তীব্র শীতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি নিয়ে একদিনে তিন বিজ্ঞপ্তি, সবশেষে যা জানাল মাউশি
তীব্র শীতে স্কুলে ছুটি দেওয়া নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) চার ঘণ্টার মধ্যে তিন রকম নির্দেশনা দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে প্রথম নির্দেশনাটি দেওয়া হয়। সর্বশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয় রাত সাড়ে আটটার পর।
মাউশি তাদের সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, দিনের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার নিচে নামলে স্কুল বন্ধ রাখা যাবে। মাউশির আঞ্চলিক উপপরিচালকেরা সংশ্লিষ্ট জেলার শিক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে স্কুল ছুটির বিষয়ে নির্দেশ দেবেন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে তীব্র শীত পড়লে বন্ধ রাখা যাবে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো।
দেশের বিভিন্ন জেলায় তীব্র শীতের কারণে জনজীবন ব্যাহত হওয়ার মধ্যে মাউশির এই নির্দেশনা এল। আবহাওয়া অধিদপ্তর গতকাল সন্ধ্যায় পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানিয়েছে, বুধবার সারা দেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও দিনে ঠান্ডা পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে।
পূর্বাভাসে বলা হয়, বৃহস্পতিবারও তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে পারে। শুক্রবার ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টি হতে পারে। অবশ্য আবহাওয়াবিদেরা জানিয়েছেন, বৃষ্টির পর আবার শীত বাড়তে পারে। জানুয়ারি মাসের বাকি দিনগুলোতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় তীব্র শীত থাকবে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাউশির একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা বোঝাতে চেয়েছিলেন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হবে।
দিনের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে সংশ্লিষ্ট জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ থাকবে।
তাঁরা বোঝাতে চেয়েছিলেন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হবেনাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাউশির একজন কর্মকর্তা
একদিনে তিন রকম নির্দেশনা
তীব্র শীতে স্কুল বন্ধ নিয়ে মাউশির প্রথম নির্দেশনায় বলা হয়, যেসব জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামবে, সেসব জেলার মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখা হবে।
ঘণ্টাখানেক পরেই মাউশি নির্দেশনাটি সংশোধন করে। সেখানে স্কুল ছুটির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির কথা বলা হয়। এই নির্দেশনা নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। কারণ, আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে দেশে গত চার দশকের বেশি সময়ে এক দিনও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামেনি।
বিষয়টি নিয়ে রাত সাড়ে আটটার দিকে দ্বিতীয় দফা সংশোধনী দেয় মাউশি। এতে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কথাটি বাদ দেওয়া হয়। বলা হয়, দিনের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার নিচে নামলে আলোচনার মাধ্যমে স্কুল বন্ধ রাখা যাবে।
সর্বশেষ সংশোধিত নির্দেশনায় মাউশি বলেছে, দেশের বিভিন্ন জেলায় তীব্র শৈত্যপ্রবাহ প্রবাহিত হচ্ছে। চলমান এই শৈত্যপ্রবাহে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে। দিনের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে না ওঠা পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাউশির একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা বোঝাতে চেয়েছিলেন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হবে।
মাউশির নির্দেশনায় ভুলও রয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, মাউশি বলেছে দেশে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, এটা ঠিক নয়। দেশের কয়েকটি জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে, তীব্র নয়। শৈত্যপ্রবাহের ধরন চারটি—মৃদু, মাঝারি, তীব্র ও অতি তীব্র।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মাউশি নির্দেশনা দেওয়ার আগে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সঙ্গে একটু কথা বলে নিলেই পারত।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংস্থা মাউশির অধীনে দেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালিত হয়। আর প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন।
মাউশি স্কুল ছুটির বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়ার পরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় একই ধরনের একটি নির্দেশনা দেয়। সেখানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে ছুটির কথা বলা হয়। মাউশি সংশোধনী দিয়ে এ–বিষয়ক বিভ্রান্তি দূর করলেও প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় করেনি (রাত সাড়ে ৯টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত)।
অবশ্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান রাতে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের সিদ্ধান্ত মাউশির মতোই। দিনের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে সংশ্লিষ্ট জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ থাকবে।