অস্ট্রেলিয়ায় শিশুদের পড়াশোনা, আসার আগেই যা জানা জরুরি
বর্তমানে অনেকেই উচ্চতর পড়াশোনা বা চাকরির প্রয়োজনে পরিবারসহ দেশের বাইরে পাড়ি জমাচ্ছেন। আর বিদেশমুখীদের অনেকের অন্যতম গন্তব্য অস্ট্রেলিয়া। দেশটির তিন ভাগের এক ভাগ মানুষই বাইরে থেকে আসা। পরিবারসহ যাঁরা অস্ট্রেলিয়ায় আসেন, তাঁরা অন্যান্য চিন্তার পাশাপাশি সন্তানের শিক্ষা নিয়ে চিন্তিত থাকেন। অভিজ্ঞতার আলোকে শিশুদের শিক্ষাব্যবস্থাপনা নিয়ে কিছু বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
অস্ট্রেলিয়ায় শিশুদের বয়সের হিসাবে ৩০ জুন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সন্তানের জন্মতারিখ ৩০ জুনের মধ্যে না হলে ছয় মাস অপেক্ষা করতে হয়। সন্তানের বয়স চার বছরের কম হলে ডে-কেয়ারে দেওয়ার পরিকল্পনা রাখতে হয়। সে ক্ষেত্রে সিটিজেন না হলে খরচে বিপত্তি বাধে বেশির ভাগ মানুষের। ডে-কেয়ারে দিতে পারলে আপনার শিশু সহজে ইংরেজি ভাষা, বন্ধুত্ব, এখানকার সংস্কৃতির সঙ্গে সহজে খাপ খাওয়াতে পারবে। এখানকার ডে-কেয়ারগুলো শিশুদের স্বাবলম্বী হতে শেখায়। তা ছাড়া যেহেতু অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসকারী শিশুরা ছোটবেলা থেকে স্বাবলম্বী হতে শেখে, ওদের দেখে আপনার সন্তানও সে চেষ্টা করবে। তা ছাড়া এখানকার ডে-কেয়ারগুলো শিশুর নিরাপত্তাসহ সব বিষয়ে খুবই গুরুত্ব দেয়। ডে-কেয়ারগুলো সাধারণত সকাল আটটা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত চলে। বেশির ভাগ ডে-কেয়ারে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কয়েকবার খাবার, ঘুম, আর্ট, গল্প শোনা, খেলাধুলা ইত্যাদির রুটিন করা থাকে। সে অনুযায়ী রুটিনমাফিক অভ্যস্ত হতে থাকে শিশুরা। এমনকি ঘুমানোর সময় ভাগ করে সে সময় রুম কিছুটা অন্ধকার করে হালকা মিউজিক ছেড়ে দেওয়া হয়, যাতে শিশুরা ঘুমানোর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ পায়। ডে-কেয়ারে শিশুকে দেওয়ার জন্য স্টেট অনুসারে খরচের পার্থক্য থাকলেও প্রতিদিন সর্বনিম্ন ১০০ ডলারের বেশি গুনতে হয়।
শিশুদের পুরো দুই সপ্তাহের মূল্যায়ন বিবেচনায় প্রতি শাখার দুজন স্টুডেন্টকে ‘স্টুডেন্ট অব দ্য উইক’ নামে একটি সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। সেটি ঘোষণা স্কুলের প্রিন্সিপাল করলেও সার্টিফিকেট প্রদান করে স্কুলের বয়স্ক শিশুরা।
এরপর আসা যাক কিন্ডারগার্টেনের আলোচনায়। কিন্ডারগার্টেনে সাধারণত চার বছর বয়সীদের ভর্তি করানো হয়। শিশুর বয়স ৩০ জুনের মধ্যে চার বছর বয়স হতে হবে। কিন্ডারগার্টেনগুলো সাধারণত দুই শিফটে চলে। কোনো কোনো শিশু সপ্তাহে তিন দিন আসতে পারে আবার আরেক গ্রুপ সপ্তাহে দুই দিন আসতে পারে। সে ক্ষেত্রে সপ্তাহে তিন দিনের গ্রুপটির কিন্ডারগার্টেনগুলো সকাল আটটা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত থাকে। আর দুই দিনের গ্রুপটি সকাল সাড়ে আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত থাকতে পারে। বিশেষ করে যাঁরা এই বয়সী শিশুদের নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় আসেন, ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জন এবং স্কুল শুরুর আগে খাপ খাওয়ানোর দক্ষতা অর্জনে কিন্ডারগার্টেন হতে পারে খুবই জুতসই প্রতিষ্ঠান।
একজন বাংলাদেশি বলছিলেন, স্কুলে কী পরীক্ষা হবে, প্রস্তুতি কীভাবে নিতে হবে, সেটি নিয়ে প্রশ্ন করতেই শিক্ষক বলেছিলেন, ‘তুমি অযথাই বেশি টেনশন করছ। ওর পরীক্ষা আছে, প্রস্তুতি আছে, এ জন্য তো আমরা আছি!’
