৬ষ্ঠ, ৭ম, ৮ম ও ৯ম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার প্রস্তুতি কীভাবে, ভালো নম্বর কীভাবে
রমজান মাহমুদ ও খন্দকার আতিক
৬ষ্ঠ, ৭ম, ৮ম ও ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা হবে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এ বছর বার্ষিক পরীক্ষার সিলেবাস, মূল্যায়ন কাঠামো ও নমুনা প্রশ্ন প্রকাশ করেছে। শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষার প্রস্তুতি সঠিকভাবে নিতে হবে।
*NCTB’র সিলেবাস সংগ্রহ করো
প্রিয় শিক্ষার্থী, তোমাদের ২০২৪ সালে বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে NCTB’র সিলেবাস অনুসারে। পরীক্ষার সিলেবাস এরই মধ্যে প্রকাশ করেছে। পড়াশোনা পাতায় ৯ম শ্রেণির সিলেবাসটি ছাপা হয়েছে (১৯ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর)। ৬ষ্ঠ, ৭ম ও ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সিলেবাসটি NCTB’র ওয়েবসাইট www.nctb.gov.bd থেকে সংগ্রহ এখনই করে নাও।
*পরীক্ষার সময় আছে ২ মাস
এবার বার্ষিক পরীক্ষার সম্ভাব্য সময় নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ বা ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ। সে হিসেবে তোমরা প্রস্তুতির জন্য হাতে সময় পাবে মাত্র ২ মাস, অক্টোবর ও নভেম্বর। তাই এই দুই মাসের মধ্যে তোমাদের সিলেবাস শেষ করতে হবে। আমাদের বিশ্বাস, তোমরা মনোযোগসহকারে পড়লে তা শেষ করতে পারবে।
*সিলেবাস বুঝে নাও
NCTB’র দেওয়া সিলেবাসটি সহজেই তোমরা বুঝে নিতে পারবে। পাঁচ ধরনের প্রশ্নের সমন্বয়ে তোমার প্রতিটি বিষয়ের সিলেবাস সাজানো হয়েছে। সব কটি প্রশ্নের ধরনের সঙ্গে তোমরা কিন্তু আগেই পরিচিত আছো। এখন তুমি মনে করে দেখো পঞ্চম শ্রেণির বাষি৴ক পরীক্ষায় এ ধরনের অনেক প্রশ্নই ছিল।
বার্ষিক পরীক্ষা হবে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে
লিখিত পরীক্ষা হবে
লিখিত পরীক্ষার মোট নম্বর: ১০০
লিখিত পরীক্ষার মোট সময়: ৩ ঘণ্টা
*পড়ার প্রতি জোর দাও
একটা সত্যি কথা বলি শিক্ষক হিসেবে। এ বছর ‘আগের সিলেবাসে’র কারণে তোমরা ঠিকমতো ‘তোমার পাঠ্যবই’টি পড়োনি বা পড়া হয়ে ওঠেনি। এখন তোমার পাঠ্যবইগুলোর NCTB’র সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে বাকি দুই মাসে তুমি ভালোভাবে মনোযোগ সহকারে পড়ে নেবে। আগে ভালোভাবে সিলেবাসে যে যে অধ্যায় আছে, তা দেখে নাও। তারপর ভালোভাবে বুঝে পড়ো, পড়া রিভিশন দাও।
*পাঠ্যবই পড়া জরুরি
পরীক্ষায় ভালো করতে অবশ্যই পাঠ্যবই গুরুত্বপূর্ণ। পাঠ্যবইয়ের কোন কোন অধ্যায় পরীক্ষার জন্য NCTB নির্ধারণ করে দিয়েছে, তা দাগিয়ে নাও। তারপর প্রতিটি অধ্যায় খুব ভালোভাবে বুঝে পড়, রিভিশন দাও। তবেই তুমি পরীক্ষার সব প্রশ্নের উত্তর ঠিকভাবে দিতে পারবে।
*পড়ার রুটিন করে নাও
প্রতিদিন পড়ার রুটিন নিজেই তৈরি করে নেবে। রুটিন মানে সময়কে ভাগ করে নেওয়া। এতে পড়ায় শৃঙ্খলা আসবে। ভালো হবে পরীক্ষার প্রস্তুতি। ভালো প্রস্তুতি থাকলেই কেবল পরীক্ষা ভালো হবে, নম্বর ভালো পাবে। উদাহরণ হিসেবে বলি, বিজ্ঞানের একটা সংজ্ঞা বা কোনো বৈজ্ঞানিক সূত্র কি কখনো বানিয়ে বানিয়ে বা নিজের মতো করে লেখা যায়? এগুলো হবে হুবহু, একদম নিখুঁত।
*একটি দরকারি হিসাব
