ইনোভেটিভ ও ইনক্লুসিভ শিক্ষা বিস্তারে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল
আধুনিক শিক্ষার প্রসার ও প্রচারনির্ভর করে প্রযুক্তিগত শিক্ষার পাশাপাশি ক্যারিয়ার ও নেতৃত্ব গঠনভিত্তিক শিক্ষার ব্যাপক উন্নয়নের ওপর। গতানুগতিক ও কাঠামোবদ্ধ শিক্ষা ধারায় আমাদের দেশে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে অনেক প্রতিষ্ঠানই পরিচালিত হয়ে থাকে, কিন্তু শিক্ষার্থীদেরকে নৈতিক মূল্যবোধে বিকশিত করে তাদের জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানে উন্নত শিক্ষার নিশ্চায়ন করতে পারে গুটিকয়েক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তার মধ্যে অন্যতম ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল (ডিআইএস) আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করে ছাত্রছাত্রীদের আরও বেশি বাস্তবমুখী শিক্ষা প্রদান করে চলেছে।
আন্তর্জাতিক শিক্ষাধারায় অ্যাডেক্সেল ও কেমব্রিজ এবং জাতীয় শিক্ষাধারায় এনসিটিবি কারিকুলামে পরিচালিত ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ২০০৯ সাল থেকে এর যাত্রা শুরু করে বর্তমানে এটির অনেক শাখা একই প্রক্রিয়ায় বিদ্যমান রয়েছে। এটির প্রধান প্রধান শাখার মধ্যে রয়েছে, ডিআইএস ইংলিশ মিডিয়াম (অ্যাডেক্সেল) ধানমন্ডি, ডিআইএস ইংলিশ মিডিয়াম (কেমব্রিজ), উত্তরা রূপায়ণ সিটি, ডিআইএস (ইংলিশ ভার্সন) সোবহানবাগ, ডিআইএস (ইংলিশ ও বাংলা ভার্সন), চাঁদপুর ও বাবুরহাট, ডিআইএস ইংলিশ মিডিয়াম (ইংলিশ ও বাংলা ভার্সন), গাজীপুর। এ ছাড়া ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি স্কুল অ্যান্ড কলেজ নামেও আমাদের আরেকটি শাখা আশুলিয়াতে সুনামের সঙ্গে পরিচালিত হয়ে আসছে। ড্যাফোডিল ফ্যামিলির সম্মানিত চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খানের নিবিড় তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান নিশ্চিতকরণে প্রযুক্তিভিত্তিক অভিজ্ঞতা বাস্তবায়ন করা হয়ে থাকে।
মানসম্পন্ন শিক্ষার জন্য এ প্রতিষ্ঠান যে কারণে দেশের সেরা শিক্ষালয় হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে, তার মধ্যে এটির প্রতিপাদ্য বিষয়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করা। যেমন Value (মূল্যবোধ), Culture (সংস্কৃতি) ও Innovation (উদ্ভাবন)। মানবিক ও সামাজিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদেরকে যে শিক্ষা এখানে নিশ্চিত করা হয়, সেটি তাঁদের আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা, পারস্পরিক সম্প্রীতিবোধ, মানবিক আচরণ, চারিত্রিক গুণাগুণকে সমুন্নত করে। দেশি ও আন্তর্জাতিক সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এ স্কুল শিক্ষার্থীদেরকে একটি যুগোপযোগী মানবসত্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। প্রযুক্তিগত শিক্ষার সন্নিবেশিত ধারায় এ প্রতিষ্ঠানে সর্বাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগ ও বিকাশের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদেরকে উদ্ভাবনী শক্তিতে উজ্জীবিত করে। কারিকুলামভিত্তিক শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদেরকে বাস্তবমুখী নানাবিধ দক্ষতার বিকাশ লাভের সুযোগ দেওয়া হয়। অত্র প্রতিষ্ঠানে অভিযোজন (Adaptability) ক্ষমতা, নেতৃত্ব (Leadership) দক্ষতা, যোগাযোগ (Communication) দক্ষতা, সক্ষমতা (Capacity) তৈরি ও প্রযুক্তির (Technology) প্রয়োগ দক্ষতাসহ শিক্ষার্থীদের জন্য এখানে ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স, সোশ্যাল ইন্টেলিজেন্স ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সম্পর্কে জ্ঞানচর্চার মুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। ইনোভেটিভ ও ইনক্লুসিভ শিক্ষা বিস্তারে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের কার্যক্রম সত্যিই প্রশংসনীয়।
