এখন ঢাকার সাত কলেজ চলবে ইউজিসির অধীন সমন্বিত কাঠামোর আওতায়
রাজধানীর সরকারি সাতটি বড় কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন থাকছে না, সেই সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে আগেই। এই কলেজগুলোর জন্য পৃথক একটি বিশ্ববিদ্যালয় করার পরিকল্পনা করছে সরকার। কিন্তু সেই বিশ্ববিদ্যালয় না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তত্ত্বাবধানে একটি সমন্বিত কাঠামোর অধীন চলবে এই সাত কলেজের কাজ। এই কাঠামোর পরিচালক হিসেবে কাজ করবেন এই সাত কলেজের যেকোনো একজন অধ্যক্ষ। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর, ভর্তি দপ্তর, রেজিস্ট্রার দপ্তর এবং হিসাব দপ্তরের প্রতিনিধিরাও থাকবেন।
ইউজিসির এমন সুপারিশ বাস্তবায়ন করার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে অনুরোধ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ২ মার্চের এক চিঠিতে এ অনুরোধ করা হয়েছে। জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার একজন কর্মকর্তা গতকাল সোমবার এই অনুরোধপত্র দেওয়ার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন।
ঢাকার এই সাত সরকারি কলেজ হলো ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। এই কলেজগুলোতে শিক্ষার্থী প্রায় দুই লাখ। শিক্ষক এক হাজারের বেশি।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সরকারি কলেজগুলোকে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রথম দফায় রাজধানীর এই সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়েও পরীক্ষা, মানসম্মত শিক্ষাসহ অন্য সমস্যা সমাধান পুরোপুরি হয়নি। ফলে বারবার আন্দোলনে নেমেছেন এই সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই সাত কলেজে চলতি ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকেই তাদের অধীন ভর্তি না করার সিদ্ধান্ত নেয়। এ নিয়ে চলতি শিক্ষাবর্ষের ভর্তির কার্যক্রম জটিলতার মুখে পড়ে। এরই মধ্যে এই সাত কলেজের জন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয় করার পরিকল্পনা নেয় সরকার। যার রূপরেখা নিয়ে কাজ করছে ইউজিসি। প্রাথমিকভাবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ‘জুলাই ৩৬ বিশ্ববিদ্যালয়’ করার প্রস্তাব করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজের নেতৃত্বাধীন কমিটি। যদিও এটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। উপরন্তু তারা আরও নাম প্রস্তাবের আহ্বান করেছে। তবে একটি বিশ্ববিদ্যালয় করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এ অবস্থায় অন্তর্বর্তী ব্যবস্থায় এই সাত কলেজ কীভাবে চলবে, তার একটি রূপরেখার প্রস্তাব করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে ইউজিসি। সেটিই এখন বাস্তবায়নের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুরোধ করেছে মন্ত্রণালয়।
ইউজিসির সুপারিশপত্রে বলা হয়েছে, যেসব শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন চলমান শিক্ষা কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দায়িত্বশীলতার সঙ্গে বর্তমান ব্যবস্থাই চালু রাখবে। আর ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের যাবতীয় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় সমন্বিত কাঠামোর মধ্যে চলবে। একটি সনদপ্রাপ্ত পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় বা সমকক্ষ প্রতিষ্ঠান না হওয়া পর্যন্ত সাময়িকভাবে এ কাঠামোর অধীন চলবে এই সাত কলেজের কাজ। এই কাঠামোর কার্যক্রম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরে হবে। এ ক্ষেত্রে এই কাঠামোর পরিচালক হিসেবে যে কলেজের অধ্যক্ষ কাজ করবেন, সেই কলেজে এই কাঠামোর কার্যালয় হবে। কাঠামোর অধীন সব হিসাব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাদা ব্যাংক হিসাবে পরিচালিত হবে।
এ কাঠামোর রূপটি কেমন হবে, সেটিরও প্রস্তাব করে দিয়েছে ইউজিসি। এতে বলা হয়েছে, এই কাঠামোয় ইউজিসির একজন সদস্যের নেতৃত্বে নজরদারি সংস্থা থাকবে। এই নজরদারি সংস্থায় পরিচালক হিসেবে থাকবেন এই সাত কলেজের মনোনীত যোগ্য ও প্রশাসনিক কাজে অভিজ্ঞ একজন অধ্যক্ষ। ইউজিসির একটি সূত্র জানিয়েছে, এ ক্ষেত্রে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ হতে পারেন এই পরিচালক।
ইউজিসি বলছে, এই কাঠামোয় শিক্ষার্থীসংক্রান্ত প্রশাসনিক কার্যক্রমের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তরের প্রতিনিধি থাকবেন। এ ছাড়া পরীক্ষা ও হিসাবসংক্রান্ত কাজের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা ও হিসাব বিভাগের প্রতিনিধিরা থাকবেন। আর ভর্তির জন্য থাকবেন অনলাইন ভর্তি কমিটি।
প্রস্তাবিত এই ব্যবস্থা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটে জরুরি ভিত্তিতে অনুমোদন নিতে হবে। এ ছাড়া সাত কলেজের ভর্তি, পরীক্ষা ও অন্য কার্যক্রমের তথ্য আদান-প্রদানের জন্য নিজ নিজ কলেজের অধ্যক্ষের নিয়ন্ত্রণে ‘হেল্প ডেস্ক’ থাকবে। ইউজিসি এই কাঠামোর বিষয়ে সময়ে সময়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবে।