জার্মানি কেন বিদেশি শিক্ষার্থীদের এত পছন্দ
বিদেশিদের জন্য জার্মানির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ধীরে ধীরে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। শেনজেনভুক্ত (শেনজেন অঞ্চল বা শেনজেন এলাকা ২৭টি ইউরোপীয় দেশ নিয়ে গঠিত) দেশগুলোর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চার লাখের বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী পড়ছেন। আর একই সময়ে ২০২১–২২ শিক্ষাবর্ষে জার্মানির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ৪ লাখ ৪০ হাজার ৫৬৪ জন বিদেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেছেন। ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল, ৫ বছরে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৩০ দশমিক ৯ শতাংশ এবং ২০১৪ থেকে ২০২২, এ ৮ বছরে শিক্ষার্থী বেড়ে ৩৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এসব পরিসংখ্যান ও তথ্যের পরে মনে হতে পারে বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রিয় গন্তব্য কেন জার্মানি বা বিদেশি শিক্ষার্থীরা শিক্ষার জন্য কেন জার্মানিকে বেছে নিচ্ছেন? গণমাধ্যম ইকোনমিক টাইমসের খবরে সেটি তুলে ধরা হয়েছে।
জার্মানির একাডেমিক এক্সচেঞ্জ সার্ভিস (ডিএএডি) ও বিনথো স্টাডি জার্মান ও বিদেশের ১ লাখ ২০ হাজার শিক্ষার্থীর ওপর একটি সমীক্ষা চালিয়েছে। বিনথো স্টাডি হলো বিদেশে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করা জার্মানির একটি সংস্থা। এ সমীক্ষা অনুসারে শিক্ষার জন্য বিদেশি শিক্ষার্থীদের তিন-চতুর্থাংশের (৭৬ শতাংশ) কাছে প্রথম পছন্দের দেশ জার্মানি।
ডিএএডির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক জয়ব্রত মুখার্জি বলেন, বর্তমানের এক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, উচ্চশিক্ষা বা পড়াশোনার জন্য বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাছে জার্মানি অনেক এগিয়ে অন্য দেশের চেয়ে। জার্মানিতে পড়াশোনার পাশাপাশি কাজের সুযোগও রয়েছে। এর ফলে বিদেশি শিক্ষার্থীরা জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়তে পেরে বেশ সন্তুষ্ট।
বিদেশি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর এ সমীক্ষা করা হয়েছে। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কোর্স কনটেন্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রে ৫৮ শতাংশ শিক্ষার্থী, উচ্চশিক্ষায় সুনাম আছে এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৫৩ শতাংশ শিক্ষার্থী, টিউশন ফির ক্ষেত্রে ৫২ শতাংশ শিক্ষার্থী, ইংরেজি ভাষায় শিক্ষা কারিকুলাম থাকার কারণে ৪৮ শতাংশ শিক্ষার্থীর পছন্দের দেশ জার্মানি। স্নাতকোত্তর ও স্নাতক পর্যায়ের কারণে ৬২ শতাংশ এবং ৩২ শতাংশ শিক্ষার্থী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন।
জার্মানিতে পড়তে যাওয়ার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কোর্সগুলো সুবিন্যস্ত ও শিক্ষার পরিবেশ (৯১ শতাংশ শিক্ষার্থী), বিশ্বে জার্মান ডিগ্রির সুনাম (৮৮ শতাংশ শিক্ষার্থী) এবং স্নাতক শেষে ভালো ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ (৮১ শতাংশ শিক্ষার্থী)। জার্মানিতে পড়ুয়া বিদেশে শিক্ষার্থীদের অর্ধেকই পড়তে যান ইংরেজি ডিগ্রির কারণে। তবে জার্মান ভাষায়ও বিদেশি শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ পড়াশোনা করে।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, স্নাতক শেষে ৬০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী জার্মানিতে থেকে যেতে চান। জার্মান সরকার ২০১৪ সালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিদেশিদের জন্য টিউশন ফি তুলে নেয়। এতে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা একলাফে ৩ লাখ ১ হাজার ৩৫০ থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৪ লাখ ৪০ হাজার ৫৬৪ জনে।
বিদেশিদের মধ্যে ৫৬ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী নিজেদের পছন্দের জার্মানির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান।
উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাছাইয়ের ক্ষেত্রে তথ্যপ্রাপ্তির উৎস হিসেবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়েবসাইট থেকে ৭৬ শতাংশ, র্যাঙ্কিং ও মূল্যায়নবিষয়ক পোর্টালগুলো থেকে ৪০ শতাংশ, ডিএএডি থেকে ৩৬ শতাংশ, বন্ধু ও পরিবারের যারা ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়েছেন বা বর্তমানে পড়ছেন, তাদের কাছ থেকে ৩৪ শতাংশ ক্ষেত্রে শিক্ষাসংক্রান্ত তথ্য মেলে।
ভালোর পাশাপাশি নেতিবাচক কিছু দিকও আছে। আবাসন একটি বড় সমস্যা। বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রায় ৬০ শতাংশ বাসস্থান খুঁজতে গিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন। জার্মানির বার্লিন, ডার্মস্ট্যাড, ইরল্যানজেন–নুরেমবার্গ, ফ্রাঙ্কফুর্ট, গুটেনজেন, হামবুর্গ, হ্যানোভার, হেইডেলবার্গ, কোলন, মেইঞ্জ ও মিউনিখ শহরের ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে থাকার জন্য আবেদন করে অপেক্ষায় আছেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে তাঁরা আবাসিকে থাকার জন্য এ আবেদন করেন।
দেশটির শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন ডিএসডব্লিউয়ের মহাসচিব ম্যাথিয়াস আনবুল বলেন, উইন্টার সেমিস্টারের শুরুতে শিক্ষার্থীরা বাসস্থানের সংকট থাকেন। এ সমস্যা শিক্ষার্থীদের প্রথম সেমিস্টারের শুরুতে জটিলতা তৈরি করে। বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন শহরগুলোতে যাঁরা থাকতে চান, করোনার পরের চার সেমিস্টারে এ সমস্যা তাঁদের জন্য আরও জটিল হয়।