কানাডায় ফল সেশনে পড়তে আসার প্রস্তুতি, গাড়ি চালানো: পর্ব-৩
কানাডায় ফল সেশনে পড়তে আসার প্রস্তুতির ধারাবাহিকতায় আজ ছাপা হচ্ছে গাড়ি চালানো নিয়ে। কানাডায় লম্বা সময় থাকতে হলে গাড়ি থাকা প্রয়োজন। শুধু গাড়ি থাকলে কানাডায় চালক রেখে তা চালানোর সুযোগ নেই; সে ক্ষেত্রে নিজের গাড়ি নিজে চালাতে হবে। কানাডায় গাড়ি কেনা কোনো বিলাসিতা নয়, এটি প্রয়োজন। তীব্র ঠান্ডার দেশ কানাডা।
গাড়ি না থাকলে আপনাকে গণপরিবহন ব্যবহার করতে হবে। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে এ গণপরিবহন খুব সময়সাপেক্ষ। দেখা যায়, এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে দু–তিনবারও বাস বদল করতে হয়। অনেক সময় বাসের জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়।
একটি পুরোনো গাড়ির দাম কোভিড-১৯ ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের আগে তিন চার থেকে হাজার ডলার ছিল, এখন তা বেড়ে পাঁচ থেকে ছয় হাজার ডলার হয়েছে। তবে এই পাঁচ থেকে ছয় হাজার ডলার খরচ আপনার জীবনকে সহজ করে দেবে, সেই সঙ্গে আয়ের পথও খুলে দেবে।
এ বাসের জন্য অপেক্ষা আপনার জীবনকে স্থবির করে দেবে। এখানে এসে প্রায় সবাই পড়াশোনার পাশাপাশি খণ্ডকালীন চাকরি করে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আপনাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস করতে হবে, চাকরি করতে হবে, রান্নাবান্না করতে হবে। ফলে আপনি কোনো জায়গায় আসা-যাওয়া করতে যদি লম্বা সময় নেন, তাহলে কোনো কাজই শেষ করতে পারবেন না। নিজের গাড়ি আপনার অনেক সময় বাঁচিয়ে দেবে।
তা ছাড়া একটি গাড়ি থাকলে আপনার আয়ের পথও খুলে যাবে। নিজের গাড়ি থাকলে করতে পারবেন ফুড ডেলিভারিসহ বিভিন্ন ডেলিভারির কাজ। যে কাজগুলো থেকে মোটামুটি ভালো আয় করতে পারবেন।
কানাডায় পড়তে আসা বিদেশি শিক্ষার্থীরা ১৮ বছর হলেই গাড়ি চালানোর যোগ্য, তবে তার জন্য পরীক্ষা দিয়ে পাস করতে হয়। কানাডার ১০টি প্রদেশে এই পরীক্ষার আলাদা-আলাদা নিয়ম। অর্থাৎ লাইসেন্স ইস্যু করে প্রাদেশিক সরকার। তবে একটি নিয়ম সব প্রদেশেই আছে, তা হলো আপনাকে কমপক্ষে দুটি পরীক্ষা দিতে হবে। প্রথমটি এমসিকিউ (নলেজ টেস্ট)। সেটি পাস করলে ফিল্ড টেস্ট। ফিল্ড টেস্ট পাস করলে আপনি গাড়ি চালানোর জন্য যোগ্য হবেন।
ফিল্ড টেস্ট অনেকের কাছে কঠিন মনে হয়। যিনি আপনার পরীক্ষা নেবেন, তিনি আপনাকে চালকের আসনে বসিয়ে প্রায় আধা ঘণ্টা বিভিন্ন রাস্তায় ঘুরবেন। রাস্তায় গাড়ি চালাতে আপনি নিয়ম মানছেন কি না, তা দেখবেন এবং আপনার কনফিডেন্স লেভেল যদি ঠিক থাকে, তাহলে পরীক্ষায় পাস করবেন।
