৫ বছরে শিক্ষার অনেক গুণগত পরিবর্তন এসেছে, ফল ভবিষ্যতে দেখব: শিক্ষামন্ত্রী
শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, ‘আমাদের সন্তানদের শুধু ফলাফল দিয়ে যাতে মূল্যায়ন না করি। তাদের নানা ধরনের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা নেওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। উন্নত বিশ্বে দেখবেন, যত বড় পরিবারেরই হোক না কেন ১৮ থেকে ১৯ বছরের বয়সের সন্তানদের মাঠে-ঘাটে এবং দোকানে কাজ করার ক্ষেত্রেও উৎসাহিত করেন অভিভাবকেরা। আমাদের মধ্যেও এ মানসিকতা আসতে হবে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত হবে, তা ঠিক নয়, তাদের কর্মমুখী দক্ষতাগুলোও অর্জন করতে হবে।’
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব ও চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে শিক্ষামন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘গত পাঁচ বছরে শিক্ষার অনেকগুলো গুণগত পরিবর্তন এসেছে। সেগুলোর ফল আমরা ভবিষ্যতে দেখব। শিক্ষাব্যবস্থায় একটা চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ফলগুলো দৃশ্যমান হয় দেরিতে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আজকে আমাদের অনেক পেছন থেকে এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন।’
রাজনৈতিক নেতৃত্বের শুধু জনপ্রিয়তা খুঁজলে চলবে না, অজনপ্রিয় হলেও সঠিক সিদ্ধান্তের জায়গায় আমাদের স্থির থাকতে হবে।
মহিবুল হাসান চৌধুরী আরও বলেন, ‘আমাদের এ প্রজন্মকে নিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার অনেক স্বপ্ন। এ প্রজন্মকে উন্নত বিশ্বের আদলে শিক্ষিত ও প্রশিক্ষিত করা এবং তাদের কর্মমুখী করাটা আমাদের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। আমাদের শিক্ষার্থীরা আইসিটিতে এখন অনেক কোর্স করতে পারে।’
বর্তমান শিক্ষাপদ্ধতির জনপ্রিয়তা ও অজনপ্রিয়তার বিতর্কে যেতে চান না জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘যেহেতু প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব দিয়েছেন আমাদের অজনপ্রিয় কাজও যদি সঠিক হয়, শিক্ষাবিদ-বিশেষজ্ঞরা সবাই মিলে যেটা নির্দিষ্ট করেছেন, সেটার দায়িত্বটা আমাদের নিতে হবে। আসলে আমরা রাজনৈতিক নেতৃত্ব সেই কাজের জন্যই এসেছি। রাজনৈতিক নেতৃত্বের শুধু জনপ্রিয়তা খুঁজলে চলবে না, অজনপ্রিয় হলেও সঠিক সিদ্ধান্তের জায়গায় আমাদের স্থির থাকতে হবে।’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘সব শিক্ষার্থীকে বায়োলজি, অ্যানাটমি পড়ানোর প্রয়োজন নেই, বর্তমান প্রসেসটা হচ্ছে সেটাই, যে শিক্ষার্থী ইঞ্জিনিয়ারিং বা মেডিকেলে যাবে, তাকে সেই নির্দিষ্ট পর্যায়ে গিয়ে আমি সেটা পড়াব। সে জন্য আমরা ইন্টারমিডিয়েট পর্যায়ে স্পেশালিস্ট স্ট্রিমটুকু রাখছি। সবার জন্য নির্ধারিত মানদণ্ডের বিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান, ভাষাজ্ঞান, গণিতের ওপর একটা বয়সসীমা পর্যন্ত থাকতে হবে, সেভাবেই স্ট্রাকচার করা।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার মান কমে যাচ্ছে কি না, সেই চিন্তার কোনো কারণ নেই। আমাদের এসএসসি এবং এইচএসসি পাস করার পরও তো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের ভর্তি পরীক্ষা নিয়েছে। অর্থাৎ বোর্ডের রেজাল্টের ওপর তার শতভাগ আস্থা নেই। সুতরাং আমরা কিন্তু সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর কাজ করছি। স্পেশালিস্ট স্ট্রিমে যারা যাবে, তারা যাতে সেই স্ট্রিমগুলো পছন্দ করতে পারে, সেভাবে এলাইন করা হয়েছে।’
মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘এখানে আমার কী চাওয়া, সেটার চেয়ে শিক্ষা পরিবারের মধ্যে আমরা সবাই মিলে কী পারব, সেটিই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমি যে মিশনটা নিয়ে আসছি, সেটা হচ্ছে শুধু রাজনৈতিক দর্শন। যেহেতু আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী, আমার দল আমাকে সেই দর্শনটা দিয়ে শিক্ষা প্রশাসনে সেটাকে বাস্তবায়নের জন্য পাঠিয়েছে। এবারে আমাদের নির্বাচনী ইশতাহারে যে দর্শনটা, সেটা হচ্ছে আমরা শিক্ষাটাকে এমনভাবে সাজাতে চাই, শিক্ষার্থীদের এমনভাবে প্রস্তুত করতে চাই, যাতে আমাদের দেশে এবং বিশ্বে যে ধরনের কাজ সৃষ্টি হচ্ছে, সেই ধরনের কাজের জন্য দক্ষ করে গড়ে তোলা। যেখানে তারা নতুন দক্ষতা শেখার মানসিকতা রাখে। শিখতে শেখার মানসিকতা সৃষ্টি করতে হবে।’
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি সালাউদ্দিন মো. রেজার সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আবু সুফিয়ান, কলিম সরওয়ার, সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি তপন চক্রবর্তী, সিনিয়র সাংবাদিক মোস্তাক আহমদ, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহসভাপতি চৌধুরী ফরিদ ও চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সিনিয়র সহসভাপতি রুবেল খান। স্বাগত বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক।