সুইডেনে উচ্চশিক্ষা: স্কলারশিপ, আছে আইইএলটিএসের বিকল্প, খণ্ডকালীন চাকরিতে ঘণ্টায় সাড়ে ৪০০০ টাকা

ইউরোপের অন্যতম দেশ সুইডেন বছরের পর বছর ধরে নাগরিকদের কাঙ্ক্ষিত আর্থসামাজিক অবস্থা নিশ্চিত করে আসছে। বিশ্বখ্যাত সব ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের এ আশ্রয়স্থলে ক্যারিয়ার গঠন হাজারো বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাছে স্বপ্নতুল্য। চলুন, শেনজেনভুক্ত দেশ সুইডেনে উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন পদ্ধতি, স্টুডেন্ট ভিসা, অধ্যয়ন খরচ এবং স্কলারশিপ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক—

কেন সুইডেন অন্যতম সেরা গন্তব্য—

সুইডিশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠ্যক্রম শেনজেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ (ইইউ) বিশ্বে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। প্রধান ভাষা সুইডিশ হলেও স্ক্যান্ডিনেভিয়ানদের প্রতি ১০ জনের ৯ জনই সাবলীলভাবে ইংরেজিতে কথা বলেন। পড়াশোনাসহ নিত্য জীবনযাত্রা এবং চাকরি ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ছাত্রছাত্রীদের পছন্দের অন্যতম গন্তব্য সুইডেন।

সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট অনুযায়ী পরিবেশগত দিক থেকে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নিরাপদ দেশ সুইডেন। পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় দূষণমুক্ত দেশগুলোর তালিকায় চতুর্থ স্থানে থাকা এই দেশটির দূষণ সূচক মাত্র ১৭ দশমিক ৭। এ ছাড়া বিশ্বের সর্বাপেক্ষা ভ্রমণবান্ধব দেশগুলোর তালিকায় শীর্ষ ১০-এর মধ্যে রয়েছে এই নর্ডিক দেশটি।

আরও পড়ুন

পড়াশোনার জন্য সুইডেন যাত্রার আরও একটি প্রধান কারণ হচ্ছে স্টুডেন্ট নোবেল নাইটক্যাপ। এ অনুষ্ঠানে বিশ্বের একাডেমিক সুপারস্টারদের সন্নিবেশ ঘটে। এই ভূখণ্ডে নোবেল পুরস্কারকে কেন্দ্র করে চলে নানা আয়োজন। বিশেষ করে স্টকহোমে পুরো একটি সপ্তাহ উদ্‌যাপন করা হয় নোবেলকে ঘিরে।

শত শত স্টার্টআপ কোম্পানির স্বর্গরাজ্য সুইডেনকে বলা হয় ইউরোপের সিলিকন ভ্যালি। ক্যালিফোর্নিয়ার পর স্টকহোমই হচ্ছে দ্বিতীয় শহর, যেখানে সর্বাধিক সফল কোম্পানিগুলোর গোড়াপত্তন হয়েছে।

ইউরোপীয় দেশটির আরও যে বিষয়টি বিদেশি শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করে, তা হলো, কর্ম ও জীবনের মধ্যে এক আশ্চর্য ভারসাম্য। এখানে প্রতিটি চাকরিতেই রয়েছে যথেষ্ট শিথিলতা। প্রয়োজন অনুযায়ী শিফটিং এবং প্যাটার্নিটি বা ম্যাটার্নিটি লিভসহ বিভিন্ন উপলক্ষে সাময়িক ছুটির নীতি। এখানে মূলত কর্মীদের সর্বোচ্চ উৎপাদনশীলতা পাওয়ার জন্য তাদের চাপমুক্তিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। পুরো দেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র ১ শতাংশ কর্মচারী খুব দীর্ঘ সময় ধরে বা ওভারটাইম কাজ করে।

সেরা বিশ্ববিদ্যালয় কোনগুলো: কেটিএইচ রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, লুন্ড ইউনিভার্সিটি, উপসালা ইউনিভার্সিটি, স্টকহোম ইউনিভার্সিটি, চালমার্স ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি, ইউনিভার্সিটি অব গোথেনবার্গ, ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট, লিনকোপিং ইউনিভার্সিটি, উমিয়া ইউনিভার্সিটি ও হাল্মস্ট্যাড ইউনিভার্সিটি।

সর্বাধিক চাহিদাসম্পন্ন বিষয়গুলো: প্রকৌশল ও প্রযুক্তি, ব্যবসা ও অর্থনীতি, সাংবাদিকতা, যোগাযোগ ও তথ্য, লাইফ সায়েন্সেস অ্যান্ড মেডিসিন, ডিজাইন অ্যান্ড আর্কিটেকচার।

আবেদনের উপায়—

সাধারণত ফল ও স্প্রিং সেমিস্টারে ভর্তির কার্যক্রম চালু করে সুইডিশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। ফল সেমিস্টার আগস্টের শেষ থেকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে শুরু হয়। এই মৌসুমে আবেদনের জন্য সবচেয়ে বেশি সংখ্যক প্রোগ্রাম চালু থাকে। আবেদন গ্রহণ অব্যাহত থাকে জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত। ফলে যে প্রোগ্রামগুলো বাদ পড়ে যায়, সেগুলোয় ভর্তির আবেদন নেওয়া হয় স্প্রিং সেমিস্টারে। এ মৌসুমে ডিসেম্বর থেকে আবেদন গ্রহণ শুরু হয়ে চলে পরের বছরের আগস্ট পর্যন্ত।

কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সামার সেমিস্টারেও ভর্তি নেওয়া হয়। তাই উত্তম হচ্ছে প্রথমে বিষয় পছন্দ করে তার জন্য উপযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই করে তার অফিশিয়াল ওয়েবসাইট চেক করা। তবে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আবেদনের ব্যাপারে ফল সেমিস্টারকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। কেননা আবেদনের জন্য যথেষ্ট বিকল্প কোর্স পাওয়ার সুযোগ তো আছেই! তা ছাড়া এ সময়ে আবেদন করা হলে অধ্যয়ন ফি প্রদান, প্রয়োজনীয় নথিপত্র প্রেরণ, রেসিডেন্স পার্মিটের আবেদন এবং আবাসন খোঁজার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায়।

স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে যেকোনো প্রোগ্রামে ভর্তির জন্য একটি সাধারণ অনলাইন প্ল্যাটফর্মের (universityadmissions.se) মাধ্যমে আবেদন নেওয়া হয়। এখানে অ্যাকাউন্ট তৈরি করে কাঙ্ক্ষিত প্রোগ্রামগুলোকে নির্বাচন করে সেগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তালিকাভুক্ত করে রাখতে হয়। এ ক্ষেত্রে চূড়ান্ত আবেদনপ্রক্রিয়া শুরুর পূর্বে প্রতিটি প্রোগ্রামের জন্য প্রয়োজনীয় শর্তগুলো জেনে নেওয়া উচিত।

আরও পড়ুন

আবেদনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র—

  • স্নাতক প্রোগ্রামে আবেদন করলে উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষার সনদ

  • স্নাতকোত্তর ডিগ্রির জন্য ৪ বা অনার্সসহ ৩ বছরের স্নাতক ডিগ্রির সনদ

  • ইংরেজি ভাষা দক্ষতার স্কোর: আইইএলটিএস (একাডেমিক) মোট স্কোর ৬ দশমিক ৫ (কোনো বিভাগে ৫ দশমিক ৫–এর কম পাওয়া যাবে না) টোয়েফল ইন্টারনেটভিত্তিক স্কোর ২০ (০ থেকে ৩০ স্কেলে) এবং মোট স্কোর ৯০। শিক্ষার্থীর স্নাতকের ৪ বছর ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করলে অথবা উচ্চমাধ্যমিকে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করে থাকলে আলাদা করে আইইএলটিএস বা টোয়েফলের দরকার হবে না। এ ক্ষেত্রে মিডিয়াম অব ইনস্ট্রাকশন বা এমওআই প্রদর্শন করতে হবে।

  • একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট

  • সিভি বা পোর্টফোলিও

  • স্টেটমেন্ট অব পার্পাস

  • লেটার অব মোটিভেশন

  • লেটার অব রিকমেন্ডেশন

আবেদন ফি পরিশোধের রশিদ: ৯০০ ক্রোনা বা ১০ হাজার ৫৫৭ টাকা (১ সুইডিশ ক্রোনা = ১১ দশমিক ৭৩ বাংলাদেশি টাকা)

ভিসার জন্য আবেদন পদ্ধতি—

দীর্ঘকালীন পড়াশোনার জন্য যেতে হলে অধ্যয়নের উদ্দেশ্যে রেসিডেন্স পারমিটের জন্য আবেদন করতে হবে। এ পারমিটে অধ্যয়নের জন্য ৩ মাস বা ৯০ দিনের বেশি সুইডেনে বসবাস করার অনুমতি লাভ করা যায়। এ ক্ষেত্রে মনে রাখা জরুরি, এই পারমিট নিয়ে শেনজেনভুক্ত অন্যান্য দেশে ভ্রমণ করা যাবে না। তার জন্য আলাদাভাবে স্বল্পমেয়াদি (৩ মাসের কম সময়ের জন্য) ভিসার আবেদন করতে হবে।

সুইডেনে উচ্চশিক্ষার জন্য রেসিডেন্স পারমিটের জন্য আবেদনের দ্রুততম ও সহজ উপায় হলো অনলাইনে আবেদন করা। এর জন্য https://www.migrationsverket.se/manageaccount/  -এই লিংকে অ্যাকাউন্ট খুলে নিতে হবে। অতঃপর আবেদনপ্রক্রিয়ার সময় জরুরি নথিপত্রের স্ক্যানকপি আপলোড করতে হবে।

ভিসার জন্য দরকারি নথিপত্র—

  • পাসপোর্টের ডাটা পৃষ্ঠা (পাসপোর্ট ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর অন্তত ৩ মাস পর্যন্ত বৈধ থাকতে হবে এবং যেখানে কমপক্ষে দুটি খালি পৃষ্ঠা থাকবে)

  • সর্বোচ্চ ৬ মাসের মধ্যে তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি

  • সুইডিশ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইস্যুকৃত ভর্তির অফার লেটার (এখানে পূর্ণকালীন অধ্যয়নের সময়সীমা ন্যূনতম ৯০ দিন বা ৩ মাসের অধিক হতে হবে)

  • সুইডেনে বসবাসের জন্য আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রমাণ: প্রতি মাসে কমপক্ষে ১০ হাজার ৩১৪ ক্রোনা (১ লাখ ২০ হাজার ৯৮৮ টাকা)। নথি হিসেবে প্রার্থীর নিজের নামে থাকা সাম্প্রতিক ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখাতে হবে, যার ইস্যুর তারিখ ৪ মাসের খুব বেশি হওয়া যাবে না।

  • শিক্ষার্থী যদি নিজে তার ব্যয়ভার বহন করেন তবে তার সপক্ষে সুস্পষ্ট প্রমাণস্বরূপ প্রাসঙ্গিক নথি লাগবে। কর্মচারী হলে কর্মসংস্থানের প্রশংসাপত্র প্রয়োজন হবে। স্বনিযুক্ত হলে সুইডিশ কোম্পানির নিবন্ধন অফিস থেকে নিবন্ধন প্রশংসাপত্র এবং এফ-ট্যাক্স কার্ডের অনুলিপি জমা দিতে হবে।

আরও পড়ুন

কর্মসংস্থানের যে যের তথ্য থাকতে হবে, তা হলো:

  • নিয়োগকর্তার নাম, যোগাযোগের বিবরণ ও কোম্পানির নিবন্ধন নম্বর

  • বেতন

  • চাকরির সময়কাল

  • অন্য কেউ স্পন্সর করে থাকলে তার পক্ষ থেকে একটি স্পন্সরশিপ লেটার দিতে হবে। স্পন্সর বা গ্যারান্টরের নিকট থেকে তহবিল শিক্ষার্থীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করতে হবে। স্পন্সর লেটারে থাকত হবে—

  • স্পন্সর বা গ্যারান্টরের নাম

  • তহবিলের প্রাপক তথা শিক্ষার্থীর নাম

  • তহবিলের মোট পরিমাণ এবং প্রাপ্তির সময়। তহবিল কিস্তিতে স্থানান্তর করা হলে সেই কিস্তি সংখ্যা।

  • স্পন্সরশিপের সুনির্দিষ্ট সময়কাল

  • তহবিলের কোনো অংশ শিক্ষার্থীর জীবনযাত্রার ব্যয়ের জন্য বরাদ্দ

  • স্পন্সর আয়ের উৎস ও কর্মসংস্থান সম্পর্কিত তথ্যাবলি

  • স্কলারশিপ পেয়ে থাকলে তার একটি প্রশংসাপত্র। এখানে উল্লেখ থাকবে—স্কলারশিপ প্রদানকারীর (ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান) নাম, স্কলারশিপ অর্জনকারী তথা শিক্ষার্থীর নাম, স্কলারশিপের সময়সীমা এবং সুইডেনে পড়াশোনার জন্য বরাদ্দ হয়েছে তার স্বীকারক্তি, অর্থের মোট পরিমাণ, কখন এবং কি পদ্ধতিতে প্রদান করা হবে তার বিস্তারিত, স্কলারশিপের কোন অংশটি শিক্ষার্থীর জীবনযাত্রার ব্যয় বহনে খরচ হবে।

আরও পড়ুন

স্টুডেন্ট লোন পেলে, তার ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং একটি প্রশংসাপত্র। এখানে উল্লেখ থাকবে—

  • ঋণ প্রদানকারী বা প্রদানকারীদের নাম

  • ঋণগ্রহীতা তথা ছাত্রছাত্রীর নাম

  • ঋণের সময়সীমা

  • শিক্ষার্থী কখন তা পরিশোধ করবেন

  • ঋণের অর্থ অধ্যয়নের জন্য কীভাবে ব্যবহৃত হবে (মাসিক বা মোট পরিমাণ)

  • ঋণের কোনো পরিমাণটি দিয়ে ছাত্রছাত্রীর জীবনযাত্রার ব্যয়ভার বহন করা হবে

  • পিএইচডির ক্ষেত্রে সুপারভাইজার অধ্যাপকের একটি প্রশংসাপত্র, যেখানে অধ্যয়নের পুরো সময় উল্লেখ থাকবে

  • পুরো অধ্যয়নের সময়জুড়ে সুইডেনে যাতায়াত ও বসবাসের জন্য স্বাস্থ্যবিমা: কমপক্ষে ৩০ হাজার ইউরো বা ৩৯ লাখ ৯৮ হাজার ৩৫১ টাকা (১ ইউরো = ১৩৩ দশমিক ২৮ টাকা), যা যেকোনো শেনজেনভুক্ত দেশের জন্য প্রযোজ্য

রেসিডেন্স পারমিট কার্ডের জন্য বায়োমেট্রিক নিবন্ধন—

অনলাইনে আবেদনের ক্ষেত্রে দূতাবাসে যাওয়ার উদ্দেশ্য হলো রেসিডেন্স পারমিট কার্ড। এর জন্য দরকার হবে ছবি তোলার এবং আঙুলের ছাপ নেওয়ার। দূতাবাসে উপস্থিত হওয়ার আগে [email protected] ই-মেইল ঠিকানায় যোগাযোগের মাধ্যমে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে। ভিসাকেন্দ্রের ঠিকানা: সুইডেন দূতাবাস, বেস এজওয়াটার, ৬ষ্ঠ তলা, গুলশান ২, ঢাকা-১২১২

ভিসা প্রক্রিয়াকরণ ফি

স্টুডেন্ট রেসিডেন্স পারমিটের জন্য আবেদন ফি ১ হাজার ৫০০ ক্রোনা। বাংলাদেশের সুইডেন দূতাবাস ওয়েবসাইট অনুসারে, এই ফি ১৪ হাজার ৮০০ টাকা, যেটি জমা দিতে হবে ব্র্যাক ব্যাংকে সুইডেন দূতাবাসের অ্যাকাউন্টে। অ্যাকাউন্ট নাম্বার- ১৫০১২০৪৮৪০৫৪৫০০১।

ভিসা প্রক্রিয়াকরণের সময় ও রেসিডেন্স পারমিট কার্ড সংগ্রহ

অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াকরণের কাজ প্রায় ৭৫ শতাংশ কাজ ৩ মাসের মধ্যে সম্পন্ন হয়। এর মধ্যে অতিরিক্ত তথ্য বা নথির প্রয়োজন হলে আরও সময় লাগতে পারে। তাই সুইডেনের বিশ্ববিদ্যালয় বরাবর অধ্যয়ন ফি পরিশোধের পরে যত দ্রুত সম্ভব রেসিডেন্স পারমিটের জন্য আবেদন করা উচিত। এতে ভিসার প্রক্রিয়ায় অতিরিক্ত সময় পাওয়া যায়, যার ফলাফল সেমিস্টারের ক্লাস শুরুর বেশ আগেই চলে আসতে পারে।

আবেদন যাচাই-বাছাই করে সুইডিশ অভিবাসন অধিদপ্তর কার্ড প্রদানের সিদ্ধান্ত ই-মেইলের মাধ্যমে প্রার্থীকে জানাবে। অতঃপর সে অনুযায়ী পাসপোর্ট সঙ্গে নিয়ে দূতাবাসে উপস্থিত হয়ে কার্ড সংগ্রহ করা যাবে।

সুইডেনে পড়াশোনা ও জীবনযাত্রার খরচ—

অধ্যয়ন এবং জীবনযাত্রার যাবতীয় খরচ মিলে সুইডেনের উচ্চশিক্ষায় যে বাজেট রাখতে হয় তা যথেষ্ট ব্যয়বহুল। বিষয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশেষে অধ্যয়ন ফি বাবদ খরচ হতে পারে প্রতিবছর ৮০ হাজার থেকে ২ লাখ ৯৫ হাজার ক্রোনা। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৯ লাখ ৩৮ হাজার ৪৩৬ থেকে ৩৪ লাখ ৬০ হাজার ৪৮৪ টাকার সমতুল্য। তন্মধ্যে ব্যবসা ও স্থাপত্যের কোর্সে খরচ সবচেয়ে বেশি। অপর দিকে, সামাজিক বিজ্ঞান এবং মানবিক কোর্স ফি সর্বনিম্ন। এ দুয়ের মধ্যে প্রযুক্তিভিত্তিক প্রোগ্রাম ও ন্যাচারাল সায়েন্স কোর্সের মূল্য বছরে ১ লাখ ২০ হাজার থেকে ১ লাখ ৪৫ হাজার ক্রোনা। এই পরিমাণ প্রায় ১৪ লাখ ৭ হাজার ৬৫৫ থেকে ১৭ লাখ ৯১৬ টাকার সমান।

নিত্যদিনের থাকা-খাওয়া ও চলাফেরার খরচ বিভিন্ন শহরে বিভিন্ন রকম। বিশেষ করে স্টকহোম ও গোথেনবার্গের মতো বড় শহরগুলোতে জীবনযাত্রার ব্যয়ভার সর্বাধিক। অন্যদিকে লুন্ড ও উপসালার মতো শহরগুলো মোটামুটি শিক্ষার্থীবান্ধব।

সব মিলিয়ে গড়পড়তায় যে বাজেট থাকে সেখানে বিপুল অংশজুড়ে থাকে আবাসন। মাসে প্রায় ২ হাজার ৫০০ থেকে ৬ হাজার ৫০০ ক্রোনা (২৯ হাজার ৩২৬ থেকে ৭৬ হাজার ২৪৮ টাকা)। ইউটিলিটির জন্য রাখতে হবে মাসে ১ হাজার ৩০০ ক্রোনা (১৫ হাজার ২৫০ টাকা)। খাবার ও প্রতি মাসের মুদির জন্য ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ ক্রোনা (১৭ হাজার ৫৯৬ থেকে ২৯ হাজার ৩২৬ টাকা)। পরিবহনে ব্যয় হবে ১ হাজার ক্রোনা বা ১১ হাজার ৭৩০ টাকা।

সুইডেনে স্কলারশিপ—

স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের বিভিন্ন প্রোগ্রামে রয়েছে পর্যাপ্ত স্কলারশিপের সুবিধা। এগুলোর মধ্যে কেটিএইচ রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির আর্থিক সহায়তার পরিমাণ ১ লাখ ৪১ হাজার থেকে ৩ লাখ ৭২ হাজার ক্রোনা পর্যন্ত।

  • চালমার্স ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি স্কলারশিপের মূল্য ২৩ হাজার থেকে ১ লাখ ১৭ হাজার ক্রোনা

  • লুন্ড ইউনিভার্সিটি গ্লোবাল প্রতিবছর ৮৫ হাজার থেকে ১ লাখ ১৯ হাজার ক্রোনার স্কলারশিপ দিয়ে থাকে

  • লিনকোপিং ইউনিভার্সিটি থেকে পাওয়া যায় বছরে ২০ হাজার থেকে ১ লাখ ২ হাজার ক্রোনা।

  • সুইডিশ ইনস্টিটিউট স্কলারশিপ ফর গ্লোবাল প্রফেশনাল কার্যক্রম থেকে বরাদ্দ থাকে প্রতি মাসে ১২ হাজার ক্রোনা।

  • উপসালা ইউনিভার্সিটি গ্লোবাল স্কলারশিপের আওতায় থাকে সেমিস্টারপ্রতি ৫০ হাজার থেকে ৭২ হাজার ৫০০ ক্রোনা।

ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট স্কলারশিপ মাসে ১৩ হাজার ক্রোনা দেয়। জনপ্রিয় স্কলারশিপ প্রকল্প ইরাস্মাস মুন্ডাস জয়েন্ট মাস্টার ডিগ্রি থেকে প্রতি সেমিস্টারে বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ ৫২ হাজার ক্রোনা।

খণ্ডকালীন চাকরির সুযোগ কেমন

সুইডেনে পড়াশোনার জন্য রেসিডেন্স পারমিট লাভের মাধ্যমে অধ্যয়নের পাশাপাশি খণ্ডকালীন কাজের অনুমতিও পাওয়া যায়। আলাদা করে আর ওয়ার্ক পারমিটের দরকার পড়ে না। এমনকি অন্য দেশগুলোর মতো এখানে কাজের জন্য কোনো ধরাবাঁধা সময়সীমা নেই।

সুইডেনে খণ্ডকালীন চাকরি করে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৪০০ ক্রোনা (৪ হাজার ৬৯২ টাকা) পর্যন্ত আয় করা যায়। এই হারে সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা কাজ করে মাসিক ৩২ হাজার ক্রোনা পর্যন্ত উপার্জন করা যেতে পারে। শুধু নিত্যদিনের জীবনযাত্রার ব্যয়ভার সামলানো নয়, এর মাধ্যমে কাজের অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়, তা ছাড়া ভবিষ্যতে পূর্ণকালীন চাকরির জন্য নেটওয়ার্কিং-এও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই স্বল্পকালীন কাজগুলো।

আরও পড়ুন

ঘণ্টাপ্রতি গড় রেটের একটি তালিকা—

  • লাইব্রেরি সহকারী: ১৬৫ ক্রোনা

  • গ্রাহক সেবা প্রতিনিধি: ২০০ ক্রোনা

  • গবেষণা সহকারী: ২০০ ক্রোনা

  • ল্যাব টেকনিশিয়ান: ২৩৬ ক্রোনা

  • রিসেপশনিস্ট: ১৬০ ক্রোনা

  • ওয়েটার বা ওয়েট্রেস: ১৩০ ক্রোনা

  • বিক্রয় সহকারী: ১৪৪ ক্রোনা

  • আইটি সাপোর্ট: ২৫৩ ক্রোনা

  • ফ্রিল্যান্স রাইটিং বা অনুবাদক: ২৪২ ক্রোনা

  • আয়ের ক্ষেত্রে কর দেওয়ার বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে। কেননা মাসিক আয়ের প্রায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কর দিতে হয়। তথ্যাসুত্র: ইউএনবি