এইচএসসি পেছানোর দাবি পরীক্ষার্থী-অভিভাবকদের একাংশের, কী বলছে শিক্ষা বোর্ড
ডেঙ্গুর রোগের প্রকোপ চলছে এখন সারা দেশেই। এ জন্য এইচএসসি ও সমমানের কোনো কোনো পরীক্ষার্থী ও তাঁদের অভিভাবক চান ১৭ আগস্টে পরীক্ষা শুরু না করে আরও কিছুদিন যেন পিছিয়ে দেওয়া হয়। পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের একাংশ পরীক্ষা পেছানোর দাবি করলেও শিক্ষা বোর্ডগুলো বলছে, এখন পর্যন্ত পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। ঘোষিত সময়েই পরীক্ষা শুরু হবে।
আসন্ন এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা সুষ্ঠু, নকলমুক্ত ও ইতিবাচক পরিবেশে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আজ মঙ্গলবার এ–সংক্রান্ত জাতীয় মনিটরিং ও আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক কমিটির সভা ডাকা হয়েছে। বেলা তিনটায় সভা শেষে এ বিষয়ে প্রেস ব্রিফিং করবেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
এখন ডেঙ্গুর প্রকোপ চলছে। আবার কোনো কোনো এলাকায় অতিবৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা–সংক্রান্ত সমস্যা হচ্ছে। এ কারণে কোনো কোনো পরীক্ষার্থী ও তাঁদের অভিভাবকদের দাবি, পরীক্ষাটি যেন আরও কিছুদিন পিছিয়ে দেওয়া হয়। তাঁদের কারও কারও দাবি, ডেঙ্গুর কারণে কোনো কোনো পরীক্ষার্থী ঠিকমতো প্রস্তুতি নিতে পারছেন না।
পরীক্ষা পেছানোর কোনো পরিকল্পনা নেই। এখন পর্যন্ত ঘোষিত সময়ে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্তেই আছি আমরা
১৭ আগস্ট শুরু হচ্ছে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা। ইতিমধ্যে সময়সূচি ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যান্য প্রস্তুতিও প্রায় সম্পন্ন।
শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত জুলাই মাসে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল শিক্ষা বোর্ডগুলো। কিন্তু তা নিয়ে আপত্তি ওঠে। কারণ, সেটি হলে পরীক্ষার্থীদের উচ্চমাধ্যমিক ক্লাস শুরুর পর এক বছর তিন মাসেই (১৫ মাস) এ পরীক্ষায় বসতে হতো। অথচ উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষাবর্ষ দুই বছরের। এ কারণে শিক্ষাবিদ ও অভিভাবকেরা বলে আসছিলেন, তাড়াহুড়া করে পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনায় শিক্ষার্থীরা পড়ার চাপে পড়ে। এতে শিখনঘাটতি থেকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। আবার জুলাইয়ে পরীক্ষা হলেও এসব শিক্ষার্থীর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ভর্তি পরীক্ষা হবে আগামী বছরের এপ্রিল থেকে জুন-জুলাইয়ে। ফলে দীর্ঘ সময়জুড়ে তাঁদের কোচিং করতে হবে, যার খরচের বোঝা পড়বে অভিভাবকদের ঘাড়ে। তাই প্রশ্ন ওঠে, উচ্চশিক্ষার ভর্তির সঙ্গে সমন্বয় না করে শুধু এইচএসসি পরীক্ষা আগে আগে নিয়ে কী লাভ?
এ নিয়ে প্রথম আলোসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর হওয়ার পর বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে শিক্ষা বোর্ডগুলো। তারই পরিপ্রেক্ষিতে জুলাইয়ের পরিবর্তে আগস্টে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
এখন ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দিয়েছে। আবার কোনো কোনো এলাকায় অতিবৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা–সংক্রান্ত সমস্যা হচ্ছে। এ কারণে কোনো কোনো পরীক্ষার্থী ও তাঁদের অভিভাবকদের দাবি, পরীক্ষাটি যেন আরও কিছুদিন পিছিয়ে দেওয়া হয়। তাঁদের কারও কারও দাবি, ডেঙ্গুর কারণে কোনো কোনো পরীক্ষার্থী ঠিকমতো প্রস্তুতি নিতে পারছেন না। এ নিয়ে একাধিক অভিভাবক প্রথম আলোয় ফোন করেও তাদের এ দাবির কথা জানিয়েছেন। কোনো কোনো পরীক্ষার্থী প্রথম আলোয় মেইল করেও একই ধরনের দাবির কথা জানায়।
এ নিয়ে শিক্ষা বিভাগের অবস্থান জানতে আজ মঙ্গলবার সকালে কথা হয় শিক্ষা বোর্ডগুলোর সমন্বয়সংক্রান্ত আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় উপকমিটির প্রধান ও ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকারের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পরীক্ষা পেছানোর কোনো পরিকল্পনা নেই। পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত ঘোষিত সময়ে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্তেই আছেন তাঁরা।
করোনার সংক্রমণের কারণে ২০২০ সালের মার্চ থেকে টানা প্রায় দেড় বছর দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সশরীর ক্লাস বন্ধ ছিল। সে কারণে শিক্ষাপঞ্জিতে এলোমেলো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, যা এখনো স্বাভাবিক হয়নি। স্বাভাবিক সময়ে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হতো ফেব্রুয়ারির শুরুতে। আর এইচএসসি পরীক্ষা হতো এপ্রিলের শুরুতে। এখন তা হচ্ছে আগস্টে।