প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষা দুই বছর করার পরিকল্পনা, জানালেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী ‘জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ-২০২৪’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেনছবি: বাসস

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শিশুশিক্ষার্থীদের জন্য প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষা দুই বছরের করার পরিকল্পনা করছে সরকার। শিক্ষার্থীদের সুপ্ত মেধা বিকাশে শিক্ষাক্রমে আধুনিক প্রযুক্তির জ্ঞান আনা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ-২০২৪ উদ্বোধন ও প্রাথমিক শিক্ষা পদক-২০২৩ প্রদানকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, পড়াশোনার জন্য নয়, খেলাধুলার মাধ্যমে ছোট শিশুদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা প্রতিভা বিকাশের জন্য সরকার প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষাকে এক বছরের পরিবর্তে দুই বছরের করতে চায়। তিনি বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশের পরিচালক হবে আজকের শিশুরাই। প্রযুক্তি-জ্ঞানসম্পন্ন নতুন প্রজন্মই দেশকে এগিয়ে নেবে সমৃদ্ধির দিকে। আর তাই কোমলমতি শিশুদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে এগিয়ে আসতে হবে সবাইকে। দেশের সব প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাব তৈরি করে দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় পাঁচ বছরের বেশি বয়সী শিশুরা এক বছর মেয়াদি প্রাক্‌-প্রাথমিক স্তরে পড়াশোনা করে প্রথম শ্রেণিতে যায়। দুই বছরের শিক্ষাক্রম বাস্তবায়িত হলে শিশুর বয়স চার বছরের বেশি হলেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাবে এবং ছয় বছর বয়স পর্যন্ত প্রাক্‌-প্রাথমিক স্তরে পড়বে।

আরও পড়ুন

এবারের জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহের প্রতিপাদ্য ‘শিশুবান্ধব প্রাথমিক শিক্ষা, স্মার্ট বাংলাদেশের দীক্ষা’। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার একটি সুষম, জনকল্যাণমুখী, সর্বজনীন ও মানসম্মত শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে চায়।

প্রধানমন্ত্রী শিশুদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর জ্ঞানের মাধ্যমে গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন, যেন একদিন তারা চাঁদও জয় করতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমাদের একদিন চাঁদে যেতে হবে। আমাদের চাঁদকে জয় করতে হবে। কাজেই আমরা আমাদের সন্তানদের শৈশব থেকেই বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা দিতে হবে।’

আরও পড়ুন
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ১২৬ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ‘প্রাথমিক শিক্ষা পদক-২০২৩’ প্রদান করেন
ছবি: বাসস

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আজ এটাই চাই যে আমাদের বাংলাদেশ ২০৪১ সাল নাগাদ “স্মার্ট বাংলাদেশ” হিসেবে গড়ে উঠবে। যেখানে আমাদের স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট গভর্নমেন্ট, স্মার্ট ইকোনমি এবং সোসাইটিও স্মার্ট হবে। আমাদের আজকের শিশুরা আগামী দিনের স্মার্ট বাংলাদেশের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেবে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন একটা সুন্দর জীবন পেতে পারে, সে জন্য “ডেল্টা পরিকল্পনা-২১০০” প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।’

আরও পড়ুন

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কাজেই সেই লক্ষ্য নিয়েই আমাদের শিশুদের শিক্ষা-দীক্ষায়, সংস্কৃতিচর্চা, খেলাধুলা—সবদিক থেকেই উপযুক্ত নাগরিক হিসেবেই তাদের গড়ে তুলতে চাই। আর তা করার জন্য যা যা করণীয়, অবশ্যই আমরা তা করব।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘অর্থাৎ এই যে প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ জনশক্তি, শিশুকাল থেকেই ধীরে ধীরে তারা গড়ে উঠবে। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে এবং দেশের উন্নয়নে তাদের চিন্তাভাবনা, তারা আরও নতুন নতুন উদ্ভাবনী শক্তি দিয়েই দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। সেটাই আমি চাই।’ আজকের শিশু আগামী দিনের নাগরিক ও এই দেশের কর্ণধার হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই শিশুদের মধ্য থেকেই কেউ মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী হবে, বড় বড় সংস্থায় চাকরি করবে, বৈজ্ঞানিক হবে। এমনকি একসময় তো আমাদের চাঁদেও যেতে হবে। চাঁদও জয় করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘সেই বিজ্ঞানসম্পন্ন জ্ঞান যেন আমাদের শিশুরা এখন থেকেই পায়, সে জন্য ব্যবস্থা করতে হবে। ইতিমধ্যে গবেষণা ও শিক্ষার জন্য আমি বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছি। অ্যারোস্পেস অ্যান্ড এভিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয়ও (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়) করেছি। অ্যারোনটিক্যাল সেন্টার করে দিয়েছি। কাজেই এখন থেকেই আমাদের শিশুদের সেভাবে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।’

আরও পড়ুন

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ১২৬ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ‘প্রাথমিক শিক্ষা পদক-২০২৩’ প্রদান করেন। শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে ১৮টি ক্যাটাগরিতে ১২৬ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৬ জন শিক্ষার্থী, ১৫ ব্যক্তি এবং ৩টি সংস্থা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক গ্রহণ করে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলী এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষার উন্নয়নে সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

আরও পড়ুন