গণিত ইশকুলে আমাদের আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো আমাদের পাঠকদের গণিতের ভীতি দূর করে এটাকে মজা করা পড়তে বা বুঝতে শেখানো। কেন ১ এবং ৩ যোগ করলে ৪ হয়, ৫ কিংবা ৩ হলে কী সমস্যা হতো, এগুলো আমরা বুঝতে শিখি আমাদের গণিত ইশকুল পাঠশালায়। তবে বুঝতে গিয়ে যে সব সমস্যা আমাদের হাতে সমাধান করে হিউম্যান ক্যালকুলেটর হতে হবে, বিষয়টি তেমনও নয়।
ওয়েলসীয় ঔপন্যাসিক এবং ছোটগল্পের লেখক রুয়াল দালকে কোট করে বলতে হয়, ‘I've always said to myself that if a little pocket calculator can do it why shouldn't I?’ গণিতের মধ্যে অনেক কিছু জানার আছে, অনেক কিছু বোঝার আছে, সেগুলোতে আমাদের ফোকাস করা উচিত সব সময়।
আমাদের যেমন গণিতে পটু হতে হবে, একই সঙ্গে স্মার্টও হতে হবে। আমাদের দেশে শিক্ষাব্যবস্থায় সব থেকে বড় টার্নিং পয়েন্ট হলো ভর্তি পরীক্ষার সিজনটা। এখানে এসে প্রকৃত মেধাবী মানুষ যেমন নিজেদের জানান দেয়, তেমনি নানা কারণে অনেক অনেক মেধাবী ছেলেমেয়ে হারিয়ে যায়।
সেসব কথা থাকুক। তো এই সময়ে বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যালকুলেটরকে একপ্রকার হারাম ঘোষণা করে, অথচ সেই ছেলেটা বা মেয়েটা কিছুদিন পর যখন কোনো গবেষণা করতে যাবে, কিংবা ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়েও তার জন্য এমন আরেকটা ডিজিটাল পার্টনারের জুড়ি মেলা ভার। এই পর্যন্ত পড়ে ফেললে বুঝতেই পারছ, আমাদের পরবর্তী কয়েকটা সপ্তাহ কিসের মধ্য দিয়ে যেতে চলেছে।
আমার লেখা আগেও যারা পড়েছ, তোমরা খেয়াল করবে, আমার লেখাগুলো অনেক বড় হয়, দীর্ঘদিন চলতেই থাকে। এর কারণ, আমি অনেক বিস্তারিত আলোচনা করতে পছন্দ করি সব সময়। আমরা এবারে আমাদের মূল আলোচনায় যেতে পারি তবে।
ক্যালকুলেটরের কোম্পানি নিয়ে কথা বললেই শুরুতে যে নামটা আসে, তা হলো ক্যাসিও। জাপানিজ এই ব্র্যান্ডের সব ডিজিটাল পণ্যই সাধারণত গ্রাহকের কাছে সব থেকে বেশি গ্রহণযোগ্যতা পেয়ে আসছে শুরু থেকেই।
আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের কাছে এই মুহূর্তে সব থেকে বিখ্যাত ক্যালকুলেটর মডেল Casio fx-991EX CLASSWIZ, তবে এটার পরবর্তী অপগ্রেটেড মডেল Casio fx-991CW CLASSWIZ ভালোই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে দুটিই কমবেশি ব্যবহার করি। এ ছাড়া Casio fx-100MS কিংবা Casio fx-991EX Plus ও ব্যবহার করেছি। এগুলো সবই আমার কাছে এখনো রাখা আছে। তবে আমরা আমাদের আলোচনা আরও আগে থেকে শুরু করব।
