বইয়ে ‘হ-তে হাত ধোয়া’ অন্তর্ভুক্তির আহ্বান
করোনা মহামারির পরিপ্রেক্ষিতে ও দীর্ঘ মেয়াদে সচেতনতা গড়ে তোলার অংশ হিসেবে শিশুদের মধ্যে হাত ধোয়ার অভ্যাস জোরদার করতে পাঠ্যপুস্তকে ‘হ-তে হাত ধোয়া’, ‘এইচ ফর হ্যান্ডওয়াশিং’ অন্তর্ভুক্তির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের আয়োজনে ‘হ-হাত ধোয়া, সুরক্ষিত হাতে সুরক্ষিত দেশ’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে এ অভিমত বা পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে আজ ১৫ অক্টোবর বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস ২০২০ উপলক্ষে নতুন একটি আন্দোলন শুরু করছে জীবাণু থেকে সুরক্ষিত রাখার সোপ ব্র্যান্ড লাইফবয়। যার লক্ষ্য—ছোটবেলা থেকেই হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা। এ প্রয়াস থেকেই ৬ অক্টোবর একটি সাইট চালু হয়েছে, যেখানে এইচ ফর হ্যান্ডওয়াশিং, হ-তে হাত ধোয়া আন্দোলনকে সমর্থন করার আহ্বান জানিয়েছেন লাইফবয়ের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর ক্রিকেট অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। এ ছাড়া খেলার ছলে নিজেদের হাত ধোয়ার ক্ষেত্রে বাচ্চাদের উৎসাহিত ও জড়িত করার লক্ষ্যে একটি জিঙ্গেল ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে। আন্দোলনকে প্রাণবন্ত করতে গ্লোবাল হ্যান্ডওয়াশিং পার্টনারশিপের সহযোগিতায় এইচ ফর হ্যান্ডওয়াশিং রিসোর্স পেজ চালু করেছে লাইফবয়।
দৈনিক ভোরের কাগজ–এর সম্পাদক শ্যামল দত্তের সঞ্চালনায় গতকালের ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। উপস্থিত ছিলেন ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেদার লেলে; ইউনিসেফ বাংলাদেশের ওয়াটার, স্যানিটেশন অ্যান্ড হাইজিন (ওয়াশ) বিভাগের প্রধান ডারা জনস্টন; সেভ দ্য চিলড্রেনের ডিরেক্টর অব প্রোগ্রাম ডেভেলপমেন্ট ও কোয়ালিটি রিফাত বিন সাত্তার; প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ওরলা মারফি, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ এবং ওয়াটার এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান প্রমুখ।
দীপু মনি বলেন, ‘ছোটবেলায় শিশুরা যা শেখে, তা জীবনব্যাপী তাদের কাজে দেয়। তাই রোগব্যাধি মোকাবিলায় শৈশব থেকেই হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি।’ তিনি আরও বলেন, ‘শুধু ডায়রিয়া বা করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে নয়, বরং পুষ্টিহীনতা এবং কৃমির মতো স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে রক্ষা পেতেও হাত ধোয়ার বিষয়ে সচেতন হতে হবে। স্কুল পুনরায় খোলার পূর্বশর্তই হবে সঠিকভাবে হাত ধোয়া এবং সাবানসহ পানির উৎস নিশ্চিত করা।’
ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের চেয়ারম্যান কেদার লেলে বলেন, বাংলাদেশে গত এক দশকের বেশি সময় হাত ধোয়াসংক্রান্ত শিক্ষা ও সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন চালিয়ে আসছে লাইফবয়। ছোটবেলা থেকেই শিশুদের মধ্যে স্বাস্থ্যসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। জীবাণুমুক্ত থাকতে হাত ধোয়ার বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে দায়বদ্ধতার জায়গা থেকেই ১২৫ বছর ধরে বিশ্বব্যাপী কাজ করছে লাইফবয়। শৈশব থেকেই হাত ধোয়ার বিষয়টি জীবনাচরণে অন্তর্ভুক্ত করতে পাঠ্যক্রমে এইচ ফর হ্যান্ডওয়াশিংএবং হ-তে হাত ধোয়া অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দেন তিনি।
ডারা জনস্টন বলেন, ‘২০১৯ সালের করোনাভাইরাস বুঝিয়ে দিয়েছে, হাত ধোয়া ও জীবাণুমুক্ত থাকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।’ রিফাত বিন সাত্তার বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো চালু হলে শিশুরা যেন জীবাণুমুক্তভাবে স্কুলে আসতে পারে এবং স্কুল থেকে বাড়িতে ফিরতে পারে, সেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ওরলা মারফি বলেন, পাঠ্যপুস্তকে ও খেলার ছলে শিশুরা শিক্ষা গ্রহণে মনোযোগী হয়। বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় শিশুকে হাত ধোয়ার এ শিক্ষা দিতে হবে।
আসিফ সালেহ বলেন, ‘সুস্থ থাকতে হলে জীবাণুমুক্ত থাকতে হবে ও হাত ধুতে হবে। প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরে এই জীবাণুমুক্ত থাকার গুরুত্ব অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। ব্র্যাকের সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যায়, ৪৯ শতাংশ মানুষের কাছে সঠিকভাবে হাত ধোয়ার সাবান ও পানির পর্যাপ্ততা নেই। এ পর্যাপ্ততা সবার কাছে পৌঁছে দিতে ইউনিলিভারের সঙ্গে একযোগে কাজ করেছে ব্র্যাক।’
হাসিন জাহান হাত ধোয়ার বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে এবং উদ্বুদ্ধ করতে একযোগে কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।