গণিত ইশকুলের বন্ধুরা, শুভেচ্ছা নিও। আমরা যারা নিয়মিত হরেক রকম গাণিতিক প্রবলেম সলভ করার চেষ্টা করি, তারা নিশ্চয়ই জানি যে বেশিরভাগই প্রবলেমই একেবারে রাতারাতি সলভ করে ফেলা সম্ভব হয়ে ওঠে না। ভালো প্রবলেম সলভাররা কিন্তু এহেন পরিস্থিতিতে একদমই দমে যায় না।গণিত অলিম্পিয়াড দলের কোচ ড. মাহবুব মজুমদার স্যারের ভাষায় বলা যায়, তারা প্রবলেমকে পাগল কুকুরের ন্যায় চারদিক থেকে আক্রমণ করে।
প্রবলেম সলভিং এর মূল ব্যাপার হচ্ছে প্রবলেম স্টেটমেন্টে প্রদত্ত তথ্য থেকে সমাধানের পথ খুঁজে বের করা। তুমি নিশ্চয়ই বিভিন্ন প্রবলেম সলভের চেষ্টা করার সময় খেয়াল করেছো, অনেক প্রবলেমের ক্ষেত্রেই মনে হয় এখানে পর্যাপ্ত তথ্য দেওয়া হয় নি, তোমাকে তখন সেই অল্প পরিমাণ তথ্য ব্যবহার করে সমাধান খুঁজতে গিয়ে গলদঘর্ম হতে হয়। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, কোনো কোনো প্রবলেমে আবার দেখা যায় অতিরিক্ত তথ্য দেয়া থাকে!
এই ব্যাপারটাও তৈরি করে এক বিরাট চ্যালেঞ্জ, কীভাবে কী করা যায় তা ভাবতে ভাবতে যেন মনে হয় এ এক অকূল পাথার.তবে দক্ষ প্রবলেম সলভাররা কিন্তু স্বাচ্ছন্দ্যের সাথেই উভয় ক্ষেত্রে সমাধান খুঁজে আনতে পারে, তারা চিন্তা করে প্রবলেম স্টেটমেন্টগুলোকে সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে। দৈনন্দিন জীবনে আমরা যেকোনো কিছু সাজানোর সময় স্বভাবতই একটা ধারাবাহিকতা বা ক্রম রক্ষার চেষ্টা করি। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, পরীক্ষায় প্রাপ্ত মার্কসের ক্রমে ক্লাস রোল নির্ধারণ। এভাবে বিচ্ছিন্ন তথ্যকে নির্দিষ্ট ক্রমানুসারে সাজাতে পারলে কাজটা তুলনামূলক বেশ সহজ হয়ে যায়।
এমন যেকোনো ক্রমে একটি সর্বোচ্চ ও একটি সর্বনিম্ন মান থাকে, তাই না? অনেক প্রবলেমে আমরা এই সর্বোচ্চ বা সর্বনিম্নের দিকে জোর দিলেই কিন্তু সমাধানটা সহজেই হয়ে যাওয়া সম্ভব। আর এই টেকনিকটাই প্রকৃতপক্ষে “এক্সট্রিম প্রিন্সিপল”। (এবার নিশ্চয়ই এই আর্টিকেলের নামটার পেছনের কারণ বুঝতে পারছো!)
কোনো প্রবলেমের উপাদানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় আর সবচেয়ে ছোট উপাদানের বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করে সামনে অগ্রসর হওয়াই এক্সট্রিম প্রিন্সিপলের মূলনীতি।
চলো, এবার একটি প্রবলেম দেখি।
ধরে নাও, একটি দাবাবোর্ডে অসীম সংখ্যক ঘর আছে। প্রত্যেকটি ঘরে একটি ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যা আছে। যদি প্রত্যেক ঘরের সংখ্যা তার পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণ দিকের ঠিক পার্শ্ববর্তী ঘরগুলোর সংখ্যার গড় মানের সমান হয়; তবে প্রমাণ করো যে, দাবাবোর্ডটির সকল ঘরে একই সংখ্যা আছে।
যে ঘরটিতে সবচেয়ে ছোট সংখ্যাটি আছে, তার দিকে আমরা নজর দিতে পারি। প্রশ্নমতে, এই ঘরের সংখ্যাটিও তার চারদিকের পার্শ্ববর্তী ঘর চারটির সংখ্যার মানের গড়ের সমান হবে। কিন্তু যেহেতু এটিই ঐ দাবাবোর্ডে থাকা সর্বনিম্ন সংখ্যা, তাই পার্শ্ববর্তী ঐ চার ঘরে থাকা সংখ্যাগুলো এই সংখ্যাটির চেয়ে বড় অথবা সমান হবে।
এখন এটা জানা কথা যে, কয়েকটি ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যার গড় কখনোই তাদের প্রত্যেকের চেয়ে ছোট হয় না (চাইলে এই উক্তিটি প্রমাণের চেষ্টা করতে পারো)। তার মানে সংখ্যাগুলো আলোচ্য সর্বনিম্ন সংখ্যার চেয়ে বড় হওয়া সম্ভব নয়। তাহলে নিশ্চয়ই ঐ সংখ্যা চারটি সর্বনিম্ন সংখ্যাটির সমান হবে!
আবার ঐ চারটি সংখ্যার প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই কিন্তু তাদের চারদিকের পার্শ্ববর্তী চারটি করে সংখ্যা সমান হবে ও এভাবে চলতে থাকবে। সুতরাং, দাবাবোর্ডটির প্রত্যেকটি ঘরে থাকা সংখ্যাই আসলে সমান।
দেখলে তো, কীভাবে সবচেয়ে ছোট কেসে ফোকাস করে সহজেই আমাদের কাজ হয়ে গেলো! এধরনের আইডিয়া কিন্তু এক্সট্রিম প্রিন্সিপল হতেই উৎসারিত।
বেশ মজাদার না? এবার নিচের প্রবলেমটা নিজে নিজে চেষ্টা করে দেখতে পারো।
ডিজনিল্যান্ড শহরে অনেক টাওয়ার আছে। শহরের যেকোনো দুটি টাওয়ারের মাঝে শুধু একটি পথ আছে এবং প্রতিটি পথ একমুখী। দেখাও যে, ডিজনিল্যান্ডে এমন একটি টাওয়ার আছেই, যেখান থেকে অন্য সব টাওয়ারে সরাসরি বা সর্বোচ্চ অন্য একটি টাওয়ার হয়ে যাওয়া যায়।
(কঠিন মনে হচ্ছে? এক্সট্রিম প্রিন্সিপল ব্যবহার করে ভাবার চেষ্টা করো, খুব সহজ হয়ে যাবে আশা করি!)
সকলের সেকেন্ড ডিফারেন্সিয়াল নেগেটিভ হোক।