পরীক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে এইচএসসি ও সমমানের স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিলের পর এখন করোনাকালের পরীক্ষার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে জেএসসি–এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের সঙ্গে মিলিয়ে (ম্যাপিং) ফল প্রকাশের প্রস্তুতি নিয়েছে শিক্ষা বোর্ডগুলো।
আজ বুধবার শিক্ষা বোর্ডগুলোর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকদের সভায় এ বিষয়ে আলোচনা করে প্রাথমিকভাবে একটি রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকদের সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আন্তশিক্ষা বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যানদের সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকার আজ বুধবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, এখনো তিনি সুপারিশ পাননি। পেলে সেটি সরকারের কাছে উপস্থাপন করবেন এবং অনুমোদন পেলে তার ভিত্তিতে ফলাফল তৈরি করবেন।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে ২০২০ সালে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা না হওয়ায় সবাই পাস করেন। তখন এসএসসি, জেএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের গড় মূল্যায়ন করে ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছিল। পরের বছর কয়েকটি বিষয়ের পরীক্ষা নিয়ে বাকি বিষয়ের ফল একইভাবে তৈরি করা হয়েছিল। এবারও সেই অভিজ্ঞতায় ফল প্রকাশের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থী সাড়ে ১৪ লাখের মতো। পরীক্ষা শুরু হয়েছিল গত ৩০ জুন। সাতটি পরীক্ষাও সম্পন্ন হয়েছিল। এরই মধ্যে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং ছাত্র-জনতার সরকার পতনের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে কয়েক দফায় পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। তখন পর্যন্ত ছয়টি পরীক্ষা বাকি ছিল। ব্যবহারিক পরীক্ষাও হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ভিন্ন পদ্ধতিতে ফলাফলের ধারণা দিয়ে বলেন, বাংলা–ইংরেজিসহ ইতিমধ্যে যে সাতটি বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছে, সেগুলোর ফল হবে উত্তরপত্র মূল্যায়নের ভিত্তিতে। আর যে বিষয়গুলোর পরীক্ষা হচ্ছে না, সেগুলোর ফল প্রকাশের ক্ষেত্রে ওই সব শিক্ষার্থীর এসএসসি ও জেএসসির বা সমমানের সংশ্লিষ্ট বিষয় বা ভিন্ন উপায়ে ফল প্রকাশের জন্য নির্ধারিত বিষয়ের ফল বিবেচনা করা হবে। এখানেও যদি দেখা যায় কোনো বিষয়ে এসএসসিতে ফল খারাপ, সে ক্ষেত্রে জেএসসির ফল বিবেচনা করা হতে পারে।
গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ সচিবালয়ের ভেতরে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে এইচএসসি ও সমমানের স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিল করা হয়। এরপর থেকে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। পরীক্ষার্থীদের অনেকেই এই সিদ্ধান্তের বিপক্ষে অবস্থান জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে চলছে ব্যাপক সমালোচনা। অনেকেই বলছেন, পরীক্ষা না দিয়ে ফলাফল প্রকাশিত হলে তা মন্দ নজির হয়ে থাকবে, যা নিয়ে শিক্ষার্থীদের পরবর্তী জীবনে ভুগতে হবে।
যদিও পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে যেসব শিক্ষার্থী আন্দোলন করেছিলেন তাঁদের যুক্তি হলো, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরীক্ষা বন্ধ থাকায় তাঁদের ওপর মানসিক চাপ তৈরি হয়। এ ছাড়া কোটা আন্দোলনের কারণে অনেক শিক্ষার্থী মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রস্তুত নন। অনেক সহপাঠী আহত, হাসপাতালে ভর্তি। এ অবস্থায় তাঁরা স্থগিত পরীক্ষাগুলো আর দিতে চান না। তাই তাঁরা ইতিমধ্যে হওয়া পরীক্ষা এবং স্থগিত বিষয়ে এসএসসির সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সঙ্গে মিলিয়ে (ম্যাপিং) এইচএসসির ফলাফল প্রকাশের দাবি জানান।
নটর ডেম কলেজের সাধারণ এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের নামে দেওয়া একটি বিবৃতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে তাঁরা বলছেন, এইচএসসির ফলাফল শুধু এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েই মূল্যায়ন করা উচিত। তাঁদের অবস্থান পরীক্ষার পক্ষে। তাঁরা বলছেন, শুধু আহত (ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত) শিক্ষার্থীদের তালিকা করে তাঁদের বিষয় ‘ম্যাপিং’ কিংবা ‘অটো পাস’, আর সাধারণ শিক্ষার্থীদের অবশিষ্ট পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়নই এই সমস্যার সমাধান বলে তাঁরা মনে করছেন।
বহু মানুষ পরীক্ষা বাতিলের সমালোচনা করে ফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছেন। কেউ কেউ বলছেন, পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতি ও মানসিক স্বস্তির জন্য আরেকটু বেশি সময় দিয়ে যেকোনোভাবে হোক পরীক্ষা নিলে আদতে শিক্ষার্থীদের ভালো হবে। আবার কেউ কেউ পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্তের পক্ষে অবস্থান জানিয়ে বলছেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনেকেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তাই পরীক্ষা বাতিলের যৌক্তিকতা রয়েছে।
এ বিষয়ে আজ সচিবালয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, তিনি মনে করেন, এ বিষয়ে আরও চিন্তাভাবনার অবকাশ ছিল। তবে ইতিমধ্যে অর্ধেক পরীক্ষা হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে এখন মূল্যায়নের বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি এককভাবে কিছু করবেন না।