নেদারল্যান্ডসে ক্লাসে মুঠোফোন নিষিদ্ধ, যে যে সুফল পাচ্ছে দেশটি
নেদারল্যান্ডসের বেশ কয়েকটি স্কুলের ক্লাসরুমে মুঠোফোন নিষিদ্ধ। দেশটি বলছে, শিক্ষার্থীদের মনোযোগ বাড়ানো, খেলাধুলায় আগ্রহ তৈরি ও নিজেদের মধ্যে সরাসরি কথা বলায় উৎসাহ বাড়াতেই এমন উদ্যোগ।
নেদারল্যান্ডসের অনেক স্কুলের ক্লাসরুমে মুঠোফোন নিষিদ্ধের নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের দায়িত্ব স্কুল কর্তৃপক্ষের। এতে স্কুলের শিক্ষার্থীদের কিছু সময়ের জন্য মুঠোফোন থেকে দূরে থাকতে হবে।
সকাল আটটা। দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জার্মান ক্লাস নেন থমাস পেটার। তাঁর ক্লাসে মুঠোফোন নিষিদ্ধ। ক্লাস শুরুর আগে তাই মুঠোফোনটি লকারে বা বাসায় রেখে আসতে হয়।
তিয়াস শোলটেন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আগে ক্লাস চলাকালে কখনো কখনো ফোন বাজত এবং আমি বিষয়টিকে নির্বুদ্ধিতা মনে করতাম।’ শিক্ষার্থী সাইনা জোরিৎসমা বলেন, ‘এটা প্রয়োজনীয় কি না, জানি না। আমার উন্নতি হয়েছে, তবে এটা আমার চেষ্টার নাকি মুঠোফোন নিষিদ্ধের ফল, তা বুঝতে পারছি না।’
কারও কাছে মুঠোফোন পাওয়া গেলে তা নিয়ে নেওয়া হয়। বিকেল পাঁচটার আগে সেটি ফেরত পাওয়া যাবে না। যেদিন ক্লাস আগেই শেষ হয়ে যায়, সেদিন ব্যাপারটি বেশ বিড়ম্বনার। জোরিৎসমা বলেন, ‘আমার মুঠোফোনটি এখনো জব্দ হয়নি। কারণ, আমি যথেষ্ট সচেতন। আমি শুধু আমার মুঠোফোনের জন্য পাঁচটা অবধি অপেক্ষা করতে চাই না।’
শিক্ষক থমাস পেটার বলেন, ‘গত ছয় মাসের অভিজ্ঞতায় আমি বলতে পারি, শিক্ষার্থীরা আগের চেয়ে ক্লাসে বেশি মনোযোগী হয়েছে।’
পেটারের সঙ্গে প্রধান শিক্ষক ফ্রিক ওপট এইন্ডেও একমত প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ক্লাস আগের চেয়ে অনেক শান্ত এবং তর্কও কম হয়। মুঠোফোন এক নিয়মিত সমস্যা ছিল। সবাই সেটি লকারে রেখে আসে না। তাই দরজায় দাঁড়িয়ে তল্লাশি চালিয়ে বলতে হয়, এটা দূরে রেখে আসো। অনেকে এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করতে চায় এবং নানা যুক্তি দেয়। আর তাতে ক্লাসের আট মিনিট নষ্ট হয়।
আমস্টারডামের সিগনাস গিমনাজিউম হচ্ছে নেদারল্যান্ডসের শুরুর দিকের স্কুলগুলোর একটি, যেখানে মুঠোফোন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ডাচ সরকার স্কুলে মুঠোফোন বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছিল, তবে স্কুলগুলো তা মানতে আইনত বাধ্য নয়।
স্পেন ও ব্রিটেনে পরিচালিত গবেষণা বলছে, মুঠোফোন নিষেধাজ্ঞা ক্লাসরুমে মনোযোগ বাড়ায়। এটা দুর্বল শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে প্রযোজ্য বলে মনে করেন মুঠোফোন নিষেধাজ্ঞার নীতিমালা তৈরিতে সহায়তাকারী শ্যেপ ফন ডেয়ার প্লুখ। তিনি বলেন, ‘টিকটক ও স্ন্যাপচ্যাটের মতো সেলফোন অ্যাপগুলো ব্যবহারকারীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য তৈরি হয়েছে। এ শিল্পে মনোযোগই সব। এর অর্থ হচ্ছে বড় টেক ফার্ম ও তাদের অঢেল সম্পদের বিপরীতে একজন শিক্ষক। সবকিছু মনোযোগ আকর্ষণের জন্য এবং তা ধরে রাখতে অত্যন্ত বুদ্ধি খাটিয়ে তৈরি করা। ফলে এটা অসম যুদ্ধ।’
তবে বিষয়টি শুধু মনোযোগ বিঘ্নের নয়, এর সামাজিক দিকও রয়েছে। শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা ও সরাসরি কথা বলায় উৎসাহী করা হয়। তাই নিষেধাজ্ঞা বিরতির সময়ও বলবৎ থাকে।
শিক্ষার্থী লিজা মারসেন বলেন, ‘মুঠোফোন ব্যবহার না করে অন্যদের সঙ্গে মানিয়ে চলতে শেখাটা রসবোধপূর্ণ ব্যাপার। কারণ, এখন এআই, চ্যাটজিপিটি ইত্যাদির সহায়তায় সবকিছুই অনলাইনে চলে গেছে। তাই আমাদের অন্যদের সঙ্গে মিশতে শিখতে হবে। এ জন্য মুঠোফোনের পেছনে কম সময় দিলে ভালো। তবে সবাই নিয়ম মানে না। আজ দুপুরের আগে পাঁচটি মুঠোফোন জব্দ করা হয়েছে। দারোয়ান ইওহান ব্যুনের তত্ত্বাবধানে আছে সেগুলো।’ তিনি বলেন, ‘এটার কারণে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ বেশি হয় এবং এটা চমৎকার ব্যাপার। তবে এটা এক লুকোচুরির খেলাও।’
যাদের মুঠোফোন জব্দ করা হয়েছে, তাদের দুপুরটা অনেক দীর্ঘ হবে। অন্যরা ক্লাস শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মুঠোফোন ফেরত পাবে।