তাইওয়ানে পড়াশোনা: খণ্ডকালীন চাকরি ও স্কলারশিপের সুযোগ, প্রয়োজন আইইএলটিএস বা টোয়েফল স্কোর
শিক্ষাক্ষেত্রে মেধা ও বুদ্ধির মুক্ত বিকাশের মধ্যে নিহিত থাকে একটি দেশের সার্বিক উন্নয়নের রূপরেখা। এর ফসল হিসেবে পাওয়া যায় উন্নত মানের জীবনযাত্রা। তাই সংগত কারণেই বিশ্বখ্যাত বিদ্যাপীঠের দেশগুলো পরিণত হয় উচ্চশিক্ষার প্রধান গন্তব্যে। তাইওয়ান তেমনি একটি দেশ। বিশ্বজুড়ে উচ্চ মানের শিক্ষাব্যবস্থা যথেষ্ট ব্যয়বহুল। সেখানে তাইওয়ান স্বল্পমূল্যে একই শিক্ষা প্রদানে প্রতিনিধিত্ব করছে এশিয়ায়। তাইওয়ানে উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদনপদ্ধতি, পড়ার খরচ, স্কলারশিপসহ সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে নেওয়া যাক।
কেন তাইওয়ানে পড়বেন
শিক্ষার মাধ্যমকে স্বাধীন সৃজনশীলতাচর্চার মঞ্চে পরিণত করার মূল চালিকা শক্তি হলো নিরাপদ আর্থসামাজিক অবস্থা। ১ দশমিক ৮১৮ গ্লোবাল পিস ইন্ডেক্স নিয়ে বিশ্বের ৪৩তম শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে এই মধ্যে সেই শর্ত পূরণ করেছে তাইওয়ান। পৃথিবীর শীর্ষ অপরাধমুক্ত দেশগুলোর তালিকার তাইওয়ান চতুর্থ।
কার্যকর পাঠ্যক্রম ও গবেষণাধর্মী কার্যক্রম নিয়ে তাইওয়ানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশ্বখ্যাত বিদ্যাপীঠগুলোর সারিতে অনায়াসে জায়গা করে নিয়েছে। কিউএস ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম শতকের মধ্যে ৬৮তম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ন্যাশনাল তাইওয়ান ইউনিভার্সিটি। বিশ্বমানের শিক্ষাব্যবস্থার দৌলতে উন্নত হয়েছে দেশটির বিভিন্ন সেক্টরের বাজারগুলো। এআই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) এবং সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে বিদেশি বিনিয়োগগুলো তারই প্রমাণ। এ ধারাবাহিকতায় সৃষ্টি হয়েছে আরও বেশি গবেষণার সুযোগ, যা শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার গঠনের পথকে সুগম করেছে।
উচ্চশিক্ষায় আবেদনের যোগ্যতা
স্নাতকের জন্য আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা বা সমমানের ডিপ্লোমা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামের জন্য দরকার স্নাতক ডিগ্রি। ডক্টরাল ডিগ্রির জন্য আবেদনের পূর্বশর্ত হচ্ছে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি।
তাইওয়ানের প্রধান ভাষা তাইওয়ানিজ মান্ডারিন ও স্ট্যান্ডার্ড চায়নিজ। এরপরও স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও ডক্টরালের জন্য আলাদা করে মান্ডারিন বা চায়নিজ শেখার প্রয়োজন পড়ে না। বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যাচেলর ও মাস্টার্সের প্রতিটিতে রয়েছে পর্যাপ্ত ইংরেজি ভাষার কোর্স। ইংরেজি ভাষা দক্ষতার জন্য প্রয়োজন হবে আইইএলটিএস স্কোর ৫ দশমিক ৫ থেকে ৬ স্কোর কিংবা টোয়েফল আইবিটি স্কোর ৭১ থেকে ৮০।
তবে তুলনামূলক আরও কম খরচে পড়াশোনা ও স্কলারশিপের জন্য মান্ডারিন শেখাটা জরুরি। এ ছাড়া মান্ডারিন জনগোষ্ঠীর সঙ্গে চলাফেরা ও স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে একাত্ম হওয়ার জন্যও তাইওয়ানিজ ভাষার প্রতি আগ্রহী হয় বিদেশি ছাত্রছাত্রীরা।
