দিষ্ট রেখাটির লম্ব দূরত্ব সমান, সে সব বিন্দু নিয়ে  পরাবৃত্ত তৈরি হয়। এই নির্দিষ্ট বিন্দুটিকে পরাবৃত্তের উপকেন্দ্র(focus) বলে, নির্দিষ্ট রেখাটিকে বলা হয় নিয়ামক রেখা(directrix)।

ধরা যাক, একটা পরাবৃত্ত রয়েছে, সেটিকে দরকারমত ঘুরিয়ে(rotate) ও সরিয়ে(translate) এমন অবস্থায় আনা হল যাতে সেটির শীর্ষবিন্দু মূলবিন্দুতে অবস্থিত হয়, আর সেটির অক্ষ y-অক্ষ বরাবর থাকে। তাহলে পরাবৃত্তটির সমীকরণ আকারে লেখা যায়। এ পরাবৃত্তের উপকেন্দ্র হবে F(0, a), আর নিয়ামক রেখাটি হবে y = -a।

ধরা যাক, পরাবৃত্তের উপকেন্দ্র থেকে নির্গত কোনও আলোকরশ্মি পরাবৃত্তের ভেতরের পৃষ্ঠে P(x1, x12/4a) বিন্দুতে আপতিত হয়। এখন আমরা জানতে চাই, পরাবৃত্তটির ভেতরের পৃষ্ঠ থেকে প্রতিফলিত আলোকরশ্মিটি কোন দিকে যাবে।

আমরা P বিন্দুর খুব নিকটে একটি সমতল দর্পণ চিন্তা করি; এই দর্পণের ওপর প্রতিফলিত FP রশ্মির জন্য আপতন কোণ ও প্রতিফলন কোণ অবশ্যই সমান হতে হবে।

এই সমতল দর্পণটির প্রতিনিধি হিসেবে আমরা P বিন্দুতে পরাবৃত্তটির ওপর স্পর্শক আঁকবো। এই স্পর্শকের ঢাল হবে  x1/2a। প্রমাণটি এভাবে করা যেতে পারে:

এই পরাবৃত্তটিকে একটি সরলরেখা দিয়ে ছেদ করা যাক। সরলরেখাটি পরাবৃত্তটিকে ও বিন্দুতে ছেদ করল। যদি

সরলরেখার সমীকরণ y=mx+c হয়ে থাকে, তাহলে ছেদবিন্দুগুলোর জন্যে

x2=4a(mx+c)

⇒x2-4amx-4ac=0

⇒x=(4am±√(16a2 m2+16ac))/2=2am±2√(a2 m2+ac)

Q1 ও Q2 বিন্দু দুটি যদি খুবই কাছাকাছি হতে হতে একে অপরের ওপর মিলে যায়, তখন এই সরলরেখাটি পরাবৃত্তটিকে একটিমাত্র বিন্দু Pতে স্পর্শ করে। এ অবস্থায় সরলরেখাটি পরাবৃত্তের স্পর্শক হয়ে যায়।

এক্ষেত্রে a2m2+ac=0

⇒c=-am2

সুতরাং, y=mx-am2 আকারের যে কোনও সরলরেখাই এই পরাবৃত্তের ওপর স্পর্শক হবে, এবং এরা পরাবৃত্তটিকে যে বিন্দুতে স্পর্শ করবে সে বিন্দুতে x = 2am, y = mx – am2 = am2 = a (x/2a)2 = x2/4a  (x1, x12/4a) বিন্দুতে আঁকা স্পর্শকের জন্য ঢাল হবে m = x1/2a­­­­ । (প্রমাণিত)

আমরা P বিন্দুটি থেকে নিয়ামক রেখার ওপর লম্ব আঁকবো, সেটি নিয়ামক রেখাকে  বিন্দুতে ছেদ করে। পরাবৃত্তের শর্ত হিসেবে FP = pp'

FP'রেখাংশের ঢাল {a - (-a)}/{0-x1} = -2a/x1

এই রেখাংশের ঢাল ও স্পর্শকের ঢালের গুণফল -1, ফলে আমরা বলতে পারি,  স্পর্শকটি FP' রেখাংশের ওপর লম্ব। এখন আমরা ΔFPG,ΔP'PG এর মধ্যে তুলনা করে পাই, FP = pp;∠FGP=∠P'GP=π/2;PG=PG'

ফলে, ত্রিভুজ দুইটি সর্বসম, এবং ∠FPG=∠P'PG

এবার আমরা P বিন্দুতে পরাবৃত্তের ওপর লম্ব PN আঁকবো। এবার আমরা দেখতে পাবো, FP রশ্মির জন্য আপতন কোণ,

∠FPN=π/2-∠FPG। p'pকে পেছনের দিকে I পর্যন্ত বাড়াই। আমরা দেখতে পাবো, ∠IPG'=∠P'PG=∠FPG । তাহলে, নিশ্চিতভাবেই প্রতিফলন কোণ ∠NPI হবে, কেননা ∠NPI=π/2-∠IPG'=π/2-∠FPG=∠FPN

আমরা আরও লক্ষ্য করি, PI ∥ FN

তাহলে আমরা বলতে পারি, পরাবৃত্তাকার প্রতিফলকের উপকেন্দ্র থেকে নির্গত সকল রশ্মি প্রতিফলিত হয়ে পরাবৃত্তের অক্ষের সমান্তরাল রেখা বরাবর বেরিয়ে যাবে। একই ভাবে আমরা বলতে পারি, অসীম থেকে আগত সমান্তরাল রশ্মি পরাবৃত্তাকার প্রতিফলকের পৃষ্ঠে প্রতিফলিত হয়ে প্রতিফলকের উপকেন্দ্রে মিলিত হবে

এই নীতির প্রয়োগ ঘটিয়ে শক্তিশালী টর্চলাইটের, সার্চলাইটের বাতির চারদিকে বসানো প্রতিফলকটি তৈরি করা হয়, যেন আলো সমান্তরাল রেখা বরাবর বহুদূর যায়। এ নীতিটি ব্যবহার করে ডিশ অ্যান্টেনা তৈরি করা হয়। স্যাটেলাইটে যোগাযোগ, দূরপাল্লার রেডিও যোগাযোগ, গভীর মহাশূন্য পর্যবেক্ষণে ডিশ অ্যান্টেনা ব্যবহার করা হয়। আশপাশের কোলাহল এড়িয়ে নির্দিষ্ট দিক থেকে আসতে থাকা শব্দতরঙ্গ ধারণ করার জন্য যে সব ডিরেকশনাল মাইক্রোফোন ব্যবহার করা হয়, সেটিও এ কার্যনীতি অনুসারে চলে। বড় বড় পরাবৃত্তাকার প্রতিফলককে সোলার কুকার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। আধুনিক অলিম্পিক গেমসের মশালটি জ্বালানো হয় এরকম একটি প্রতিফলক ব্যবহার করে। কথিত রয়েছে, সিরাকুজের আর্কিমিডিস পরাবৃত্তাকার প্রতিফলক ব্যবহার করে রোমান যুদ্ধজাহাজগুলোতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিলেন।