>
ইতিহাস, বিজ্ঞান, সাহিত্য, প্রকৌশল...কত রকম বিষয় আছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয়। কোন বিষয়ে আমি পড়ব, সিদ্ধান্ত নেওয়াই কঠিন। স্বপ্ন নিয়ের এই বিভাগে আমরা একেকটি বিষয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিই। আজ যন্ত্রকৌশল (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং) সম্পর্কে বলেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক তানভীর হোসেন
কারা পড়বে?
যন্ত্রকৌশলকে আমরা ইংরেজিতে বলি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং। প্রকৌশল জগতের মানুষেরা এই বিষয়কে ‘মাদার অব ইঞ্জিনিয়ারিং’ও বলেন। আমাদের চারপাশের প্রতিটা জিনিস; যা নড়ছে, ভাঙছে—এর সবই যন্ত্রকৌশলের অন্তর্ভুক্ত। যারা তার চারপাশের জিনিসগুলো সম্পর্কে ভাবে, গাড়ি কীভাবে চলে, রকেট কীভাবে মহাকাশের অনন্ত পথে উড়ে যায়, প্লেন কেন ল্যান্ড করার সময় ব্রেক করে না...এসব থেকে শুরু করে আমাদের ঘরের ফ্রিজ, ওভেন, ওয়াশিং মেশিন কীভাবে কাজ করে কিংবা লিফট কীভাবে ওপরে ওঠে—যাদের মনে এসব নিয়ে প্রশ্ন জাগে, তারাই পড়বে যন্ত্রকৌশল৷
কী পড়ানো হয়?
যন্ত্রকৌশলের একদম মৌলিক বিষয় হচ্ছে তিনটি। হিট ট্রান্সফার, ফ্লুইড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ডায়নামিকস এবং মেকানিকস। অনেকে হয়তো ভাবতে পারেন যে যন্ত্রকৌশল মানেই যন্ত্র নিয়ে নাড়াচাড়া করা, কিন্তু এখানে তত্ত্বীয় অনেক বিষয়ও আছে। একটা গাড়ি কেন চলে কিংবা গাড়িতে কোনো সমস্যা কেন হয়, হলে কী করতে হবে—এই সব বিষয় সমাধান করতে ব্যবহারিক জ্ঞানের আগে কিন্তু প্রয়োজন তত্ত্বীয় জ্ঞান। পুরো চার বছরে যা যা পড়ানো হয় তা যদি খুব সংক্ষেপে বলা হয়:
প্রথম বছর—পুরো যন্ত্রকৌশল সম্পর্কে একটি খসড়া ধারণা, পাশাপাশি বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজগুলো সম্পর্কে জানা।
দ্বিতীয় বছর—থার্মোডাইনামিকস, মেকানিকস, সলিড মেকানিকসের বিভিন্ন তত্ত্ব।
তৃতীয় বছর—ফ্লুইড ডাইনামিকস, হিট ট্রান্সফার; তথা যন্ত্রকৌশলের একদম মৌলিক বিষয়গুলো।
চতুর্থ বছর—যে যার ইচ্ছামতো রিনিউয়েবল ইঞ্জিনিয়ারিং, অটোমোবাইল, মেকাট্রনিকস, রোবটিকস, এরোডায়নামিসক ইত্যাদি বিশেষায়িত বিষয় পড়তে পারে।
ক্যারিয়ার কোথায়?
যন্ত্রকৌশল সম্পর্কে অনেকেরই একটা ভুল ধারণা আছে, এই বিষয়ে পড়ালেখা করে দেশে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ নেই৷ কথাটা অনেকাংশেই ভুল। দেশের বিভিন্ন পাওয়ার প্ল্যান্টে প্রতিনিয়ত যন্ত্রকৌশলী দরকার হচ্ছে। বাংলাদেশে গড়ে উঠছে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান, আর যেকোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্যই যন্ত্রকৌশলীরা আবশ্যক। এমনকি দেশের বাইরে বিভিন্ন অটোমোবাইল প্রতিষ্ঠানে, ইনটেল থেকে শুরু করে আরও অনেক বহুজাতিক, আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠানেও বাংলাদেশের অনেক যন্ত্রকৌশলী নিজের যোগ্যতায় গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন। এ ছাড়া আমাদের দেশের বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ইউরোপ–আমেরিকায় অহরহ যাচ্ছেন উচ্চতর পড়ালেখা ও গবেষণার কাজে।
ভবিষ্যৎ কী?
প্রকৌশলের মধ্যে অন্যতম পুরোনো শাখা যন্ত্রকৌশল। এত দিন চলে যাওয়ার পরও যন্ত্রকৌশলীরা স্বমহিমায় প্রকৌশল জগতে অবদান রেখে যাচ্ছেন তাঁদের নিজেদের মতো করে। ভবিষ্যৎ বিশ্বে শক্তির সংকট মোকাবিলায়ও অন্যতম ভূমিকা রাখবেন যন্ত্রকৌশলীরা। এককথায় বলতে গেলে,যন্ত্রকৌশলের ভবিষ্যতের কথা আলাদা করে বলার প্রয়োজন নেই। যত দিন সভ্যতা থাকছে, যন্ত্রকৌশলীদের প্রয়োজন থাকবেই।