* তাইওয়ানের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়
কিউএস র্যাঙ্কিংসহ সেরা ১০ তাইওয়ানিজ বিশ্ববিদ্যালয় হলো ন্যাশনাল তাইওয়ান ইউনিভার্সিটি (৬৮), ন্যাশনাল সিং হুয়া ইউনিভার্সিটি (২১০), ন্যাশনাল চেং কুং ইউনিভার্সিটি (২১৫), ন্যাশনাল ইয়াং মিং চিয়াও তুং ইউনিভার্সিটি (২১৯), ন্যাশনাল তাইওয়ান ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (৩৯২), ন্যাশনাল তাইপেই ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (৪২৫), ন্যাশনাল তাইওয়ান নরমাল ইউনিভার্সিটি (৪৫২), ন্যাশনাল সান ইয়াত-সেন ইউনিভার্সিটি (৪৮৫), তাইপেই মেডিকেল ইউনিভার্সিটি (৫৭৭) ও চাং গুং ইউনিভার্সিটি (৬৩১)।
* তাইওয়ানের জনপ্রিয় কোর্স
ইঞ্জিনিয়ারিং, টেকনোলজি, সোশ্যাল সায়েন্স, ম্যানেজমেন্ট, ন্যাচারাল সায়েন্স, লাইফ সায়েন্স, মেডিসিন, আর্টস, হিম্যানিটিস, মান্ডারিন চায়নিজ।
* যেভাবে আবেদন
সেপ্টেম্বর (ফল) ও ফেব্রুয়ারি (স্প্রিং) এই দুই মাস হলো তাইওয়ানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তির মৌসুম। এর মধ্যে ফল তথা সেপ্টেম্বরে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক কোর্স বাছাইয়ের সুযোগ থাকে। ভর্তির আবেদন অনলাইনে হয়। এর জন্য প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরই রয়েছে নিজস্ব অ্যাপ্লিকেশন প্ল্যাটফর্ম। আবেদনের শেষ সময়সহ ভর্তি সুনির্দিষ্ট শর্তগুলো জানার জন্য অবশ্যই নিম্নের ওয়েবসাইটগুলো পরিদর্শন করতে হবে।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
* উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা বা সমমানের ডিপ্লোমার সনদ।
* একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট (মার্কশিট)।
* অনলাইনে পূরণকৃত আবেদনপত্র।
* পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
* জাতীয় পরিচয়পত্র।
* পাসপোর্ট।
* ভাষা দক্ষতার প্রমাণ (আইইএলটিএস বা টোয়েফল স্কোর)।
* আবেদন ফি (বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে পরিমাণ ভিন্ন হয়ে থাকে। কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিনা মূল্যেই আবেদন গৃহীত হয়)।
* একাধিক রিকমেন্ডেশন লেটার।
* আর্থিক সচ্ছলতার প্রমাণপত্র।
* স্টাডি প্ল্যান।
* স্টেটমেন্ট অব পারপাস।
* গবেষণার প্রস্তাব (পিএইচডির জন্য)।
* স্টুডেন্ট ভিসার আবেদন যেভাবে
* বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার জন্য তাইওয়ানে যেতে দেশটির রেসিডেন্স ভিসার আবেদন করতে হবে। এ ভিসায় ১৮০ দিন বা ৬ মাসের অধিক সময় তাইওয়ানে বসবাসের অনুমতি পাওয়া যায়, যার মেয়াদ থাকে ১ বছর।
* আবেদনের জন্য সরাসরি https://visawebapp.boca.gov.tw- লিঙ্কে প্রয়োজনীয় তথ্যা দিতে হয়। এ সময় ভিসার প্রয়োজনীয় নথিপত্র স্ক্যান করে আপলোড দিতে হবে।
* আবেদন সাবমিটের পর তা ডাউনলোড করে তার একটি প্রিন্ট আউট নিতে হবে। এখানে খেয়াল রাখতে হবে, আবেদনপত্রে যেন অবশ্যই বারকোড থাকে। এরপর নির্দিষ্ট স্থানে সই করলেই আবেদনের প্রাথমিক কাজ শেষ।
* বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য তাইওয়ানের রেসিডেন্স ভিসার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো গ্যারান্টি লেটার। এখানে মূলত তাইওয়ানে বসবাসরত ব্যক্তি ভিসা প্রার্থীকে আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠিটি তৈরি করবেন।
এই গ্যারান্টি লেটারের জন্য প্রয়োজনীয় ফরমটি পাওয়া যাবে নিম্নের লিঙ্কে: (http://www.rocaiwan.org/uploads/sites১৬/২০১৪/০৮/%E৪%B৮%AD%E৮%৮F%AF%E৬%B০%৯১%E৫%৯C%৮B%E৭%B০%BD%E৮%AD%৮৯%E৪%BF%৯D%E৮%AD%৮৯%E৬%৯B%B৮Letter-of-Guarantee-for-Visa-Application.pdf) -এটি ডাউনলোড করে আমন্ত্রণকারীকে পাঠাতে হবে।
আমন্ত্রণকারী ফরমটি পূরণ করে স্ক্যান করে প্রার্থীকে ই-মেইলে পাঠিয়ে দেবেন। মূল গ্যারান্টি লেটারের কাগুজে নথিটি আমন্ত্রণকারী সযত্নে সংরক্ষণ করবেন।
তারপর টিইসিসি (তাইপেই ইকোনমিক অ্যান্ড কালচারাল সেন্টার) প্রার্থীকে একটি ভিসা নম্বর প্রদান করবে। নম্বরটি প্রার্থী আমন্ত্রণকারীকে জানাবেন। ভিসা নম্বর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমন্ত্রণকারী মূল গ্যারান্টি লেটারটি তাইওয়ানের বিওসিএতে (পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যুরো অব কনস্যুলার) জমা দেবেন। এরপর কনস্যুলার অফিস লেটারটি যাচাই করে টিইসিসিকে জানানোর পর ভিসা ইস্যু হয়ে যাবে। গ্যারান্টি যাচাইকরণ প্রক্রিয়ায় কমপক্ষে সাত কার্যদিবস লাগবে।
* ভিসার আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
* সইসহ অনলাইনে পূরণকৃত ভিসা আবেদন ফরম।
* তাইওয়ান গমনের উদ্দেশ্য, অধ্যয়নের ধরন ও সময়কাল উল্লেখপূর্বক ভিসার অনুরোধপত্র।
* সাদা পটভূমিতে সদ্য তোলা দুটি পাসপোর্ট সাইজের ছবি (৩ দশমিক ৪ x ৪ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার)।
* ন্যূনতম ছয় মাসের বেশি মেয়াদসম্পন্ন বৈধ পাসপোর্ট, যেখানে কমপক্ষে দুটি ফাঁকা পৃষ্ঠা থাকতে হবে।
* তাইওয়ানের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভর্তির অফার লেটার।
* সর্বশেষ ডিগ্রির সনদ ও ট্রান্সক্রিপ্ট বা মার্কশিটের ফটোকপি। মূল কপিগুলো রেফারেন্স হিসেবে কাউন্টারে দেখানোর জন্য সঙ্গে রাখা উচিত। সনদগুলো অবশ্যই ইংরেজিতে অনূদিত হতে হবে।
* গ্যারান্টি লেটার।
* তিন মাসের মধ্যে জারিকৃত স্বাস্থ্য শংসাপত্র।
* আর্থিক সচ্ছলতার প্রমাণপত্র (এখানে ব্যয়ভার বহনকারীর ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন এবং বিগত তিন মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট দিতে হবে। এখানে উল্লেখিত অর্থের পরিমাণ অন্তত একটানা ছয় মাসের জীবনযাত্রার খরচের জন্য হতে হবে।
* স্কলারশিপ পেয়ে থাকলে তার শংসাপত্র। এখানে অবশ্যই তার সময়কাল ও পরিমাণ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।
* স্টাডি প্ল্যান।
* ভাষা দক্ষতার সার্টিফিকেট (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।
* পুলিশ ক্রিমিনাল রেকর্ড সার্টিফিকেট (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।
* এসব নথি অবশ্যই আরওসির (রিপাবলিক অব চায়না) ফরেন মিশন কর্তৃক প্রত্যয়ন করে নিতে হবে।
ভিসার কাগজপত্র জমা ও বায়োমেট্রিক নিবন্ধন
