শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা দাবি আদায়ে পালন করছেন কর্মবিরতি
ক্যাডার বৈষম্য ও পদোন্নতিসংক্রান্ত সমস্যা সমাধানসহ বিভিন্ন দাবিতে ‘সর্বাত্মক কর্মবিরতি’ পালন করছেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির ডাকে আজ সোমবার দেশের সব সরকারি কলেজ, টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, আলিয়া মাদ্রাসা, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি), শিক্ষা বোর্ডসহ শিক্ষাসংশ্লিষ্ট দপ্তরে এই কর্মবিরতি পালিত হচ্ছে।
এর ফলে এসব দপ্তর ও কলেজগুলোয় নিয়মিত কাজ হচ্ছে না। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির নেতারা ঘোষণা দিয়েছেন, দাবি পূরণ না হলে ১০, ১১ ও ১২ অক্টোবরও সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করা হবে।
শিক্ষা ভবন হিসেবে পরিচিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মূল সংস্থা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে (মাউশি) আজ দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, একদল কর্মকর্তা নিজ দপ্তর ছেড়ে ভবনের মূল ফটকের সামনে ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে অবস্থান করছেন। ভেতরে গিয়ে দেখা যায় কোনো কোনো কক্ষে একাধিক কর্মকর্তা অবস্থান করছেন।
নওঁগা থেকে শিক্ষা ভবনে এসেছিলেন কয়েকজন ব্যক্তি। সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় জানতে চাইলে তাঁরা জানালেন আজ কোনো কাজ হচ্ছে না।
আন্দোলনকারী বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সভাপতি হলেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) শাহেদুল খবীর চৌধুরী। তাঁর কক্ষে গিয়ে দেখা গেল শিক্ষা ক্যাডারের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা বসে আছেন। তাঁদের মধ্যে সমিতির মহাসচিব মো. শওকত হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব বিপুল চন্দ্র সরকার, দপ্তর সম্পাদক মুহাম্মদ মনিরুল আলমসহ আরও কয়েকজন নেতা ছিলেন।
জানতে চাইলে শাহেদুল খবীর চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেছেন, সারা দেশেই এ কর্মবিরতি চলছে। যদি ঘোষিত সময়ের মধ্যে দাবি আদায় না হয়, তাহলে পরবর্তী সময় আরও কর্মসূচি দেওয়া হবে। তাঁর অভিযোগ, শিক্ষা ক্যাডারের অস্তস্তি আজ বিপন্ন হওয়ার পথে। যথাযথ কতর্পক্ষকেও এসব সমস্যা জানানো হয়েছে।
শিক্ষকসংকটের কথা বলতে গিয়ে শাহেদুল খবীর চৌধুরী বলেন, মানসম্মত শিক্ষা চাওয়া হচ্ছে, কিন্তু শ্রেণিকক্ষে পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। তাঁর অভিযোগ, শিক্ষকের এ অভাব দীর্ঘ বছর ধরে লালন করা হচ্ছে, যাতে এ অভাব থেকে যায়। দাবি আদায়ে ধাপে ধাপে এ কর্মসূচি চলবে বলে জানান তিনি।
এর আগে গত শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে দাবি তুলে ধরার পাশাপাশি কর্মসূচি ঘোষণা করে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি।
সেদিনের সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, পদোন্নতি বৈষম্য কমাতে সব ক্যাডারে সুপারনিউমারারি (সংখ্যার চেয়ে অতিরিক্ত) পদ সৃষ্টি করে পদোন্নতি দেওয়া, অধ্যাপকদের বেতন গ্রেড তৃতীয় ধাপে উন্নীত করা ও অর্জিত ছুটির সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা থাকলেও তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। শিক্ষা ক্যাডারের তফসিলভুক্ত পদ ‘দখলের মানসে’ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর ও সরকারি আলিয়া মাদ্রাসার জন্য পৃথক নিয়োগ বিধিমালা করা হয়েছে, যা ‘বিসিএস সাধারণ শিক্ষা কম্পোজিশন অ্যান্ড ক্যাডার বিধিমালার পরিপন্থী’। অবিলম্বে এ বিধিমালা বাতিল ও শিক্ষা ক্যাডারের তফসিলভুক্ত পদ থেকে শিক্ষা ক্যাডারের বাইরের কর্মকর্তাদের দ্রুত সরাতে হবে।
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির অভিযোগ, পদোন্নতিতে সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় রয়েছে শিক্ষা ক্যাডার। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও এ মুহূর্তে পদোন্নতির অপেক্ষায় আছেন সাত হাজার কর্মকর্তা। সময়মতো পদোন্নতি না হওয়ায় অনেকে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবেই অবসরে যাচ্ছেন। গত ২৭ সেপ্টেম্বর সহযোগী অধ্যাপক পদে ৬৯০ জনের পদোন্নতি হয়েছে, অথচ এই পদে ৩ হাজারের মতো কর্মকর্তা পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্য।
সংবাদ সম্মেলনে সমিতির নেতারা আরও বলেছিলেন, শিক্ষা ক্যাডারের বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের জন্য তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করে আসছেন। কিন্তু সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।