বেশির ভাগ শিক্ষার্থী ক্লাসে ফেরেননি, ভিসিসহ অন্তত ২৪ পদ শূন্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিমের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবিতে শিক্ষকদের আন্দোলনে গত ১ জুলাই থেকে কার্যত অচল হয়ে পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। কোটা সংস্কার আন্দোলনে দমনের লক্ষ্যে ১৭ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে পুলিশি অভিযানের মাধ্যমে হল থেকে শিক্ষার্থীদের চলে যেতে বাধ্য করা হয়।

আন্দোলনে সরকার পতনের পর ৬ আগস্ট হলগুলো খুলে দেওয়া হয়। পরে গত রোববার থেকে ক্লাস-পরীক্ষা শুরুর সিদ্ধান্ত হলেও সিংহভাগ শিক্ষার্থী এখনো ক্লাসে ফেরেননি। এ ছাড়া উপাচার্যসহ বিভিন্ন পদ থেকে অন্তত ২৪ জনের পদত্যাগের পর সেগুলো শূন্য রয়েছে।

সব মিলিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো অচলাবস্থা কাটেনি। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ৯ মার্চ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ভর্তিপ্রক্রিয়া শেষে ১ জুলাই থেকে নবীন শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মাসের শুরু থেকেই অচলাবস্থার কারণে তাঁরা এখনো ক্লাস করতে পারেননি।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ৫ আগস্টের আগপর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক পদগুলোতে ছিলেন আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের শিক্ষকেরা। ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হওয়ার পর ১০ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র পাঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামাল। এর দুদিন আগে প্রক্টর মো. মাকসুদুর রহমান, ১৩ জন সহকারী প্রক্টর ও সাতটি হলের প্রাধ্যক্ষ উপাচার্যের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। উপাচার্যসহ এসব পদে এখনো কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে প্রশাসনিক শূন্যতা বিরাজ করছে। অবশ্য দুই সহ–উপাচার্য মুহাম্মদ সামাদ ও সীতেশ চন্দ্র বাছার এবং কোষাধ্যক্ষ মমতাজ উদ্দিন আহমেদ এখনো পদে বহাল আছেন। তাঁরা শুধু রুটিন কাজগুলো করছেন। তবে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে গতকাল সোমবার কলা অনুষদের ডিন আবদুল বাছির ও চারুকলা অনুষদের ডিন নিসার হোসেন পদত্যাগ করেছেন। বাকি আটজন ডিনের মধ্যে তিনজন এই প্রতিবেদককে বলেছেন, তাঁরাও পদত্যাগের কথা ভাবছেন।

এর বাইরে আইন অনুষদের ডিন মো. রহমত উল্লাহ, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক এম অহিদুজ্জামান এবং আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের পরিচালক সাঈদুর রহমানের পদত্যাগের দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। তবে এখনো তাঁদের পদত্যাগের খবর পাওয়া যায়নি।

উপাচার্য নিয়োগের জন্য অপেক্ষা

এমন পরিস্থিতির মধ্যে আজ সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দু-তিনটি বিভাগ-ইনস্টিটিউটে ক্লাস এবং দু-একটি জায়গায় পরীক্ষা হয়েছে বলে জানালেন সহ–উপাচার্য সীতেশ চন্দ্র বাছার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষকেরা বিভাগ-ইনস্টিটিউটে যাচ্ছেন। কিন্তু অধিকাংশ শিক্ষার্থী হয়তো মনে করছেন না যে পরিস্থিতি ক্লাস-পরীক্ষার অনুকূল হয়েছে। ফলে তারা ক্লাসে আসছে না।

উপাচার্য না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম এখন অনেকটাই স্থবির। সীতেশ চন্দ্র বাছার বলেন, ‘নতুন উপাচার্য নিয়োগ হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে আমরা মনে করি।’

মুহাম্মদ সামাদ, সীতেশ চন্দ্র বাছার ও মমতাজ উদ্দিন আহমেদ নিয়মিত অফিস করছেন। সীতেশ চন্দ্র বলেন, শিক্ষার্থীদের দিক থেকে চাপ অনুভব করলে পরিস্থিতি অনুযায়ী তিনি, মুহাম্মদ সামাদ ও মমতাজ উদ্দিনও পদত্যাগের বিষয়টি বিবেচনা করবেন।