কেউ কেউ ফিল্ড টেস্টে সাত থেকে আটবারও ফেল করেন। আপনি যদি নিয়ম মেনে গাড়ি চালান, তাহলে একবারেই পাস করা সম্ভব। নলেজ টেস্টের যাবতীয় তথ্য অনলাইনে পাওয়া যায়। কানাডায় আসার আগেই যে প্রদেশ আসবেন, সেই প্রদেশের সরকারি ওয়েবসাইটে গিয়ে এ সম্বন্ধে একটি ধারণা নিয়ে আসবেন।
ড্রাইভিং ফিল্ড টেস্ট দেওয়ার আগে কয়েকটি লেসন নিতে হবে ট্রেইনারদের কাছ থেকে। কানাডার প্রায় সব বড় শহরে বাংলাদেশি ট্রেইনার পাবেন। তাঁদের কাছ থেকে লেসন নেওয়া ভালো। কারণ, প্রাথমিক অবস্থায় তাঁদের সঙ্গে কমিউনিকেশনে সুবিধা হবে। পরীক্ষা দেওয়ার সময় ট্রেইনাররা গাড়ি দিয়ে থাকেন পরীক্ষার জন্য।
একটি লাইসেন্সের পরীক্ষা দিতে সরকারি ফি বাবদ খরচ হয় গড়ে ৫০ ডলার। অন্যদিকে, যাঁরা আপনাকে গাড়ি চালানো শেখাবেন, তাঁরা প্রতি ঘণ্টার জন্য ৫০ থেকে ৬০ ডলার নিয়ে থাকেন। ড্রাইভিং শেখা ও লাইসেন্স পাওয়া বাবদ প্রায় এক হাজার ডলার খরচ ধরে রাখবেন।
ইন্টারন্যাশনাল বা বাংলাদেশের লাইসেন্স থাকলেও আপনি সেই লাইসেন্স দিয়ে কানাডায় সারা জীবন গাড়ি চালাতে পারবেন না। তবে কয়েকটি প্রদেশে নলেজ টেস্ট পাস করার পর কানাডায় ল্যান্ডিং ডেট থেকে তিন মাস পর্যন্ত গাড়ি চালাতে পারবেন। এর মধ্যে ফিল্ড টেস্টে পাস করতে হবে। তা না হলে ওই ইন্টারন্যাশনাল বা বাংলাদেশের লাইসেন্স কোনো কাজে আসবে না।
নলেজ টেস্টে পাস করার পর ড্রাইভিং ইন্সপেক্টর ছাড়া যাঁদের লাইসেন্স তিন বছরের পুরোনো, তাঁদের পাশে রেখে গাড়ি চালাতে পারবেন। তবে প্রদেশভেদে নিয়মের ভিন্নতা থাকতে পারে। কোনো অবস্থাতেই নিয়মের বাইরে গিয়ে লাইসেন্স ছাড়া একা গাড়ি চালাতে যাবেন না। কোনো দুর্ঘটনা ঘটিয়ে যদি পুলিশের কাছে ধরা পড়েন, তাহলে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা থাকবে। এটা কানাডায় একটি ক্রিমিনাল অফেন্স। যার ফলে ভিসা বাতিলসহ কানাডায় পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হতে পারেন।
একটি পুরোনো গাড়ির দাম কোভিড-১৯ ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের আগে তিন চার থেকে হাজার ডলার ছিল, এখন তা বেড়ে পাঁচ থেকে ছয় হাজার ডলার হয়েছে। তবে এই পাঁচ থেকে ছয় হাজার ডলার খরচ আপনার জীবনকে সহজ করে দেবে, সেই সঙ্গে আয়ের পথও খুলে দেবে।
কানাডায় অনেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সড়ক দুর্ঘটনায় পড়েন। সব সময় মনে রাখবেন, গাড়ি চালানোর সব নিয়মকানুন মেনে চললে দুর্ঘটনার আশঙ্কা অনেক কম।
এ ফল সেশনে আপনার কানাডায় আগমন শুভ হোক এবং নিরাপদ হোক আপনার আগামীর ড্রাইভিং। চলবে...