২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

করোনার পর নবম শ্রেণিতে অনুপস্থিতি সবচেয়ে বেশি

ফাইল ছবি

করোনা মহামারিতে ছুটি শেষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পর মাধ্যমিক পর্যায়ে নবম শ্রেণিতে অনুপস্থিতি সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া প্রাথমিকে কম উপস্থিতি ছিল চতুর্থ শ্রেণিতে। শিক্ষা নিয়ে কাজ করা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে গঠিত জোট এডুকেশন অ্যালায়েন্স বাংলাদেশের (ইএবি) এক জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে।

গতকাল বুধবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে ইএবি শিক্ষা সম্মেলনের আয়োজন করে। সেখানে জরিপের ফলাফল তুলে ধরা হয়।

করোনা-পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফেরাতে ২০২১ সালে গঠিত হয়েছিল ‘নিরাপদে ইশকুলে ফিরি’ নামের জোট। সেটি এখন ‘ইএবি’ নামে পরিচালিত হবে।

ইএবি ২০২১ ও ২০২২ সালে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিয়ে জরিপটি করে। জাতীয় পর্যায়ে ২০২১ সালে ৩২৮টি এবং ২০২২ সালে ২৬৮টি বিদ্যালয়ের ওপর ওই জরিপ করা হয়। এতে ২০২১ সালে সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বরের একেকটি সপ্তাহ এবং ২০২২ সালে জুলাই ও আগস্ট মাসের উপস্থিতি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

ইএবির জরিপ বলছে, সার্বিক উপস্থিতি ২০২১ সালের চেয়ে ২০২২ সালে ভালো ছিল। এ ছাড়া প্রাথমিকে গত দুটি বছরেই চতুর্থ শ্রেণিতে উপস্থিতি কম ছিল। তবে প্রথম শ্রেণির উপস্থিতি বেশি ছিল।

মাধ্যমিকের ওপর করা জরিপে দেখা গেছে, ২০২১ সালে নবম শ্রেণিতে উপস্থিতি ছিল ৫৭ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ২০২২ সালে তা হয় ৬৫ দশমিক ৮ শতাংশ। পরের বছর কিছুটা বাড়লেও অন্যান্য শ্রেণি বিবেচনায় উপস্থিতি কম। জরিপের পর্যালোচনায় বলা হয়, এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার আগেই এই ঝরে পড়ার হার দেখা যাচ্ছে।

বিগত দুটি বছরেই ছেলেশিক্ষার্থীর চেয়ে মেয়েশিক্ষার্থীর উপস্থিতি বেশি। তবে ইএবির জরিপ বলছে, মাধ্যমিক পর্যায়ে ছেলেশিক্ষার্থী বেশি ঝরে পড়েছে। পরিবারের আর্থিক টানাপোড়েনের কারণে ছেলেদের কাজে যুক্ত হওয়ার প্রবণতা দেখা গেছে বলে জরিপে উল্লেখ করা হয়।

ইএবি জরিপে স্কুলে অনুপস্থিতির পেছনে যেসব কারণের কথা উল্লেখ করেছে, তার মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়া, বাল্যবিবাহ, পরিবার অন্য জায়গায় চলে যাওয়া, অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশেষ করে কওমি মাদ্রাসায় চলে যাওয়া, পড়ালেখায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলা ইত্যাদি।

এ ছাড়া বলা হয়, লকডাউন চলাকালে শিক্ষার্থীরা বিরক্তি, একাকিত্ব, বিচ্ছিন্নতা ও মানসিক চাপে ভুগেছে। বিদ্যালয় খোলার পর এসব সমস্যা কমে এলেও শেখায় অসুবিধা, পড়া বুঝতে সমস্যা, অন্যদের সঙ্গে মিশতে না পারার মতো সমস্যায় ভোগে।

গতকাল দিনব্যাপী শিক্ষা সম্মেলনের সমাপনী পর্বে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, শিক্ষা নিয়ে সংগঠিত হওয়ার পাশাপাশি মাঠে কার্যক্রমে সোচ্চার হতে হবে। শিক্ষা দিবস, শিক্ষার বাজেটসহ পুরো শিক্ষাক্রমের উন্নয়নে বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা, প্রচারাভিযান করার ওপর জোর দেন তিনি।

মানসম্মত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষাক্রমের জন্য সরকার চেষ্টা করে যাচ্ছে বলে জানান জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) নতুন চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম। তিনি বলেন, পাঠ্যপুস্তকে যে ভুল আছে তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছে এনসিটিবি এবং তা শুধরে নিচ্ছে।

ব্র্যাকের জ্যেষ্ঠ পরিচালক কে এম মোর্শেদ জোটের নতুন নাম ও উদ্দেশ্যের কথা তুলে ধরেন। তিনি জানান, ‘সবার জন্য একীভূত মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণ’ স্লোগান নিয়ে এই জোট কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা জনপ্রিয় করতেও উদ্যোগ নেবে। পাশাপাশি সরকারকে সহায়তা করে যাবে।

সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর অনো ভ্যান ম্যানেন, এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর পরিচালক নুরুজ্জামান শরীফ প্রমুখ।