অস্ট্রেলিয়ায় স্টেট অনুযায়ী কিন্ডারগার্টেনের খরচের তারতম্য থাকলেও ক্ষেত্রবিশেষে প্রতিদিন ৫০ ডলার পর্যন্ত প্রয়োজন হতে পারে। চলতি বছরে অস্ট্রেলিয়ার কোনো কোনো স্টেটে একটি নির্দিষ্ট সময় (ঘণ্টা) পর্যন্ত কিন্ডারগার্টেনে শিক্ষার খরচ সরকার বহন করার পরিকল্পনা করেছে। এসব কিন্ডারগার্টেনে ভর্তির জন্য অনেক আগে থেকে যোগাযোগ রাখতে হয়। কিন্ডারগার্টেনে বিভিন্ন দিবস আয়োজন করা হয়। শিশুবান্ধব পরিবেশে শিশুরা মানবিক বিভিন্ন বিষয়, যেমন কাউকে ছোট না করা, অন্যকে সহযোগিতা করা, বন্ধুত্ব তৈরির পাশাপাশি খেলতে খেলতে পড়াশোনা ও নিয়মানুবর্তিতা শেখানো হয়।
এরপর আসা যাক প্রাথমিক শিক্ষায়। আপনার শিশুর বয়স পাঁচ বছর হলে যেকোনো সরকারি স্কুলের প্রিপারেটরিতে (প্রেপ) ভর্তি হতে পারবে। সে ক্ষেত্রেও ৩০ জুনের হিসাবটা বিবেচনায় রাখা হয়। আপনি পাঁচ বছরের বড় সন্তান নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি দিতে চাইলে ভিসার জন্য সন্তানের ভর্তির অনুমতিপত্র জমা দিতে হয়। এই অনুমতিপত্র দেশ থেকেও অস্ট্রেলিয়ান শিক্ষা অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করে একটি নির্দিষ্ট ফরমে আবেদন এবং টাকা (২০০ ডলারের মতো) জমা দিলে অনুমতিপত্র ই-মেইলে পাঠিয়ে দেয়। অনুমতিপত্র স্কুলে ভর্তির সময় অবশ্যই জমা দিতে হয়। আর যে কাগজটি জমা দিতে হয়, সেটি হলো বাড়িভাড়ার কাগজ।
স্কুলগুলোয় ভর্তি ক্যাচমেন্টের (এলাকার) সঙ্গে সম্পর্কিত। আপনি যে এলাকায় বাসা নিয়েছেন সেই এলাকার সরকারি স্কুলে শিশুকে ভর্তি করাতে পারবেন। বাসা নেওয়ার আগে বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হয়। অনেককে দেখা যায়, না বুঝে বাসা নিয়ে পরে এ কারণে বাসা পরিবর্তন করতে হয়েছে। শিশুকে স্কুলে দেওয়ার আগে অস্ট্রেলিয়া সরকারের নিয়মানুসারে টিকাগুলো দেওয়া থাকতে হয়। এ ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শে দেওয়া টিকা নেওয়ার পরও যেসব টিকার ঘাটতি থাকে (সাধারণত পাঁচ-ছয়টি), সেসব টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হয়।
স্কুলগুলো সাধারণত সকাল সাড়ে আটটা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত চলে। এখানকার স্কুলে বেশির ভাগ শিশুকে অভিভাবকেরা পৌঁছে দিয়ে কাজে যান। অস্ট্রেলিয়ায় শিক্ষাব্যবস্থাপনার যে বিষয়টি আপনার সবচেয়ে ভালো লাগতে পারে তা হলো, শিশুবান্ধব পরিবেশ ও খেলার ছলে শিক্ষা। এখানে শিশুদের বইয়ের ভারে ন্যুব্জ হওয়ার বিষয় নেই। স্কুলে যেহেতু শিশুরা দিনের একটি উল্লেখযোগ্য সময় থাকে, তাই স্কুলেই পড়াগুলো তৈরি করার আয়োজন থাকে। শিশুদের জন্য একটি আনন্দময় পরিবেশ তৈরি করা হয়। যেমন ধরুন, শিশুরা সকালে চোখ মুছতে মুছতে স্কুলে হাজির হয়। স্কুলে পৌঁছানোর পর মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরে তাদের পছন্দের কার্টুনের সঙ্গে নাচ-গান করানো হয়, যাতে চোখের ঘুম ঘুম ভাব পালাতে বাধ্য হয়! গড়ে ১০ জন শিক্ষার্থীর জন্য ১ জন শিক্ষক নিয়োজিত থাকেন সারা দিন। বইয়ের ভার নেই বলে যে কিছু পড়াশোনা হয় না বা মূল্যায়ন হয় না, তা কিন্তু নয়। বরং ওরা বুঝতেই পারে না কখন মূল্যায়ন হয়ে যায়।
যেহেতু ১০ জন শিক্ষার্থীর জন্য ১ জন নিবেদিত শিক্ষক নিয়োজিত থাকেন, তাই শিক্ষকেরা সাধারণত সব শিক্ষার্থীর খুঁটিনাটি বিষয় পর্যবেক্ষণ এবং সে অনুযায়ী উন্নয়নের চেষ্টা করেন। স্কুলে মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন দিবসের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। সেটি হতে পারে ড্যান্স, ডিসকো থেকে শুরু করে শারীরিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়সমূহ। এসব বিষয়ে অভিভাবক হিসেবে প্রাত্যহিক আপডেট আপনি পেয়ে যাবেন ই-মেইলে। কারিকুলামের মধ্য দিয়ে অস্ট্রেলিয়ানরা নিত্যদিনের জরুরি সব বিষয়ে ধীরে ধীরে দক্ষতা অর্জন করে। স্কুলে সাঁতার থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেশের ভাষা পর্যন্ত শেখানো হয়। আর খেলার মধ্যে টেনিস, ব্যাটমিন্টন, ড্রামা থেকে শুরু করে আরও অনেক কিছু। কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য এ জন্য আলাদা অর্থ খরচ করতে হয়।
স্কুলে বছরে একবার হেলথ চেকআপেরও ব্যবস্থা করা হয়। পোস্টগ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থী হিসেবে অস্ট্রেলীয় (সেটি হতে পারে সরকারের বা বিশ্ববিদ্যালয়ের) কোনো স্কলারশিপ পেয়ে থাকলে সন্তানের পড়াশোনার পেছনে অল্প খরচ করতে হয়। কিন্তু তা না থাকলে প্রতি সেমিস্টারে (তিন মাস অন্তর) কম-বেশি তিন হাজার ডলারের মতো খরচ করতে হয়। নাগরিক হিসেবে কেউ এখানে এলে অবশ্য খরচটি করতে হয় না। আমরা বাঙালিরা বেশির ভাগ শিশুর ইংরেজি শেখা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকি। আশার কথা হলো, পরিবেশ ও বয়সের কারণে খুব দ্রুত শিশুরা অ্যাডজাস্ট করে ফেলে, যেটি অনেক ক্ষেত্রে বয়স্করা পারি না। আপনার শিশুকে সরাসরি এনে স্কুলে ভর্তি করালে এবং শিশুটির ভাষা বা অন্য কোনো কিছুতে সমস্যা বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষকেরা প্রয়োজনে ডেভেলপমেন্টের জন্য পৃথকভাবে ‘গ্রুমিং’ করে থাকেন।
স্কুলের যে আয়োজনটি অভিভাবকদের আনন্দ দেয় তা হলো অ্যাসেম্বলি (প্রাত্যহিক সমাবেশ)। তবে আমাদের দেশের মতো প্রতিদিন এখানে অ্যাসেম্বলি হয় না, হয় দুই সপ্তাহে একবার। সেখানে সব শিশু হলরুমে গিয়ে বসে আধাঘণ্টার ইভেন্টটি উপভোগ করে। সেখানে অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সংগীত, অভিভাবক সমাবেশ, স্টুডেন্ট অব দ্য উইক, সার্টিফিকেট প্রদান, বিশেষ নির্দেশনা ইত্যাদির ব্যবস্থা করা হয়। ছোট শিশুরা নিজেরা সবকিছুর আয়োজনে থাকে। স্লাইড তৈরি ও প্রদর্শন থেকে অনুষ্ঠান উপস্থাপনা—সবকিছুই স্কুলের শিশুরা গ্রুপে বিভক্ত হয়ে করে থাকে। শিশুদের পুরো দুই সপ্তাহের মূল্যায়ন বিবেচনায় প্রতি শাখার দুজন স্টুডেন্টকে ‘স্টুডেন্ট অব দ্য উইক’ নামে একটি সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। সেটি ঘোষণা স্কুলের প্রিন্সিপাল করলেও সার্টিফিকেট প্রদান করে স্কুলের বয়স্ক শিশুরা।