দৈনন্দিন শিক্ষাক্রমের বাইরে অতিরিক্ত শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষার্থীরা ক্লাবভিত্তিক অসংখ্য ইভেন্টে অংশগ্রহণ করে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নিজেদেরকে দক্ষ করে তোলার সুযোগ পেয়ে থাকেন। গতানুগতিক ক্লাব কার্যক্রমের বাইরেও এ প্রতিষ্ঠানে ক্লাইমেট চেঞ্জ ক্লাব, রোবোটিকস ক্লাব, কমিউনিটি সার্ভিস ক্লাব, টেকনোপ্রেনিউর ক্লাব, এন্ট্রাপ্রেনিউর ক্লাব, মাল্টি ল্যাংগুয়েজ ক্লাব ইত্যাদি এখানকার শিক্ষার্থীদেরকে যোগ্য মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সব শাখাতে প্রযুক্তিগত শিক্ষার বিষয়টি বিশেষভাবে প্রাধান্য পায়। শ্রেণিভিত্তিক কম্পিউটার শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মেধা মূল্যায়ন সাপেক্ষে কম্পিউটার শিক্ষা প্রদান করা হয়। আধুনিক প্রযুক্তিতে দক্ষ করতে মাই–ই-কিডস (My-e-Kids) নামে আরেকটি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদেরকে বয়সভেদে নানামুখী প্রোগ্রাম শেখানো হয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ই-টাইনি টট, যা প্রি–স্কুলের ছেলেমেয়েদের জন্য প্রযোজ্য। ই-টায়রো যেখানে প্রাথমিক স্তরের প্রথম শ্রেণি থেকে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা অংশগ্রহণ করতে পারে। ই-প্রাইম প্রাথমিক স্তরের চতুর্থ শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের জন্য প্রযোজ্য। এ ছাড়া কোডিং, রোবোটিকস, ই-ইন্টারমিডিয়ারি ও মাই ই-এক্সপার্ট প্রোগ্রামগুলো রয়েছে, যেখানে মিডলেভেল ও উচ্চতর লেভেলের ছাত্রছাত্রীরাও অংশগ্রহণ করতে পারেন।
স্টেম (STEAM) একটি যুগোপযোগী অত্যাধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাধারা। সায়েন্স বা বিজ্ঞান, টেকনোলজি বা প্রযুক্তি, ইঞ্জিনিয়ারিং বা প্রকৌশল, আর্টস (কলা) এবং ম্যাথমেটিকস বা গণিত—এই পাঁচ বিজ্ঞানবিষয়ক জ্ঞানের সমন্বয়ে স্টেম শিক্ষা সন্নিবেশিত। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে এই শিক্ষাধারা চালু আছে, যা বাংলাদেশে প্রথম ল্যাব হিসেবে স্বীকৃত। এই স্কুলের ছেলেমেয়েরা স্টেম ল্যাবের মাধ্যমে নানাবিধ বৈজ্ঞানিক কার্যক্রম সম্পন্ন করে থাকে। বিজ্ঞান গবেষণা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা পদার্থ, রসায়ন ও জীববিদ্যা, কম্পিউটার/আইসিটির পৃথক পৃথক ল্যাবে রুটিন মোতাবেক নিয়মিত গবেষণা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে থাকে। শ্রেণিকক্ষে অডিও ভিজ্যুয়াল পদ্ধতিতে পাঠদান আধুনিক প্রযুক্তির উন্নয়নে প্রতিষ্ঠানটি আরেক ধাপ অগ্রসরমাণ। পাঠ্যবিষয়ের ওপর ভিত্তি করে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকেরা অডিও-ভিডিও পদ্ধতিতে পাঠদান করে থাকেন।
আন্তর্জাতিক শিক্ষাক্রমে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলো দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছে। প্রতিবছর এখান থেকে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী ‘ও’ লেভেল এবং ‘এ’ লেভেল পাস করে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশের বিভিন্ন প্রসিদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করে থাকেন। কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ এখানকার ছাত্রছাত্রীরা কান্ট্রি হাইয়েস্ট ও ওয়ার্ল্ড হাইয়েস্ট নম্বর পেয়ে গৌরব অর্জন করে থাকেন। আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল বিদেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কোলাবোরেশনের মাধ্যমে এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম করে থাকে। তাদের মধ্যে কানাডায় লরেইট কলেজ, লন্ডনের অক্সফোর্ড কলেজ অব এডুকেশন, ইন্ডিয়ার অ্যাডামাস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, টেকনোইন্ডিয়া স্কুল, নেপালের শ্রী শিক্ষায়তন স্কুলগুলো অন্যতম। অনুরূপভাবে জাতীয় শিক্ষাক্রমে পরিচালিত ডিআইএসের সব ইংলিশ ও বাংলা ভার্সন শাখা থেকেও প্রতিবছর এসএসসি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের কৃতিত্বের স্বাক্ষর বাংলাদেশে শিক্ষার জগতে ঈর্ষণীয় সাফল্য বয়ে আনছে।
মোটকথা, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলটি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক (Inclusive) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যেখানে কারিকুলামভিত্তিক শিক্ষার পাশাপাশি ক্যারিয়ার ও তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষাধারা প্রবাহে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছে। এই স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের নিয়মিত পাঠগ্রহণ ও তাদের মেধা বিকাশধর্মী কর্মকাণ্ড তাদেরকে আরও উন্নত শিক্ষার পথকে গতিশীল করে। এককথায়, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল (ডিআইএস) প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য একটি আদর্শ রোল মডেল, যা তাদের পূর্ণাঙ্গ জীবন নিশ্চিত করতে সার্বিক উদ্যোগ গ্রহণ করতে বদ্ধপরিকর।