এ কোন রহস্যময় কণা!

কৃষ্ণগহ্বর থেকে উৎপন্ন হয় নিউট্রিনো
কৃষ্ণগহ্বর থেকে উৎপন্ন হয় নিউট্রিনো

কোনো জালে আটকায় না তেমনই এক রহস্যময় কণা। সব পদার্থ ভেদ করে চলে যায়। মানুষের শরীরের মধ্য দিয়েও লাখ লাখ রহস্যময় কণা চলে যাচ্ছে, কিন্তু আমরা টের পাচ্ছি না। এই কণার নাম নিউট্রিনো। কিন্তু কোথা থেকে আসছে তা?

আমাদের মিল্কিওয়ে ছায়াপথের কেন্দ্রে যে বিশাল ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর রয়েছে, সেখান থেকে উৎপন্ন হতে পারে রহস্যময় কণা নিউট্রিনো। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণাপ্রতিষ্ঠান নাসার গবেষকেরা সম্প্রতি এ তথ্য জানিয়েছেন।
নিউট্রিনো কণাকে রহস্যময় কণা বলা হয় এর বৈশিষ্ট্যের কারণেই। নিউট্রিনো নামের এই ক্ষুদ্র কণা হচ্ছে চার্জ নিরপেক্ষ এবং ইলেকট্রন ও প্রোটনের সঙ্গে অত্যন্ত দুর্বলভাবে যোগাযোগ করে। বৈদ্যুতিক চার্জবিহীন, দুর্বল সক্রিয় ক্ষুদ্র পারমাণবিক এই কণা পদার্থের মধ্য দিয়ে অবিকৃতভাবে চলাচল করতে পারে।
গবেষকেরা মনে করেন, পরমাণুর চেয়েও ক্ষুদ্রতর এই কণার উৎস-রহস্য সমাধান করা গেলে দূরবর্তী অঞ্চলে সংঘটিত বিভিন্ন মহাজাগতিক ঘটনার (যেমন: নক্ষত্রের বিস্ফোরণ ও কৃষ্ণগহ্বর) ব্যাপারে নতুন নতুন তথ্য জানা সম্ভব হবে।
আলো কিংবা অন্য বৈদ্যুতিক আধানযুক্ত কণার সঙ্গে নিউট্রিনোর পার্থক্য হচ্ছে, এই কণা তার মহাশূন্যের গভীর থেকে উৎপন্ন হয়ে সারা বিশ্বে পরিভ্রমণ করে বেড়াতে পারে, কোনো বস্তু এই কণা শোষণ করতে পারে না। আমাদের শরীরের ভেতর দিয়েও লাখ লাখ নিউট্রিনো চলে যায়, কিন্তু সাধারণ অবস্থায় এই কণার উপস্থিতি আমরা টের পাই না।
এই উচ্চশক্তিসম্পন্ন নিউট্রিনোর উৎস কী এবং কোথা থেকে আসে—সেই রহস্য জানতে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছেন গবেষকেরা।
যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাডিসনের উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ইয়াং বাই জানিয়েছেন, উচ্চশক্তির নিউট্রিনোর উৎসের ধাঁধা অ্যাস্ট্রোফিজিকস বা জ্যোতির পদার্থবিদ্যার অন্যতম বড় সমস্যা হয়ে আছে। আমরা প্রথমবারের মতো প্রমাণ পেয়েছি যে মহাজাগতিক একটি উৎস থেকে এই নিউট্রিনো উৎপন্ন হচ্ছে। আমাদের মিল্কিওয়ে ছায়াপথের কেন্দ্রে থাকা কৃষ্ণগহ্বর থেকেও আসতে পারে এই উচ্চ ক্ষমতার নিউট্রিনো।
গবেষকেরা জানিয়েছেন, আমাদের পৃথিবীতেও প্রতিনিয়ত সূর্য থেকে নিউট্রিনো নামের অতি শক্তিসম্পন্ন কণার বর্ষণ চলছে। আমাদের এই সৌরজগতের বাইরে থেকে আসা নিউট্রিনো আরও কোটি কোটি গুণ বেশি শক্তিসম্পন্ন হতে পারে। গবেষকেরা এই উচ্চশক্তির নিউট্রিনোর উৎস খুঁজে বের করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
তাঁদের ধারণা, উচ্চশক্তির নিউট্রিনো অত্যন্ত শক্তিশালী মহাজাগতিক ঘটনার ফলে তৈরি হতে পারে। ছায়াপথের সংঘর্ষ ও একত্র হওয়া, বিশাল ব্ল্যাকহোলের মধ্যে নক্ষত্রের পতন পালসার তৈরির মতো ঘটনায় নিউট্রিনোর জন্ম হতে পারে।
অবশ্য বস্তুর মধ্য দিয়ে খুব সহজে নিউট্রিনো চলে যেতে পারে বলে এর উৎস খুঁজে বের করার শনাক্তকারী যন্ত্র নির্মাণ খুব কঠিন।
দক্ষিণ মেরুতে অবস্থিত আইসকিউব নিউট্রিনো অবজারভেটরিতে এখন পর্যন্ত ৩৬ ধরনের উচ্চশক্তিসম্পন্ন নিউট্রিনো শনাক্ত করতে পেরেছেন গবেষকেরা। অ্যান্টার্কটিকার এই অবজারভেটরি ২০১০ সাল থেকে নিউট্রিনো শনাক্ত করতে কাজ করে যাচ্ছে।
গবেষণা-সংক্রান্ত ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে ‘ফিজিক্যাল রিভিউ ডি’ সাময়িকীতে।
গবেষকেরা দাবি করেছেন, তাঁদের এই গবেষণার ফলাফল অ্যাস্ট্রোফিজিকসের আরেকটি জটিল ধাঁধার সমাধান দিতে পারবে, বিশেষ করে উচ্চশক্তির মহাজাগতিক বিকিরণের উৎস বের করা সম্ভব হবে।