‘স্টুডেন্ট অব দ্য উইক’ বিবেচনায় নিতে শুধু পড়াশোনাই নয়, সহশিক্ষা, মানবিক আচরণও মূল্যায়ন করা হয়। শিশুরাই স্লাইডের মাধ্যমে কিছু মানবিক মূল্যবোধ নিয়ে আলোচনা করে এবং গুণগুলো অর্জনের তাগিদ দেয়। স্কুল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা থেকে শুরু করে কোনো বিশেষ ঘোষণা থাকলে তাও দেওয়া হয় সেখানে। প্রতি তিন মাস পর একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ দিন স্কুল ছুটি থাকে, যাকে ‘স্কুল হলিডে’ বলা হয়। স্কুলের আগে বা স্কুলের পরে অথবা স্কুল হলিডের সময়ে শিশু রাখার সুবিধার্থে আফটার স্কুল সার্ভিসও থাকে কিছু স্কুল প্রাঙ্গণে।
এটি সাধারণত স্কুলের নিজস্ব সার্ভিস না হওয়ায় এর জন্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণ খরচ বহন করতে হয়। স্কুলে সপ্তাহের এক দিন লাইব্রেরি টাইমে প্রত্যেকে এক সপ্তাহের জন্য পছন্দমাফিক একটি বই ধার নিতে পারে। সপ্তাহের সোম থেকে শুক্রবার পর্যন্ত আলাদা আলাদা দিনে আলাদা আলাদা কার্যক্রম থাকে। ইয়ার ফাইভ পর্যন্ত বাসায় অল্প কিছু হোমওয়ার্ক থাকলেও পরীক্ষাভীতি থাকে না। একজন বাংলাদেশি বলছিলেন, স্কুলে কী পরীক্ষা হবে, প্রস্তুতি কীভাবে নিতে হবে, সেটি নিয়ে প্রশ্ন করতেই শিক্ষক বলেছিলেন, ‘তুমি অযথাই বেশি টেনশন করছ। ওর পরীক্ষা আছে, প্রস্তুতি আছে, এ জন্য তো আমরা আছি!’
অনেকে আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে উন্নত দেশের শিক্ষাব্যবস্থার তুলনা করার চেষ্টা করেন। ব্যক্তিগতভাবে পুরোপুরি এর বিপক্ষে আমার অবস্থান। দার্শনিক হেরাক্লিটাসের একটা উক্তি আছে এমন, ‘...একজন মানুষ একসঙ্গে একই নদীতে দুবার গোসল করতে পারে না, হয় সেটির সময় পরিবর্তন হয়, নয়তো নদী...।’ তেমনি আমাদের শিক্ষা খাতে বাজেট ও ব্যয়, কারিকুলাম, শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত, শিক্ষক নিয়োগ ও পেশাগত উন্নয়ন, স্কুলগুলোর অবকাঠামো ইত্যাদির সঙ্গে উন্নত দেশগুলোর অনেক ফারাক রয়েছে। এত কিছুর তারতম্য বিবেচনায় নিয়ে তুলনা করাটা মোটেই সমীচীন হবে বলে আমি মনে করি না।
অস্ট্রেলিয়ার একটি স্টেটে সাম্প্রতিক সময়ে বসবাসের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ওপরে উল্লিখিত বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। তবে যে স্টেটে যাবেন, এমনকি যে দেশেই যান না কেন, বিষয়গুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে গেলে তা সন্তানের শিক্ষার ব্যাপারে অনেকটা সহায়ক হবে।
লেখক: মামুন আ. কাইউম, পিএইচডি গবেষক, কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি, ব্রিসবেন, অস্ট্রেলিয়া