অস্ট্রিয়াতে উচ্চশিক্ষায় সুযোগ, স্নাতক ও পিএইচডিতে আছে স্কলারশিপ

আর্থিক মাথাপিছু আয়ের হিসাবে অস্ট্রিয়া পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। দেশটির নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান যোগাযোগব্যবস্থার মানের দিক থেকেও অনেক উন্নত। শুধু জীবনমান বা যোগাযোগ নয়, অস্ট্রিয়ার শিক্ষাব্যবস্থাও খুবই মানসম্পন্ন। অস্ট্রিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সর্বদা বিশ্ব র‍্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষেই থাকে। বর্তমানে অস্ট্রিয়ায় পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে অস্ট্রিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রয়েছে বিনা বেতনে বা স্বল্প বেতনে উচ্চশিক্ষা অর্জনের সুযোগ। ৯৮ শতাংশ সাক্ষরতার হারের দেশটি কয়েক দশকজুড়ে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্বমানের শিক্ষা নিশ্চিত করে আসছে। সেই অভাবনীয় সুযোগ লাভের জন্য চলুন অস্ট্রিয়াতে উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদনের প্রক্রিয়া, খরচসহ আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো জেনে নিই।

দেশটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমিও। ভিয়েনা রাজধানী আর ইউরো মুদ্রাবিশিষ্ট অস্ট্রিয়ার ভাষা জার্মান বা ডয়েচ। শীতকালে দেশটির তাপমাত্রা শূন্যের কাছাকাছি বা তার থেকে নিচে নেমে যায় (সেলসিয়াস স্কেলে) আর গরমে তাপমাত্রা ২০ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে।

কেন উচ্চশিক্ষার অন্যতম গন্তব্য

জাতীয়ভাবে আর্থসামাজিক অবস্থা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অস্ট্রিয়া একটি নিরাপদ অভিবাসনের দেশ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে ব্যবসা ও শিক্ষাভিত্তিক নেটওয়ার্কগুলোতে এর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থান উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে দেশটিকে পরিণত করেছে একটি গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্যে।

অস্ট্রিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশ্বজুড়ে শিক্ষার্থী ও স্কলারদের অভিজাত নেটওয়ার্কগুলোতে বহুল সমাদৃত। এগুলোর মধ্যে সর্বাধিক পরিচিত ভিয়েনা ইউনিভার্সিটি ও টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব ভিয়েনার কিউএস র‍্যাঙ্কিং যথাক্রমে ১৩৭ ও ১৯০। এ ছাড়া ৪১৩ নম্বর অবস্থানে রয়েছে গ্রাজ ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি ও ৪৭২তম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির নাম জোহানেস কেপলার ইউনিভার্সিটি লিঞ্জ। সেনজেনভুক্ত হওয়ায় সুযোগ থাকছে একই সঙ্গে অন্য ইউরোপীয় দেশগুলো ভ্রমণ করার। এর মাধ্যমে একাধিক ডিগ্রি নেওয়া, চাকরি কিংবা ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে ক্যারিয়ারকে সুবিস্তৃত করার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়।

যে যোগ্যতা দরকার

প্রধান ভাষা জার্মান হওয়ায় দেশটির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়াশোনার পাশাপাশি স্কলারশিপ ও চাকরির প্রতিটি ক্ষেত্রেই গুরুত্ব পায় জার্মান ভাষার ওপর দক্ষতা। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শুধু স্থানীয় ছাত্রছাত্রীদের অধ্যয়ন ফ্রি। তবে বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাঁরা জার্মান ভাষায় পারদর্শী, তাঁরা তাঁদের অধ্যয়ন খরচে অনেকাংশে ছাড় পান। তবে অস্ট্রিয়া থেকে ডিগ্রি লাভের জন্য জার্মান-ই একমাত্র ভাষা নয়। এর বিকল্প হিসেবে ইংরেজি ভাষায় দক্ষতাও, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সমান গুরুত্ব পায়।

ব্যাচেলর ডিগ্রির জন্য প্রয়োজন হয় ডিপ্লোমা কিংবা হাইস্কুলের সনদ। স্নাতকোত্তর যেকোনো কোর্স বা ডিগ্রির জন্য একই বা প্রাসঙ্গিক বিষয়ে স্নাতক করা থাকতে হয়। অ্যাপ্লায়েড সায়েন্স ইউনিভার্সিটিগুলোতে স্নাতক ডিগ্রিতে আবেদনের পূর্বশর্ত হচ্ছে প্রাসঙ্গিক বিষয়ে পেশাদার অভিজ্ঞতা।

মাস্টার্স প্রোগ্রামে ভর্তির জন্য ন্যূনতম ১৮০ ইসিটিএস (ইউরোপিয়ান ক্রেডিট ট্রান্সফার অ্যান্ড অ্যাকুমুলেশন সিস্টেম) ক্রেডিট থাকা আবশ্যিক। এর সঙ্গে কমপক্ষে ছয় সেমিস্টারের প্রাসঙ্গিক স্নাতক ডিগ্রিধারী হতে হয়। পিএইচডি প্রোগ্রামগুলোর জন্য প্রয়োজন হয় প্রাসঙ্গিক ক্ষেত্রে গবেষণা বা সমতুল্য অধ্যয়নের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি।

জনপ্রিয় বিশ্ববিদ্যালয় ও চাহিদাসম্পন্ন কোর্স

বিশ্বজুড়ে শিক্ষাকেন্দ্রিক প্রসিদ্ধ নেটওয়ার্কগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেই বেশি ভিড় হয় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের। এর মধ্যে অস্ট্রিয়ার প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো—

* ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়

* টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব ভিয়েনা

* ইউনিভার্সিটি অব ইনসব্রুক

* ক্লাজেনফুর্ট বিশ্ববিদ্যালয়

* ভিয়েনা ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি

* গ্রাজ ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি

* জোহানেস কেপলার ইউনিভার্সিটি লিঞ্জ

* ইউনিভার্সিটি অব গ্রাজ

* ইউনিভার্সিটি অব ন্যাচারাল রিসোর্স অ্যান্ড অ্যাপ্লায়েড লাইফ সায়েন্সেস, ভিয়েনা (বকু)।

ব্যবসা ও গবেষণায় ক্যারিয়ার বিকাশে পর্যাপ্ত সুযোগের সূত্রে প্রাধান্য পাওয়া বিষয়গুলো হলো—

* শিল্পকলা ও হিউম্যানিটিস

* ব্যবসা প্রশাসন

* ভাষা

* মনোবিজ্ঞান

* মার্কেটিং

* আন্তর্জাতিক ব্যবসা

* কম্পিউটারবিজ্ঞান

* প্রকৌশল।

অস্ট্রিয়ার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আবেদনের উপায়

সাধারণত দুটি মৌসুমকে কেন্দ্র করে স্নাতক বা ডিপ্লোমা এবং মাস্টার্স প্রোগ্রামগুলোতে ছাত্রছাত্রী ভর্তি নেওয়া হয়ে থাকে। একটি উইন্টার সেমিস্টার, যেটি শুরু হয় সেপ্টেম্বর থেকে আর সামার সেমিস্টার শুরু হয় ফেব্রুয়ারি মাস থেকে। অবশ্য কোর্সভেদে প্রতি মৌসুমেই নিবন্ধনের সময়কাল ভিন্ন হয়ে থাকে, যা হালনাগাদ করা হয় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে। এ অনলাইন পোর্টালগুলোর মাধ্যমে আবেদনের সামগ্রিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। এ সময় আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র আপলোডের বিষয় থাকে।

* শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র।

* বিশ্ববিদ্যালয়, প্রোগ্রাম ও কোর্সনির্বিশেষে ভর্তির আবেদনে সাধারণত যে কাগজপত্র প্রস্তুত রাখতে হয়—

* পাসপোর্ট ও ছবি বা নামের সত্যতা প্রমাণে প্রার্থীর নিজের দেশের সরকার কর্তৃক প্রদান করা যেকোনো পরিচয়পত্রের অনুলিপি।

* সর্বশেষ ডিপ্লোমা বা হাইস্কুল সনদ পরীক্ষা বা ব্যাচেলর ডিপ্লোমার সনদ

* অ্যাপ্লায়েড সায়েন্স ইউনিভার্সিটিতে স্নাতক ডিগ্রির জন্য প্রাসঙ্গিক পেশাদার অভিজ্ঞতা

* ইংরেজি ভাষার দক্ষতা হিসেবে আইইএলটিএস, পিটিই একাডেমিক বা টোয়েফল স্কোর কিংবা ক্যামব্রিজ সার্টিফিকেট।

* জার্মান ভাষায় পাঠদান করা কোর্সের জন্য জার্মান ভাষার দক্ষতা প্রমাণপত্র।

* এগুলোর পাশাপাশি প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আরও কিছু কাগজপত্র চেয়ে থাকতে পারে।

আবেদন–পরবর্তী প্রক্রিয়া

কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে, বিশেষ করে ব্যাচেলর স্তরে প্রবেশিকা পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি সাধারণত একাডেমিক প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার ছয় মাস আগে হয়ে থাকে। অন্য স্তরগুলোতে অনলাইনে (জুম বা স্কাইপে) মৌখিক পরীক্ষা বা ভর্তি ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে মূল্যায়ন করা হয়।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিজ হাতে পূরণ করে আবেদন ই-মেইলের পাশাপাশি ডাকযোগে প্রেরণের দরকার পড়তে পারে। পরবর্তী সময় আবেদনের ফলাফলসহ যাবতীয় নির্দেশনা ই-মেইলের মাধ্যমেই জানানো হবে। ভর্তি চূড়ান্তভাবে নিশ্চিত হলে অধ্যয়ন ফি পরিশোধের জন্য বলা হয়। এই ফি পরিশোধের পরই অফার লেটার ও স্টুডেন্ট আইডি ইস্যু করা হয়।

স্টুডেন্ট ভিসার আবেদন পদ্ধতি

দীর্ঘমেয়াদি অধ্যয়নের জন্য বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আবেদন করতে হবে ডি-টাইপ ভিসায়, যেখানে সেনজেনভুক্ত দেশগুলোতে ছয় মাসের বেশি থাকার অনুমতি দেওয়া হয়। অস্ট্রিয়াতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্লাস শুরু হওয়ার কমপক্ষে তিন থেকে ছয় মাস আগে ভিসার আবেদন করা উচিত।

এখানে প্রধানত পর্যায়ক্রমে প্রথমে রেসিডেন্স পারমিট এবং পরবর্তী সময় এন্ট্রি পারমিটের জন্য আবেদন করতে হয়। প্রথম পর্যায়ের আবেদনের যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয় ভারতের নয়াদিল্লির অস্ট্রিয়ান দূতাবাসে। দূতাবাসের ঠিকানা: ইপি-১৩, চন্দ্রগুপ্ত মার্গ, চাণক্যপুরী, নয়াদিল্লি, ১১০০২১, ভারত।

আবেদনের যাবতীয় কাগজপত্র সঙ্গে নিয়ে দূতাবাসে যাওয়ার আগে ই-মেইলের মাধ্যমে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিতে হবে। অতঃপর ফিরতি ই-মেইলে নির্দিষ্ট তারিখ জানানো হলে সে অনুযায়ী উপস্থিত হতে হবে দূতাবাসে। এ সময় আঙুলের ছাপ ও ফটোগ্রাফের মতো বায়োমেট্রিক ডেটা নেওয়া হবে।

আবেদনের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন হলে দূতাবাস থেকে সেটি সরাসরি অস্ট্রিয়াতে পাঠানো হবে এবং সেখানে রেসিডেন্স পারমিটের প্রক্রিয়া শুরু হবে। এখানে যেহেতু চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য বেশ কিছু সময় অপেক্ষা করতে হয়, তাই প্রার্থীকে অস্ট্রিয়াতে প্রবেশের অন্তত তিন মাস আগে আবেদন করা উচিত।

আরও পড়ুন

আবেদন প্রক্রিয়া

অস্ট্রিয়া থেকে রেসিডেন্স পারমিট দেওয়ার কথা দূতাবাসে জানানো হলে দূতাবাস প্রার্থীকে তা অবহিত করবে। এরপর শুরু হবে দ্বিতীয় পর্যায়ের পদ্ধতি। অর্থাৎ এন্ট্রি পারমিটের জন্য আবেদন। রেসিডেন্স পারমিট মঞ্জুর করা হয়েছে এই বিজ্ঞপ্তি পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে প্রার্থীকে এই এন্ট্রির জন্য আবেদন করতে হবে। এরপর দূতাবাস থেকে অস্ট্রিয়ায় প্রবেশের জন্য ডি-টাইপ ভিসা দেবে। এরপর থেকে আরও তিন মাসের মধ্যে অস্ট্রিয়ায় পৌঁছে রেসিডেন্স পারমিট সংগ্রহ করা যাবে।

স্টুডেন্ট ভিসার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

নিজ হাতে পূরণ ও সই করা আবেদনপত্রের সঙ্গে যে নথিগুলো দিতে হবে—

* কমপক্ষে দুটি ফাঁকা পৃষ্ঠাসহ একটি বৈধ পাসপোর্ট। যার মেয়াদ থাকবে অস্ট্রিয়াতে পৌঁছার দিন থেকে কমপক্ষে তিন মাস।

* দুটি সাম্প্রতিক পাসপোর্ট সাইজের ছবি

* অস্ট্রিয়ান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে অফার লেটার

* অধ্যয়নকালে অস্ট্রিয়াতে জীবনযাত্রার ব্যয়ভার বহনের জন্য যথেষ্ট আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রমাণ। এখানে অবশ্যই ন্যূনতম এক বছরের খরচ হিসেবে কমপক্ষে ৬ হাজার ৬৩০ ইউরো দেখাতে হয়।

* জরুরি চিকিৎসা ও ভ্রমণের খরচ বহন করা স্বাস্থ্যবিমা। এই ধরনের স্বাস্থ্যবিমার সাধারণ খরচ প্রতি মাসে প্রায় ৬৯ দশমিক ১৩ ইউরো।

* অস্ট্রিয়াতে অগ্রিম বাসস্থানব্যবস্থার প্রমাণ।

* এই কাগজপত্রগুলোর মূল কপিসহ এক সেট অনুলিপি প্রস্তুত রাখতে হবে। কোনো নথি বাংলা ভাষায় হলে তা প্রত্যায়িত জার্মান অনুবাদসহ জমা দিতে হবে।

আরও পড়ুন

ভিসা ফি ও প্রক্রিয়াকরণের সময়

আবেদনের পর থেকে শুরু করে ভিসা হাতে পাওয়া পর্যন্ত সামগ্রিক প্রক্রিয়াকরণে খরচ লাগবে ১২০ ইউরো। এই প্রক্রিয়াকরণে সাধারণত প্রায় ১৫ কার্যদিবস সময় লাগে। তবে অতিরিক্ত কাগজের প্রয়োজন হলে সময়টি ৩০ থেকে ৬০ কার্যদিবস পর্যন্ত বাড়তে পারে।

অস্ট্রিয়ায় পড়াশোনা ও জীবনযাত্রার খরচ

ইউরোপীয় দেশটির সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের গড়পড়তায় প্রতিবছর খরচ করতে হয় ১ হাজার ৪৫২ ইউরো। ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপ্লায়েড সায়েন্সে প্রতি সেমিস্টারে ব্যয় হতে পারে ৭২৭ থেকে ৭ হাজার ৫০০ ইউরো। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বার্ষিক টিউশন ফি সাধারণত ৩ হাজার থেকে ২৩ হাজার ইউরো। কিছু ব্যবসায়িক প্রোগ্রামের জন্য অবশ্য এই অঙ্ক ৩৫ হাজার ইউরো পর্যন্ত হতে পারে।

জীবনযাত্রার খরচ হিসেবে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা ও সাল্জবার্গের মতো শহরে থাকার জন্য মাসিক বাজেট রাখতে হবে ৯০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ ইউরো। এর মধ্যে আবাসন, খাবার, সামাজিক ক্রিয়াকলাপ, পাবলিক ট্রান্সপোর্টসহ সব খরচ অন্তর্ভুক্ত। লিঞ্জ বা গ্রাজের মতো শহরগুলোতে খরচ হতে পারে প্রতি মাসে ৯০০ থেকে ১ হাজার ইউরো।

আরও পড়ুন

অস্ট্রিয়ার সেরা কয়েকটি স্কলারশিপ

এই অর্থ জোগাতে উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য অস্ট্রিয়াতে রয়েছে পর্যাপ্ত স্কলারশিপের ব্যবস্থা। যেমন স্নাতক প্রোগ্রাম বা পিএইচডির জন্য দেওয়া হয় ‘আর্নস্ট মাক গ্র্যান্ট ওয়ার্ল্ডওয়াইড স্কলারশিপ’। এখানে মাসিক উপবৃত্তির পরিমাণ ১ হাজার ১৫০ ইউরো। এ ছাড়া ভ্রমণের চালান প্রদর্শনপূর্বক ভ্রমণ খরচের জন্য সর্বোচ্চ ১ হাজার ইউরো পাওয়া যায়।

জনপ্রিয় স্পনসর ইরাসমাস মুন্ডাসের অধীন থাকা প্রোগ্রামগুলো পুরো সময়ের জন্য টিউশন ফি বহন করে। এই স্পনসরশিপের মধ্যে রয়েছে ভিসা–সংক্রান্ত খরচ, ভ্রমণ খরচ, বিমা ও মাসিক ভাতা। সব মিলিয়ে বহন করা তহবিলের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১২ হাজার ইউরো।