বার্ষিক পরীক্ষার প্রতিটি বিষয়ে তিনটি অংশ (১৫টি বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ১৫ নম্বর, ১০টি এককথায় উত্তর ১০ নম্বর এবং ১০টি সংক্ষিপ্ত উত্তর–প্রশ্নে ২০ নম্বর, মোট ৪৫ নম্বর) খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে তুমি একটু চেষ্টা করলে, সচেতন হলে ৪৫ নম্বরের মধ্যে ৪৫ নম্বরই পেতে পারো। বার্ষিক পরীক্ষায় এই ৪৫ নম্বর পাওয়ার হিসাবটি অবশ্যই মাথায় রাখবে।
*পড়ব তবে কেমন করে
যেহেতু পাঠ্যবইয়ের নির্ধারিত সিলেবাসের অংশ থেকে প্রশ্ন হবে, অতএব পাঠ্যবইই হবে তোমাদের প্রধান অবলম্বন। শিখন অভিজ্ঞতা (আগে যেটাকে আগে ছিল ‘অধ্যায়’) থেকে প্রশ্নের প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো জেনে নিতে হবে। তথ্যগুলো মনে রাখতে হবে। ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করতে পারার মতো যেসব ইঙ্গিত বা নির্দেশনা আছে, সেগুলো আয়ত্তে রাখতে হবে। অনুশীলনীগুলোর অবশ্যই সমাধান করে রাখতে হবে। একক কাজ, জোড়ায় কাজ বা দলগত কাজগুলো ভালোভাবে সম্পাদন যে করতে হবে, এটা তো তোমাদের জানাই আছে।
*লেখার অনুশীলন করো
গত বছর বা এ বছর তোমরা কোনো ধরনের পরীক্ষা দাওনি। সে জন্য তোমাদের পরীক্ষার খাতায় লেখার ধারাবাহিকতা, লেখার গতিময়তা কমে যেতে পারে। এটা কিন্তু স্বাভাবিক। তাই আজ থেকেই একটু একটু করে লেখার চেষ্টা করো, যাতে লেখার গতি আবার ফিরে আসে। আমাদের বিশ্বাস ৭ থেকে ১৫ দিন চেষ্টা করলেই তোমরা সফলকাম হবে।
*কেমন হবে মূল্যায়ন কার্যক্রম
প্রতিটি বিষয়ের আলাদা আলাদা সিলেবাস দেখেছ তো? প্রতিটি বিষয়ের মূল্যায়ন হবে মোট ১০০ নম্বরের মধ্যে। তার মধ্যে শিখনকালীন মূল্যায়নের জন্য ৩০% এবং লিখিত পরীক্ষার জন্য ৭০% নম্বর রাখা হয়েছে। বার্ষিক পরীক্ষার ফল প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে বিষয়ভিত্তিক গ্রেড পয়েন্ট নির্ধারণ পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে। শিখনকালীন মূল্যায়নের ক্ষেত্রে নির্ধারিত কাজ/ব্যবহারিক কাজ, অনুসন্ধানমূলক কাজ, শ্রেণির কাজ ইত্যাদি বিষয়শিক্ষকেরা সম্পাদন করে নেবেন। বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নের ধারা ও মানবণ্টন ইতিমধ্যে তোমরা জেনেছ। এতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন (বহুনির্বাচনি, এককথায় উত্তর), সংক্ষিপ্ত-উত্তর প্রশ্ন, রচনামূলক প্রশ্ন ইত্যাদি। পরীক্ষার মোট সময় ৩ ঘণ্টা।
*শিক্ষকের সহায়তা নাও
২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত তোমরা আগের কারিকুলামে পড়াশোনা করেছে। ষাণ্মাসিক মূল্যায়নেও তোমরা অংশ নিয়েছে। এখন NCTB’র নির্দেশনা অনুসারে বার্ষিক পরীক্ষা হবে। তোমরা এই বার্ষিক পরীক্ষা বিষয়ে একটু চিন্তিত। কেমন হবে পরীক্ষা? এসব নিয়ে তোমাদের একটুও টেনশন করার বা ঘাবড়ানোর কিছু নেই।
বার্ষিক পরীক্ষা, পরীক্ষার সিলেবাস, প্রশ্নের ধরন, কীভাবে পরীক্ষা হবে ইত্যাদি বিস্তারিত জানতে ও বুঝতে তোমরা এখনই তোমার বিদ্যালয়ের শিক্ষকের সহায়তা নাও। জানতে চাও যে যে বিষয়ে তোমার মনে খটকা আছে।
*অভিভাবকেরা একটু শুনুন
সম্মানিত অভিভাবক, আপনার সন্তানকে প্রতিদিন একটু সময় দিন। তাদের মনের ভেতরে প্রবেশ করার চেষ্টা করুন। মিশুন। বুঝুন। বন্ধু হোন। পাশে থাকুন। সমস্যা বোঝার চেষ্টা করুন। তবেই তার থেকে সর্বোচ্চটা বের করতে পারবেন। মোবাইল-আসক্তি থেকে বের হতে হবে। অতিরিক্ত ‘মোবাইল ব্যবহার’ মনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে সবচেয়ে বেশি। কাছে থেকে প্রতিদিন পরিমিত স্বাস্থ্যকর খাবার দান, পর্যাপ্ত ঘুমের সুযোগ করে দিন।
*লেখকেরা শিক্ষক