ভর্তিতে বড় পরিবর্তন, তবে রয়ে গেছে সংকট

২০টি সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রক্রিয়াগত সমস্যার কারণে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। শূন্য আসন পূরণে বারবার বিজ্ঞপ্তি।

শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে ২৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ ভিত্তিতে ভর্তি পরীক্ষা হচ্ছে। দুর্ভোগ কমলেও বেশ কিছু সংকট রয়ে গেছে
ফাইল ছবি

উচ্চশিক্ষায় ভর্তি মানেই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দুশ্চিন্তা। একসময় এ দুশ্চিন্তার সঙ্গে দুর্ভোগও ছিল। ভর্তি পরীক্ষা দিতে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীকে দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দৌড়াতে হতো। এতে আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হতেন শিক্ষার্থীরা। সেই অবস্থার অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে দেশের ২৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ ভিত্তিতে ভর্তি পরীক্ষা হচ্ছে। এর মাধ্যমে ভর্তি-ইচ্ছুক একজন শিক্ষার্থী একটি পরীক্ষা দিয়ে তাঁর যোগ্যতা ও পছন্দ অনুযায়ী গুচ্ছে থাকা (একাধিক গুচ্ছ) বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারছেন।

তবে দুর্ভোগ অনেকটা কমলেও এখনো বেশ কিছু সংকট রয়ে গেছে। বিশেষ করে ২০টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গত বছর প্রথমবারের মতো গুচ্ছভুক্ত হয়ে ভর্তি পরীক্ষা নিলেও পদ্ধতিগত জটিলতার কারণে শিক্ষার্থীরা যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বারবার বিজ্ঞপ্তি দিয়েও আসন পূরণ করতে পারছে না। এর মধ্যে নতুন শিক্ষাবর্ষে (২০২০-২১) ক্লাস শুরু হলেও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো বেশ কিছুসংখ্যক আসন ফাঁকা রয়েছে। সেগুলো পূরণের জন্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হচ্ছে। অথচ এ ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা হয়েছিল পাঁচ মাস আগে।

আসন্ন নতুন শিক্ষাবর্ষেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গুচ্ছ ভিত্তিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ অবস্থায় এখনই এসব সংকট দূর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ এসেছে শিক্ষকদের পক্ষ থেকেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি নিয়ে আগামী ৭ এপ্রিল উপাচার্যদের সঙ্গে সভা ডেকেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করেছেন ১৩ লাখ ৬ হাজার ৭১৮ জন শিক্ষার্থী। আর জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ জন। ফল প্রকাশের পর উচ্চশিক্ষায় ভর্তি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে নতুন শিক্ষাবর্ষে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আগামীকাল শুক্রবার অনুষ্ঠিত হবে মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষা।

বর্তমানে সারা দেশে ৫২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এ ছাড়া ৩৭টি সরকারি ও ৭২টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ রয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ৮৮১টি কলেজে স্নাতক (সম্মান) পড়ানো হয়। ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন মাদ্রাসা এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রাজধানীর সাতটি বড় সরকারি কলেজে উচ্চশিক্ষায় পড়ানো হয়।

ইউজিসির হিসাবে, সারা দেশে স্নাতক (সম্মান), স্নাতক (পাস) ও সমমানের কোর্সে প্রথম বর্ষে ভর্তিযোগ্য আসন আছে ১৩ লাখের কিছু বেশি। এর মধ্যে সরাসরি শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়, এমন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসন আছে ৬০ হাজারের মতো। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোয় পরীক্ষা ছাড়াই এসএসসি ও এইচএসসি এবং সমমানের পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়।

গুচ্ছ ভর্তির ভালোমন্দ

চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. ইসমাইল খান ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিকেল শিক্ষা অনুষদের ডিন ছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সত্তরের দশকে তাঁরা যখন মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন, তখন আটটি মেডিকেল কলেজ ছিল। কিন্তু একজন শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ তিনটিতে আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারত। এ নিয়ে নানামুখী সমস্যা হতো। পরে কলেজগুলোতে ভর্তিতে সমতা আনার লক্ষ্যে ১৯৯৪ বা ১৯৯৫ সালের দিকে সব সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে একই ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়। ২০০৪–২০০৫ সালের দিকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোও এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়। যদিও প্রথমে শুধু পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেই বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হতো। পরে সিদ্ধান্ত হয়, বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে হলেও ন্যূনতম পাস নম্বর পেতে হবে। আর সরকারি মেডিকেলে আগে থেকেই মেধাতালিকা ও শিক্ষার্থীর পছন্দ অনুযায়ী ভর্তি হয়। ফলে মেডিকেলে পরীক্ষা নিয়ে কোনো দুর্ভোগ নেই। যদিও কোনো কোনো বছর প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে।

কিন্তু আলোচনা ও ইউজিসির সুপারিশ থাকলেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গুচ্ছ বা সমন্বিতভাবে ভর্তিতে রাজি ছিল না। এর বড় কারণ হলো ভর্তি বাবদ আয় থেকে শিক্ষকদের বঞ্চিত হওয়া। একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য হিসেবে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদও এ বিষয়ে নির্দেশনা দেন। পরে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে প্রথমে গুচ্ছ ভিত্তিতে ভর্তি পরীক্ষা নিতে রাজি হয় কৃষি ও কৃষিশিক্ষাপ্রধান সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়। এ পদ্ধতিতে একটি পরীক্ষা দিয়েই শিক্ষার্থী এ সাত বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো একটিতে ভর্তি হতে পারেন। এতে পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর মেধাতালিকায় ও অপেক্ষমাণ তালিকায় স্থান পাওয়া শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঙ্ক্ষিত বিষয়গুলোর মধ্যে থেকে পছন্দক্রম দিতে হয়। এভাবে মেধাক্রম ও পছন্দক্রমের ভিত্তিতে ভর্তি–ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে বিষয়ে বা ডিগ্রির জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হন, তা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। আর কোটায় ভর্তির ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করে ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়। দুই বছর ধরে এ নিয়মে বড় ধরনের কোনো অসুবিধা ছাড়াই এ কাজ হচ্ছে। তবে এবার কোটা নির্ধারণে প্রবাসী সন্তানদের পক্ষ থেকে কিছু অভিযোগ উঠেছিল।

কৃষি ও কৃষিশিক্ষাপ্রধান সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়েও ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর শিক্ষার্থীদের পছন্দক্রম অনুযায়ী কেন্দ্রীয়ভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয় নির্ধারণ করে দিয়ে এ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।
অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর, সদস্য, ইউজিসি

তৃতীয়বারের মতো এ সাত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ ভিত্তিতে পরীক্ষা নেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন উপাচার্য। এবার এ সাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির কাজে নেতৃত্ব দেবে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। যদিও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি অংশ এবার গুচ্ছ ভর্তিতে কিছুটা অনাগ্রহ দেখাচ্ছেন।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট), খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) এবং রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) একটি গুচ্ছভুক্ত হয়ে গত বছর প্রথমবারের মতো গুচ্ছ ভিত্তিতে ভর্তি পরীক্ষা নিয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজধানী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় আলাদাভাবেই ভর্তি পরীক্ষা নিচ্ছে। গুচ্ছে না থাকলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেশের আটটি বিভাগীয় শহরে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি অনেকটাই কমাতে পেরেছে। আসন্ন ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে কী করা হবে, জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামাল প্রথম আলোকে বলেন, গতবার করোনার কারণে এবং শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে বিভাগীয় শহরগুলোতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। এবারও একই পরিকল্পনা রয়েছে।

২০ বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছে পরীক্ষা হলেও উভয়সংকট

গত বছর প্রথমবারের মতো ২০টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ও গুচ্ছভুক্ত হয়ে ভর্তি পরীক্ষা নিয়েছে। বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্যের বিষয়গুলোর জন্য তিন দিনে আলাদা তিনটি ভর্তি পরীক্ষা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় হলো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কিছু বিষয়), বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

তবে প্রক্রিয়াগত কিছু সিদ্ধান্তের কারণে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় বারবার মেধাতালিকা প্রকাশ করেও সব আসন পূরণ করতে পারছে না।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা এবং গুচ্ছে থাকা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বশীল একাধিক শিক্ষক বলেছেন, এ প্রক্রিয়ায় একজন শিক্ষার্থী কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলেন, তা নির্বাচন করে দেয়নি কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটি। কমিটি কেবল ভর্তি পরীক্ষার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের একটি ‘স্কোর’ করে দেয়। এরপর গুচ্ছে থাকা ২০টি বিশ্ববিদ্যালয় আলাদাভাবে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিজেদের শর্ত উল্লেখ করে দরখাস্ত আহ্বান করে। প্রাপ্ত ‘স্কোর’ অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজ নিজ ব্যবস্থাপনায় ভর্তির কাজটি করছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দরখাস্তের জন্য আলাদা ফি এবং ভর্তি ফি ধার্য করে। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৫০ টাকা পর্যন্ত আবেদন ফি নিয়েছে। এভাবে একই শিক্ষার্থী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় বদলাতে পারছেন। একসঙ্গে ভর্তির কাজটি না হওয়ায় প্রথমে যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন, সেখানেই ভর্তি হচ্ছেন।

কারণ, আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবেন কি না, তার কোনো নিশ্চিয়তা নেই। পরে যখন তুলনামূলক আরেকটু ভালো পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পান, তখন আগের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বাতিল করে পরের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এর ফলে আগের বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন খালি হয়। এরপর আবার ওই শিক্ষার্থী দেখলেন, অন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক আরও ‘ভালো’ বিষয়ে ভর্তির সুযোগ আছে। তখন তিনি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এভাবে ভর্তি বাতিল করলে আগের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভর্তির টাকা ওঠানোও সহজ নয়। এ ছাড়া সাক্ষাৎকার বা মৌখিক পরীক্ষার জন্যও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছোটাছুটি তো আছেই।

ইউজিসির একজন কর্মকর্তা বললেন, তাঁর এক আত্মীয় প্রথমে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। পরে সেটি বাতিল করে ভর্তি হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। সর্বশেষ সেটিও বাতিল করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।

এভাবে শিক্ষার্থীরা আর্থিকভাবে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, অন্যদিকে কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় আসনশূন্যতার সমস্যায় পড়ছেন।

যেমন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কথাই ধরা যাক। আসন পূরণের জন্য এ বিশ্ববিদ্যালয়ে দশম মেধাতালিকা প্রকাশ করতে হয়েছে। ৭ মার্চ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, দুজন কর্মী ভর্তিসংক্রান্ত কাজ করছেন। একজন জানালেন টাকা জমা দেওয়ার পরও ১২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি বাতিল করেছেন। কারণ, তাঁরা পছন্দের অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। এ জন্য ওই দিন পর্যন্ত ওই বিভাগে সব আসন পূরণ হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার ২ হাজার ৭৬৫টি আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে। কিন্তু নবম মেধাতালিকা প্রকাশের পরও দেখা যায় ১৯০টি আসন শূন্য। এ জন্য আবারও সাক্ষাৎকার আহ্বান করা হয়।

এবারও গুচ্ছে ভর্তি, সমাধানের উপায় কী

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. ছাদেকুল আরেফিন প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক দিন আগে ২০ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের এক সভায় নতুন শিক্ষাবর্ষেও গুচ্ছ ভিত্তিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী সভায় পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হবে। তবে তিনি মনে করেন, যেসব সমস্যা আছে, সেগুলো আলোচনা করে সমাধান করা সম্ভব।

সমস্যার কারণ তুলে ধরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কেউ কেউ নতুন শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছভুক্ত হয়ে পরীক্ষায় না যাওয়ার কথা বলছেন।

যদিও ইউজিসি মনে করছে, খুব সহজেই এর সমাধান করা যায়। সংস্থাটির সদস্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, নীতিমালা সংশোধন করে কৃষি ও কৃষিশিক্ষাপ্রধান সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এই ২০ বিশ্ববিদ্যালয়েও কেন্দ্রীয়ভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয় নির্ধারণ করে দিয়ে এ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। মেডিকেল কলেজেও এমনটি হচ্ছে।

তবে এবারই যেহেতু এই ২০ বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ ভিত্তিতে ভর্তি পরীক্ষা হয়েছে, তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি মূল্যায়ন করার পরামর্শ দিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক (ছাত্রকল্যাণ) ও বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. আইনুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক এবং গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি কমিটির সদস্যসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত সময়ের মধ্যে মূল্যায়ন করে আসন্ন শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।