চ্যাটজিপিটি কি পড়াশোনায় পরিবর্তন আনছে

চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করছেন এক ব্যক্তিছবি: ডয়েচে ভেলে

২০২২ সালের শেষের দিকে ওপেন এআই চ্যাটজিপিটি চালুর প্রথম সপ্তাহে ১০ লাখের মতো ব্যবহারকারী পেয়েছিল। এর পর থেকে বাড়ছে ব্যবহারকারী। নিত্যদিনের জীবনে এআই কী ধরনের প্রভাব তৈরি করতে পেরেছে, তা নিয়ে নানা আলোচনা আছে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনায় বা কাজের ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন আনতে পেরেছে কি না, আজ জানব তা।

চ্যাটজিপিটি নানা রকম ভার্চ্যুয়াল চরিত্র তৈরি সহজ করেছে। তবে এর ফলে পড়াশোনার নাটকীয় পরিবর্তন আসেনি। অন্তত জার্মানির হামবুর্গের একটি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এমনটাই জানান। একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী টোবিয়াস বলেন, ‘আমি এটি গবেষণার কাজে ব্যবহার করি। একটি বিষয় সম্পর্কে বোঝার চেষ্টা করি। আর এভাবে আমি একটি কাজ ভালোভাবে শেষ করার জন্য প্রস্তুতি নিই। আমি গবেষণার কাজে গুগলের বদলে চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করি কোনো একটি বিষয় বুঝতে।’

আরও পড়ুন

নবম শ্রেণির এলিয়েশা বলে, ‘আসলে চ্যাটজিপিটি মাঝেমধ্যে অদ্ভুতভাবে লেখে। তাই আমি আমার নিজের বিষয় সম্পর্কে সাধারণত সার্চ ইঞ্জিনে খুঁজি।’ একই শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী ইওশা বলে, ‘আমি আমার কাজের দায় নিতে চাই। আমি এটিকে আমার নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাই। ফলে এটি আমার জন্য প্রাসঙ্গিক নয়।’

চ্যাটজিপিটি চালু হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা সেটি বিদ্যালয়ে, হোমওয়ার্ক তৈরিতে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা আসলে কী করতে পারে, তা জিজ্ঞাসার মাধ্যমে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কোথায় সহায়তা করতে পারে, তা শনাক্তের মাধ্যমে শিক্ষকেরা বিষয়টি বুঝে ফেলেন।

গবেষণা খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যেমন সহায়তা করতে পারে, তেমনই অনেক বিপদেরও কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে
ছবি: ডয়েচে ভেলে

হামবুর্গের ভাল্ডডর্ফার গিমনাজিউমের প্রধান শিক্ষক ইয়র্গেন সলফ বলেন, ‘এটিকে নতুন কিছু হিসেবে বিবেচনার সেই আবেদন আর নেই। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজের অংশ হিসেবে বোধগম্যভাবে ব্যবহার করতে শিক্ষার্থীদের শেখাতে হবে। তাঁদের কাজের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে, সেটা করার টুলের ওপর নয়। কারণ, আমরা সবাই স্বচ্ছন্দ ব্যবস্থা পছন্দ করি। ফলাফল দ্রুত পাওয়াটা অনেকের কাছে আকর্ষণীয় ব্যাপার। কিন্তু এটা আমাদের জন্য সহায়ক নয়।’

একটি বিষয় সম্পর্কে দ্রুত সামগ্রিক ধারণা পেতে, নতুন রন্ধনপ্রণালি কিংবা রূপকথার গল্পের আবদার, টেক্সট টুলটি মোটামুটি সব চাহিদারই জবাব দেয়। কিন্তু এটা কি বুদ্ধিমত্তা? এ প্রশ্ন আমাদের ভাবায়।

আরও পড়ুন

জার্মান ইথিক্স কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক ইউডিথ সিমন বলেন, ‘এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিষয়টিকে সামনের সারিতে নিয়ে এসেছে। কারণ, যদিও অনেক মানুষ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করছেন, তাঁরা এটিকে সেই হিসেবে দেখছেন না। আপনার ফোন আনলক করা, সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করা, সুপারিশ খোঁজা—এগুলোও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। কিন্তু এগুলো চ্যাটবটের মতো প্রতিক্রিয়া জানায় না বলে সেগুলো ভাবছে, এমনটা মনে হয় না।’

আরও পড়ুন

বর্তমানে সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি হচ্ছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কী কী করতে অনুমতি দেওয়া উচিত? চ্যাটজিপিটি পর্নো, এমন ধরনের কনটেন্ট, যা সহিংসতাকে উসকে দেয়; ভুয়া খবর, ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরির অপপ্রচার করতে পারে। নৈতিক ফিল্টার এসবের কিছুটা শনাক্ত ও বাতিল করতে পারে। কিন্তু আমাদের মতো অনেকের পক্ষে এসব বোঝা সম্ভব নয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এত দ্রুত বিকাশ তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অনেককেও উদ্বিগ্ন করে তুলছে। এই বিকাশের সঙ্গে মহামারি ও পারমাণবিক যুদ্ধেরও তুলনা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন

হামবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হেনেস ফেডেরাথ বলেন, ‘আপনি যখন দেখবেন যে ড্রোনের মতো যন্ত্রকে প্রশিক্ষণ দিতে এটা ব্যবহার করা যায় এবং এরপর সেগুলো নিজেরাই নিজেদের লক্ষ্য খুঁজতে অনুমতিপ্রাপ্ত, তখন বিষয়টি আমাকে সত্যিই উদ্বিগ্ন করে। এ বিষয়েও আমাদের আন্তর্জাতিক সমঝোতা প্রয়োজন।’

আরও পড়ুন