তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগ
পদত্যাগ করেছেন ঢাকা, শাহজালাল ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতজন হল প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগ।
পদত্যাগ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডিসহ ১৪ জন ও শাহজালালের ৩ কর্মকর্তার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) এবং কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) উপাচার্যরা পদত্যাগ করেছেন। গতকাল শনিবার তাঁদের পদত্যাগের কথা জানা গেছে। এদিন পদত্যাগ করেছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকও।
এদিকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতজন হল প্রাধ্যক্ষ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, নয়জন সহকারী প্রক্টর, তিনজন হল প্রাধ্যক্ষ ও ছাত্র উপদেষ্টা এবং শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন।
এর আগে গত কয়েক দিনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. নূরুল আলমসহ রেজিস্ট্রার, প্রক্টর ও একজন হল প্রাধ্যক্ষ; টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. ফরহাদ হোসেন, প্রক্টর, তিনজন হল প্রাধ্যক্ষ ও শিক্ষার্থী কল্যাণ পরামর্শ কেন্দ্রের উপপরিচালক; রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া, সহ-উপাচার্য অলোক কুমার পাল ও প্রক্টর; দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম কামরুজ্জামান, সহ-উপাচার্য মামুনুর রশিদ, ছাত্র উপদেষ্টা এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য মো. সুলতান-উল-ইসলাম পদত্যাগ করেছেন।
গতকাল বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মাকসুদ কামাল পদত্যাগের বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। মাকসুদ কামাল পদত্যাগপত্রে ‘ব্যক্তিগত কারণের’ কথা বলেছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। গত বছরের ৪ নভেম্বর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের আহ্বায়কের দায়িত্বেও ছিলেন।
গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতজন হল প্রাধ্যক্ষও পদত্যাগ করেছেন বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত একজন শিক্ষক নিশ্চিত করেছেন। তবে তাৎক্ষণিক ওই প্রাধ্যক্ষদের নাম নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
গতকাল শাবিপ্রবির উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের বিষয়টি জানান ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. ফজলুর রহমান। তিনি বলেন, ‘উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়টি জেনেছি। তবে দাপ্তরিক কোনো কাগজ আসেনি। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন, আসিফ ইকবাল ও মো. সাইফুল ইসলাম পদত্যাগ করেছেন।’
এর আগে গত বুধবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে পদত্যাগের সময়সীমা বেঁধে দেন। শিক্ষার্থীদের বেঁধে দেওয়া এক দিনের মধ্যে পদত্যাগ না করায় বৃহস্পতিবার উপাচার্যকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা। তাঁর কার্যালয়সহ প্রশাসনিক ভবনেও তালা দেওয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে দ্বিতীয় মেয়াদে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে ২০২১ সালের ৩০ জুন চার বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।
পদত্যাগ করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আবদুস সালাম, সহ-উপাচার্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া। গতকাল সন্ধ্যার দিকে প্রথম আলোকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন পদত্যাগী সহ-উপাচার্য মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, একই সঙ্গে উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষও পদত্যাগ করেছেন। তাঁরা তিনজনই গত বৃহস্পতিবার দুপুরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এই পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই তিন শীর্ষ কর্মকর্তা ই-মেইলের মাধ্যমে শিক্ষাসচিব বরাবর পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন। পত্রে তাঁরা ‘ব্যক্তিগত’ কারণ উল্লেখ করেছেন। এ প্রসঙ্গে মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘একান্ত ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করেছি।’
২০২০ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩তম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক শেখ আবদুস সালাম।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে পদত্যাগ করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি (১০ সদস্য), তিন প্রাধ্যক্ষ ও ছাত্রছাত্রী নির্দেশনা কেন্দ্রের পরিচালক (ছাত্র উপদেষ্টা)। গতকাল দুপুরে তাঁরা পদত্যাগ করেন। পদত্যাগ করা প্রাধ্যক্ষরা হলেন সোহরাওয়ার্দী হলের শেখ সাদী, এ এফ রহমান হলের আলী আরশাদ চৌধুরী ও আলাওল হলের সুজিত কুমার দত্ত। পদত্যাগকারী ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক আলী আজগর চৌধুরী।
এর আগে গত বুধবার রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সহ-উপাচার্য, প্রক্টরিয়াল বডি ও সব হলের প্রাধ্যক্ষদের পদত্যাগের দাবিতে সময় বেঁধে দিয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক মোহাম্মদ অহিদুল আলম বলেন, যেহেতু এখন ‘ল অ্যান্ড অর্ডার’ নেই, তাই তিনি সমন্বয়কের কাছে কিছুটা সময় চেয়েছিলেন; কিন্তু শিক্ষার্থীরা সেটি মানেননি। তাই তিনি পদত্যাগ করছেন।