বাংলাদেশে তাইওয়ানের কোনো দূতাবাস নেই। তাই ভিসার নথিগুলো জমা ও সাক্ষাৎকারের জন্য ভারতে অবস্থিত তাইওয়ান কনস্যুলার অফিসে যেতে হবে। ঠিকানা: ৩৪, পশ্চিমী মার্গ, বসন্ত বিহার, নতুন দিল্লি-১১০০৫৭, ভারত।
কাগজপত্র জমা নেওয়ার পাশাপাশি প্রার্থীর ফিঙ্গার প্রিন্ট ও ছবি তোলার মাধ্যমে তাঁর বায়োমেট্রিক নিবন্ধন সম্পন্ন করা হবে। এরপর ভিসার যাবতীয় ফি গ্রহণপূর্বক আইসিআর (ইনভয়েস কাম রিসিপ্ট) সরবরাহ করা হবে। ভিসাযুক্ত পাসপোর্ট গ্রহণের সময় এ রশিদ সঙ্গে আনতে হবে।
ভিসা প্রক্রিয়াকরণ ও আনুষঙ্গিক খরচ
* রেসিডেন্ট ভিসার আবেদন প্রক্রিয়াকরণ করতে মোট আট কর্মদিবস লাগে। প্রক্রিয়াকরণ সম্পন্ন হয়ে গেলে মূল নথিগুলো ফেরত দেওয়া হয়।
* ভিসার কাগজপত্রের মূলকপিগুলোর প্রতিটির প্রত্যয়নে ফি লাগবে ৪০০ এনটিডি বা ১ হাজার ৪৯৮ টাকা (১ এনটিডি=৩ দশমিক ৭৪ বাংলাদেশি টাকা)। আর অনুলিপিগুলোর প্রতিটির জন্য ফি ২০০ এনটিডি (৭৪৯ টাকা)। প্রস্তুতকৃত কাগজপত্র সংগ্রহ করা যাবে দুই কার্যদিবস পর।
* এক দিনের মধ্যে পেতে হলে প্রতিটি মূল নথির জন্য ধার্য হবে ৬০০ এনটিডি (২ হাজার ২৪৬ টাকা) ও প্রতিটি অনুলিপির জন্য ৩০০ এনটিডি (১ হাজার ১২৩ টাকা)।
* সিঙ্গেল এন্ট্রির রেসিডেন্ট ভিসার ফি ২ দশমিক ২ হাজার এনটিডি কিংবা ৫ দশমিক ৭ হাজার রুপি। বাংলাদেশি মুদ্রায় এটি প্রায় ৮ হাজার ১৩৭ টাকার সমান (১ রুপি = ১ দশমিক ৪৩ বাংলাদেশি টাকা)। অপর দিকে, একাধিক এন্ট্রির জন্য ফি ধার্য হবে ৪ দশমিক ৪ হাজার এনটিডি কিংবা ১১ দশমিক ৪ হাজার রুপি (১৬ হাজার ২৭৫ টাকা)। এই ভিসা এক বছর পর নবায়ন করা যায়।
স্কলারশিপের সুবিধা
* আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অধ্যয়ন ও জীবনযাত্রার খরচ মেটানোর জন্য দেশটিতে রয়েছে পর্যাপ্ত স্কলারশিপের সুযোগ। এর মধ্যে তাইওয়ান স্কলারশিপ প্রোগ্রামে রয়েছে ২৫ হাজার এনটিডির (৯৩ হাজার ৫৮২ টাকা) মাসিক উপবৃত্তি।
* তাইওয়ান আইসিডিএফ স্কলারশিপ স্নাতকদের জন্য প্রতি মাসে দিয়ে থাকে ১২ হাজার এনটিডি (৪৪ হাজার ৯২০ টাকা)। আর মাস্টার্সের জন্য বরাদ্দকৃত এ পরিমাণ প্রায় ১৮ হাজার এনটিডি (৬৭ হাজার ৩৭৯ টাকা)। সেই সঙ্গে মাসিক ২০ হাজার এনটিডি (৭৪ হাজার ৮৬৬ টাকা) রাখা হয় পিএইচডির জন্য।
* হুয়াইউ এনরিচমেন্ট স্কলারশিপের মাসিক উপবৃত্তির পরিমাণ ২৫ হাজার এনটিডি (৯৩ হাজার ৫৮২ টাকা)।
পড়াশোনা ও জীবনযাত্রার সম্ভাব্য খরচ
* স্নাতক প্রোগ্রামে বার্ষিক খরচ হতে পারে ৫৩ দশমিক ২ হাজার থেকে ৮৪ হাজার এনটিডি, যা প্রায় ১ লাখ ৯৯ হাজার ১৪২ থেকে ৩ লাখ ১৪ হাজার ৪৩৫ টাকার সমতূল্য।
* স্নাতকোত্তরের জন্য বার্ষিক বাজেট রাখতে হবে ৩৩ হাজার থেকে ১৬৮ হাজার এনটিডি (১ লাখ ২৩ হাজার ৫২৭ থেকে ৬ লাখ ২৮ হাজার ৮৭০ টাকা)। পিএইডির জন্য প্রতিবছর অধ্যয়ন ফি ৯৬ হাজার থেকে ২ লাখ এনটিডি বা ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৩৫৪ থেকে ৭ লাখ ৪৮ হাজার ৬৫৪ টাকা।
* বিদেশি শিক্ষার্থীরা প্রতি মাসে গড়ে ৩ হাজার এনটিডির (১১ হাজার ২৩০ টাকা) মুদি কিনে থাকেন। বাইরে খাওয়ার ক্ষেত্রে লোকাল মার্কেটে কমপক্ষে ৬০ এনটিডি (২২৫ টাকা) খরচ হতে পারে।
