বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি করতে উপাচার্যদের আবারও চিঠি দিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ফাইল ছবি

দেশের সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বার্থ ও দাবি বিবেচনা করে চলমান ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি কার্যক্রম কঠোরভাবে মেনে চলতে গুচ্ছভুক্ত সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে আবারও নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এর আগে গত ডিসেম্বরেও একই ধরনের নির্দেশনা দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু এরই মধ্যে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ রকম অবস্থায় কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াই এবার সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গুচ্ছভুক্ত হয়ে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষা নেবে।

আগামী ২৫ এপ্রিল গুচ্ছভুক্ত এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হবে। তবে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় দোদুল্যমান থাকায় কয়টি বিশ্ববিদ্যালয় এবার গুচ্ছভুক্ত হয়ে ভর্তি পরীক্ষা নিচ্ছে, তা এখনো চূড়ান্ত করা যায়নি। এর মধ্যে ভর্তি–ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার জন্য আন্দোলন করা হচ্ছে।

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভোগান্তি এবং খরচ কমাতে দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু করা হয়েছিল গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ থেকে তা শুরু হয়। প্রথমে হয় কৃষি ও কৃষিশিক্ষা প্রধান সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এরপর চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট), খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) এবং রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) একটি গুচ্ছভুক্ত হয়ে ভর্তি পরীক্ষা নিচ্ছে। আর সর্বশেষ দেশের ২৪টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় একটি গুচ্ছভুক্ত হয়ে স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষা নেয়।

এই প্রক্রিয়ায় ভর্তি-ইচ্ছুক একজন শিক্ষার্থী একটি পরীক্ষা দিয়েই তাঁর যোগ্যতা ও পছন্দ অনুযায়ী গুচ্ছে থাকা যেকোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারছেন। কিন্তু এবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বের হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আলাদাভাবে ভর্তির কার্যক্রম শুরু করেছে। আরও একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় বেরিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে।

এ অবস্থায় আজ সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের পক্ষে যুগ্ম সচিব শারমিনা নাসরীনের সই করা এক চিঠিতে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি কার্যক্রম কঠোরভাবে মেনে চলতে উপাচার্যদের বলা হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় সুষ্ঠু উন্নয়ন ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ২০২০ সাল থেকে দেশের সরকারি সাধারণ, কৃষি, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্নাতক (সম্মান) পর্যায়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম চালু করা হয়। একটি শিক্ষার্থীবান্ধব কার্যক্রম হিসেবে এই পদ্ধতি শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সাধারণ জনগণের কাছে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে, এই গুচ্ছভুক্ত কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুরোধ অগ্রাহ্য করে নিজস্ব উদ্যোগে পৃথকভাবে ভর্তি কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এককভাবে ভর্তি পরীক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ করলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য তা বাড়তি আর্থিক-মানসিক চাপ ও বিভ্রান্তির সৃষ্টি করবে। এ ছাড়া উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা কঠিন হয়ে পড়বে। ইতিমধ্যে অভিভাবক ও ভর্তি–ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে গুচ্ছ পদ্ধতি বহাল রাখার পক্ষে একাধিকবার স্মারকলিপি পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি–ইচ্ছুক প্রায় পাঁচ লাখ শিক্ষার্থীর পক্ষে গুচ্ছ পদ্ধতি বাতিলের (কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের) সিদ্ধান্ত মেনে না নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ একমত উল্লেখ করে চিঠিতে আরও বলা হয়, গুচ্ছ পরীক্ষা পদ্ধতির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যেসব অসুবিধা সৃষ্টি হচ্ছে, তা মোকাবিলা করে কীভাবে এই পদ্ধতি সবার কাছে আরও গ্রহণযোগ্য, ত্রুটিমুক্ত ও গতিশীল করা যায়, সে বিষয়ে সব পক্ষের সঙ্গে বসে পর্যালোচনা করে সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

আরও পড়ুন