ওইএডি (অস্ট্রিয়ান এজেন্সি ফর এডুকেশন অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনালাইজেশন) অস্ট্রিয়ার প্রসিদ্ধ স্পনসরগুলোর মধ্যে একটি। তাদের ওইএডি হাউজিং স্কলারশিপ ছয় হাজার ইউরো পর্যন্ত বৃত্তি দিয়ে থাকে।

কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে নিজস্ব বৃত্তি প্রকল্প। যেমন ইউনিভার্সিটি অব ভিয়েনা স্কলারশিপ বহন করে ১২ হাজার ইউরো।

জয়েন্ট জাপান বিশ্বব্যাংক স্নাতক বৃত্তি প্রোগ্রামের আওতায় রয়েছে টিউশন ফি, মাসিক উপবৃত্তি, রাউন্ড ট্রিপ বিমানভাড়া ও স্বাস্থ্যবিমা। এই সুযোগ-সুবিধা দেয় অস্ট্রিয়ান ডেভেলপমেন্ট কোলাবোরেশন স্কলারশিপ।

‘হেলমুট ভিথ স্টাইপেন্ড ফর ওমেন ইন কম্পিউটার সায়েন্স’ নারী শিক্ষার্থীদের জন্য একটি মর্যাদাপূর্ণ বৃত্তি। এটি টিউশন ফি ও মাসিক উপবৃত্তি প্রদানের পাশাপাশি পেশাদার দক্ষতা বিকাশের সুযোগ দেয়।

অস্ট্রিয়ায় অধ্যয়নকালে আর্থিক ব্যবস্থাপনা

স্কলারশিপের পাশাপাশি অধ্যয়ন ও জীবনযাত্রার খরচ ব্যবস্থাপনার জন্য বিদেশি ছাত্রছাত্রীরা খণ্ডকালীন চাকরি করতে পারেন, তবে এর জন্য তাঁদের ওয়ার্ক পারমিট নিতে হবে। অবশ্য ব্যবসা বা ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে এ সরকারি নথির প্রয়োজন হয় না।

পড়াশোনার পাশাপাশি কাজের জন্য ওয়ার্ক পারমিট পেতে অস্ট্রিয়ার কোনো একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে কাজের অফার পেতে হবে। কাজের অনুমতির জন্য এই জব অফার লেটারের সঙ্গে ইতিমধ্যে প্রাপ্ত রেসিডেন্স পারমিটের নথি প্রদর্শন করতে হবে। এই নবায়ণযোগ্য ওয়ার্ক পারমিটের মেয়াদ থাকে এক বছর, যেখানে প্রতি সপ্তাহে কাজ করা যায় সর্বোচ্চ ২০ ঘণ্টা।

জীবনযাত্রার খরচ বাঁচানোর জন্য শহরের বাইরে অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শেয়ার করে কোনো অ্যাপার্টমেন্টে থাকা যেতে পারে। এগুলোর ভাড়া শহরের প্রাণকেন্দ্রের তুলনায় অনেকটা কম হয়। এখানে সমস্যা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই আবাসনগুলো বেশ দূরে হয়। এ ক্ষেত্রে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করা বেশ সহায়ক হতে পারে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত স্টুডেন্ট কার্ড এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করে। এটি প্রদর্শনের মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি পরিষেবাগুলোতে উল্লেখযোগ্য ছাড় পাওয়া যায়।

চাকরির উপায় ও স্থায়ী হওয়ার সুযোগ

ডিগ্রি লাভের পর অস্ট্রিয়াতে স্থায়ী হওয়ার জন্য দুই ধরনের ওয়ার্ক পারমিট রয়েছে। একটি হচ্ছে চাকরি প্রার্থীদের জন্য রেসিডেন্স পারমিট এবং অন্যটি স্নাতকদের দেশে থাকা ও ফুলটাইম কাজের জন্য লাল-সাদা-লাল কার্ড।

দুটি ক্যাটাগরিতেই স্নাতকেরা এক বছর পর্যন্ত কাজ করার অনুমতি পান। তবে প্রথম ক্যাটাগরির জন্য ছাত্র অবস্থায় রেসিডেন্স পারমিটের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করতে হয়। এর আওতায় প্রতি সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২০ ঘণ্টা কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়। আর দ্বিতীয় ক্যাটাগরির জন্য আবেদন করতে হয় কোনো চাকরির অফার পাওয়ার পর। আবেদনের পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য প্রার্থীকে ১৫ দিন অপেক্ষা করতে হয়। এই পারমিটে সাপ্তাহিক কর্মঘণ্টা থাকে সর্বোচ্চ ৪০ ঘণ্টা। তথ্যসূত্র: ইউএনবি