* যাতায়াতের ক্ষেত্রে সিটি বাসের মাসিক পাস ৫০০ এনটিডি (১ হাজার ৮৭২ টাকা)। তাইপেই মেট্রোর ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিটের (এমআরটি) মাসিক ভাড়া ৭০০ এনটিডি (২ হাজার ৬২১ টাকা)।
* আবাসনের ভাড়া নির্ভর করে তার অবস্থানের ওপর। শহরের সিটি সেন্টারের বাইরে এক বেডরুমের অ্যাপার্টমেন্টের ভাড়া নিতে পারে প্রতি মাসে প্রায় ১২ হাজার এনটিডি (৪৪ হাজার ৯২০ টাকা)। ইউটিলিটির জন্য মাসিক বাজেট রাখতে হবে ২ হাজার এনটিডি (৭ হাজার ৪৮৭ টাকা)।
খণ্ডকালীন চাকরির সুযোগ
তাইওয়ানে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার চলাকালে কাজের সুযোগ রয়েছে সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত। তবে এই পার্টটাইম কাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দুটি বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। প্রথমটি হলো এলিয়েন রেসিডেন্স সার্টিফিকেট বা এআরসি কার্ড নেওয়া। এটি তাইওয়ানে বসবাসের সময় বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের পরিচয়পত্র, যা দেশটিতে আইনি বসবাসের প্রমাণপত্র। তাইওয়ানে বিমান থেকে নেমেই শিক্ষার্থীদের প্রথম কাজ থাকে এই কার্ডের জন্য আবেদন করা।
দ্বিতীয় প্রয়োজনীয় বিষয়টি হলো ওয়ার্ক পারমিট। এই পারমিটের জন্য শিক্ষার্থীকে ওয়ার্ক ফোর্স ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি বরাবর আবেদন করতে হয়। প্রতিটি পারমিট সাধারণত শুধু এক সেমিস্টার বা ছয় মাসের জন্য বৈধ থাকে। ওয়ার্ক পারমিট বৈধ থাকা অবস্থাতেই সময়সীমা পার হয়ে যাওয়ার আগেই আবার আবেদন করা আবশ্যক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে নন-একাডেমিক চাকরির মধ্যে রয়েছে রেস্টুরেন্টে কাজ করা এবং বিক্রয় সহকারী হিসেবে কাজ করা। অন্যদিকে একাডেমিক চাকরির উদাহরণ হলো গবেষণা সহকারী/শিক্ষণ সহকারী, অনুবাদক এবং একটি ক্র্যাম স্কুলে ভাষা শেখানো। এ খণ্ডকালীন চাকরিগুলো থেকে ঘণ্টায় ১২০ থেকে ৪০০ এনটিডি (৪৫০ থেকে ১ হাজার ৪৯৮ টাকা) আয় করা যায়।
চাকরি ও স্থায়ী হওয়ার সুযোগ
তাইওয়ানে একটানা কমপক্ষে পাঁচ বছর অবস্থান করলে স্থায়ী বসবাসের জন্য আবেদন করা যায়। এ সময়ের মধ্যে কোনোরূপ অপরাধের রেকর্ড থাকা যাবে না, নির্দিষ্ট কাজে দক্ষতা থাকতে হবে এবং দেশের জাতীয় সমৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে হবে।
তাই প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে পড়াশোনা শেষে চাকরির ব্যবস্থা বা ব্যবসা শুরু করতে হয়। এ কাজগুলো সম্পাদনে স্নাতকের পরে একজন ফ্রেশ স্নাতক তাইওয়ানে অতিরিক্ত ছয় মাস থাকার অনুমতি পান। চাকরির খোঁজার জন্য আরও সময়ের প্রয়োজন হলে আরও ছয় মাস মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করা যেতে পারে।
দেশটিতে ফুলটাইম চাকরির ক্ষেত্রে বার্ষিক গড় বেতন প্রায় ১ লাখ থেকে ৬ দশমিক ৭ লাখ এনটিডি। বাংলাদেশে এর পরিমাণ প্রায় ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৩২৭ থেকে ২৫ লাখ ৭ হাজার ৯৯১ টাকা। এই চাকরিগুলোর মধ্যে রয়েছে ডাক্তার, ফার্মাসিস্ট, নার্স, মার্কেটিং ম্যানেজার, বিক্রয়কর্মী, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ার।
তথ্যসূত্র: ইউএনবি নিউজ