ক্যালকুলেটরের যাত্রা আজ থেকে কয়েক শ বছর আগে খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০-২৫০০-এ প্রাচীন সুমেরীয় ও মিসরীয় অঞ্চলে। যখন বাংলাদেশে কোনো নতুন এবং আধুনিক ফিচারসমৃদ্ধ কোনো ক্যালকুলেটর আসে, আমরা এর আগের সব মডেলকে মজা করে অ্যাবাকাস (Abacus) বলে কটাক্ষ করি। তোমাদের করতে বলছি না মোটেও, একটা উদাহরণের স্বার্থে বলা। তো এই কপালপোড়া ট্যাগটা আসে মানব আবিষ্কৃত প্রথম গণনাযন্ত্র অ্যাবাকাস (Abacus) থেকে; অর্থাৎ আজকের আধুনিক ক্যালকুলেটরের শুরুটা অ্যাবাকাস নামের একটা গণনাকারী যন্ত্র থেকে।
এ ধরনের খেলনা দিয়ে এখন বাচ্চারা খেলাধুলা করে, তবে তুমি জানলে এই খেলনা থেকেই তোমার হাতের ডিজিটাল এডুমেট ক্যালকুলেটরের জন্ম। এসবের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করতে বসলেও অনেক অনেক আলোচনা চলে আসবে। প্রতিবারের মতো এবার আমি রেফারেন্স অংশে কিছু লিঙ্ক রেখে দেব। তুমি সেগুলো থেকে আরও বিস্তারিত জানতে পারবে।
গ্রিক পুরাণ অনুসারে, গণিতের দেবী অ্যারেথম্যাটিকা তাঁর দুই শিষ্য—একজন অ্যালগরিস্ট এবং একজন অ্যাবাসিস্টকে নির্দেশ দিচ্ছেন; অর্থাৎ আমরা বীজগণিতে যেই x কিংবা অজ্ঞাত চলককে নিয়ে কাজ করি, সেটার একটা সরল রূপ নির্ণয় করে দেবেন অ্যালগরিস্ট, পরে অ্যাবাসিস্ট সেই সরল সমীকরণ থেকে অজ্ঞাত চলকের মান নির্ণয় করে দেবেন।
আমরা এখন অ্যাবাকাস যন্ত্রের কার্যক্রম সম্পর্কে জানব। এর দুটি অংশ, একটি ১ থেকে ৯ পর্যন্ত রিপ্রেজেন্ট করে; অন্যটি শুধু দশক স্থানগুলোকে বোঝায়। যোগের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া খুব সহজ মনে হলেও অন্য ধরনের হিসাব-নিকাশের প্রক্রিয়াটা বেশ জটিল। তাই আমরা যোগ করাই শিখি। তোমার কাজ হবে প্রত্যেক এক এককের জন্য ওপরের ঘরের একটি করে গুটি ওপরে তুলে দেওয়া, এভাবে ১, ২, ৩... ... ...শেষ করে যখন ১০ হবে, সব আবার নিচে নামিয়ে দিয়ে নিচের অংশে এক গুটি তুলে দেওয়া;
অর্থাৎ তুমি বোঝাতে চাচ্ছো, এক দশক শেষ হয়েছে। বুঝতেই পারছ, এভাবে যোগ করা সহজ, তবে অন্য প্রক্রিয়াগুলো কেমন হতে চলছে, আইডিয়া করে নিয়ো।
নোট: আমি একদম আদিকালের অ্যাবাকাস নিয়ে বলেছি, এটার অনেক আপগ্রেটেড ভার্সন আছে। আমরা এখন যেটা দেখি, সেটাতে প্রতি লাইনে ৯টি করে বল থাকে, একদম নিচের লাইন একক, পরবর্তী দশক, শতক এভাবে। যদি একদম নিচের লাইনের ৯টিই শেষ হয়ে যায়, তাহলে পরবর্তী সংখ্যা বোঝাতে পরবর্তী লাইনের একটি নিয়ে আগের লাইনকে আবার শূন্য করে দেওয়া হয়। এভাবেই দশক থেকে শতক, শতক থেকে সহস্র এগোতে থাকে। চায়নিজ অ্যাবাকাস (সুয়ানপ্যান) ডিজাইনে ভিন্নতা রয়েছে এবং পশ্চিমা সংস্করণে কিছুটা ভিন্নভাবে ব্যবহার করা হয়, তবে নীতি একই। এটার একটা টিউটোরিয়াল এই লিংকে গেলে দেখতে পাবে।