গবেষণা
গণমাধ্যমের বস্তুনিষ্ঠতা প্রভাব ফেলে শিক্ষার্থীদের সাংবাদিকতায় ক্যারিয়ার গড়ার সিদ্ধান্তে
গণমাধ্যম কতটা বস্তুনিষ্ঠ ও নির্ভুল—তার ওপর নির্ভর করে বাংলাদেশের গণমাধ্যম শিক্ষার্থীরা সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেবেন কি না। সম্প্রতি সেইজ পাবলিশিং–এর জার্নালিজম অ্যান্ড মাস কমিউনিকেশন এডুকেটর জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রবন্ধে এ তথ্য উঠে এসেছে।
‘ব্যারিয়ার্স অ্যান্ড মোটিভেটর্স: ইনভেস্টিগেটিং দ্য ইম্প্যাক্ট অব পারসোনাল অ্যান্ড পারসেপচুয়াল ফ্যাক্টর্স অন মিডিয়া ক্যারিয়ার চয়েসেস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণাটি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ও ফটোগ্রাফি বিভাগের প্রভাষক খন্দকার রুবাইয়াত মুরসালিন ও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ও গবেষক মো. নাসিমুল হুদা। সংখ্যাতাত্ত্বিক পদ্ধতির এ গবেষণায় বাংলাদেশে গণমাধ্যমকে পেশা হিসেবে গ্রহণের সিদ্ধান্তে ব্যক্তিগত ও সামাজিক কোন কোন নিয়ামক প্রভাব ফেলে, তা খতিয়ে দেখা হয়। এর জন্য ২০২৪ সালের এপ্রিল-মে মাসে দেশের ১৬টি পাবলিক-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে গণমাধ্যম বিষয়ে অধ্যয়নরত ৩৪০ জন শিক্ষার্থীর ওপর জরিপ পরিচালনা করা হয়। জরিপে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২৭ জন (৩৭.৩৫%) এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১৩ জন (৬২.৬৫%) শিক্ষার্থী অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে নারী শিক্ষার্থী ১৫১ জন (৪৪.৪%) এবং পুরুষ শিক্ষার্থী ১৮৯ জন (৫৫.৬%)। ঢাকার বাইরের শিক্ষার্থী ছিলেন ২০৯ জন (৬১.৫%) ও ঢাকার শিক্ষার্থী ছিলেন ১৩১ জন (৩৮.৫%)।
গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, স্বেচ্ছায় সাংবাদিকতা বা গণমাধ্যমকে পড়াশোনার বিষয় হিসেবে নির্বাচন করা, সাংবাদিকতা–সংশ্লিষ্ট কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতা এবং পরিবার, শিক্ষক ও সহপাঠীদের প্রভাব শিক্ষার্থীদের সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে।
এ ছাড়া সাংবাদিকদের জীবনাচরণ সম্পর্কে ধারণাও তাঁদের সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে। একজন সাংবাদিকের কর্মজীবনে সামাজিক প্রভাব রাখার সুযোগ, ব্যাপকসংখ্যক মানুষের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ায় লিপ্ত হওয়া ও সামাজিক পরিবর্তনে ভূমিকা রাখার সুযোগ শিক্ষার্থীদের এ পেশায় আগ্রহী করে। পাশাপাশি দেশের সামগ্রিক সমৃদ্ধি ও শাসনব্যবস্থায় স্বচ্ছতা নিশ্চিতে জনমানুষের পক্ষে সত্যকে তুলে ধরার ক্ষমতা সাংবাদিকতা পেশাকে শিক্ষার্থীদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলে।
গবেষণায় আরও উঠে আসে, গণমাধ্যমের বস্তুনিষ্ঠতা ও নির্ভুলতা শিক্ষার্থীদের সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্তকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। পক্ষান্তরে গণমাধ্যমের প্রতি অবিশ্বাস এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সাধারণত পক্ষপাত, সেন্সরশিপ এবং অতিরঞ্জিত সংবাদ মিডিয়ার প্রতি অবিশ্বাস তৈরি করে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক চাপ ও ভুল তথ্যের কারণে মিডিয়ার ওপর থেকে আস্থা হারান শিক্ষার্থীরা।
গবেষণায় বলা হয়, গণমাধ্যম শিক্ষায় হাতে–কলমে শিক্ষাদান, ইন্টার্নশিপ এবং ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার সুযোগ তৈরির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের গণমাধ্যমের প্রতি আগ্রহী করা সম্ভব। একই সঙ্গে সাংবাদিকতা শিক্ষায় নৈতিকতার পাঠ এবং বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ, শিক্ষার্থী এবং পেশাজীবীদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন ও মেন্টরশিপের ব্যবস্থা, শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে, যা গণমাধ্যম শিক্ষার্থীদের সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে নির্বাচনে ও পেশাগত সফলতায় এবং দেশের গণমাধ্যম খাতে সুশিক্ষিত ও দক্ষ মানবসম্পদ সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।