ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে নতুন ভাবনা
করোনাকালে ফ্রিল্যান্সিং কাজের চাহিদা বেড়েছে। ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে বিশ্বের বড় বড় প্রতিষ্ঠান। স্টিভ জবস ২০০৩ সালে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘ব্যবসায় বড় কাজগুলো কখনো একজন ব্যক্তি একা করেন না। ওই কাজগুলো দলবদ্ধভাবে করা হয়।’ একাই এক শ ধারণা থেকে পৃথিবী সরে এসেছে গত শতাব্দীতেই। তাই তো পুরো বিশ্বে আউটসোর্সিং পেশাজীবীদের বাজার তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশও আউটসোর্সিংয়ে ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিশ্বে আউটসোর্সিং তালিকায় তৃতীয় স্থানে থাকা বাংলাদেশের প্রায় ছয় লাখের বেশি মানুষ আউটসোর্সিং কাজের সঙ্গে জড়িত।
নির্দিষ্ট কিছু পেশার মানুষ বা প্রযুক্তিতে দক্ষ ব্যক্তিরা এই আউটসোর্সিং কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও দিনে দিনে বাড়ছে এর গণ্ডি। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যক্তি পর্যন্ত সবাই এখন চটজলদি সমাধান খোঁজেন আউটসোর্সিংয়ে।
করোনা মহামারিতে গোটা বিশ্বের ছোট, বড়, মাঝারি—সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের খরচের খাতা ছোট করে নিয়ে এসেছে। বরাদ্দকৃত বাজেটের যথাযথ ব্যবহার করতে চাইছে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান। ফলে আউটসোর্সিং কাজের তালিকায় যুক্তে হচ্ছে নতুন নতুন কাজ। বিশেষ করে অ্যাকাউন্টিং টেকনিশিয়ান, এন্ট্রি লেভেল অ্যাকাউনট্যান্ট, অডিটরও আউটসোর্সিং কাজ করিয়ে নিচ্ছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। কাগজ–কলমের সঙ্গে হিসাব-নিকাশ আর নিরীক্ষার যোগাযোগটাও কমে যাচ্ছে। সফটওয়্যারনির্ভর হিসাব বিভাগের দিকে নজর এখন সবার।
প্রযুক্তিনির্ভর পেশাদার হিসাবরক্ষক তৈরিতে দেশেও এখন কাজ করছে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে এন্ট্রি লেভেল অ্যাকাউন্টিংবিষয়ক পেশাদার দক্ষতা অর্জন করে ফ্রিল্যান্সিং খাতে আসার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরীর ভাষ্য, ‘সবকিছুই এখন প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উঠছে। অ্যাকাউন্টিং বিষয়টিও এখন প্রযুক্তিরই অংশ। আমাদের দেশে অ্যাকাউন্টিং টুলস ব্যবহার করার মতো দক্ষ জনবলের অভাব আছে। এ পেশার একটা চাহিদা তৈরি হয়েছে। ইউরোপ, আমেরিকায় প্রযুক্তিনির্ভর অ্যাকাউন্টিং পেশা আগে থেকেই চালু আছে।’
ফোর্বসের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ফ্রিল্যান্স বিপ্লব ছড়িয়ে পড়ছে। বৈশ্বিক ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোয় নতুন নতুন কাজের চাহিদা তৈরি হতে দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া করোনাকালে আপওয়ার্ক, ফাইভার ও ফ্রিল্যান্সার ডটকমের আয় বেড়ে গেছে।
আপওয়ার্কের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হেইডেন ব্রাউন বলেন, ‘দূরবর্তী কাজ এবং আরও নমনীয় কাজের মডেলগুলোয় যে সাড়া পড়েছে, তা আমাদের পক্ষে কাজ করেছে। ৪৫ শতাংশ ব্যবস্থাপকেরা পূর্ণকালীন নিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছেন। ৭২ শতাংশ পেশাদার ফ্রিল্যান্সারের ব্যবহারের হার বেড়ে গেছে। এখন প্রতিষ্ঠানগুলো খরচ ব্যবস্থাপনা ও কর্মীদের কাজের নমনীয়তার বিষয়গুলোয় গুরুত্ব দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আপওয়ার্কের ১৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ঘটেছে।’