স্টিভ জবসকে কেন ঈর্ষা করতেন বিল গেটস?

স্টিভ জবস ও বিল গেটস
ছবি: রয়টার্স

তিক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী থেকে একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া এবং শেষ পর্যন্ত বন্ধু হওয়ার ইতিহাস রয়েছে মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস ও অ্যাপল প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবসের মধ্যে। প্রযুক্তি জগতের মধ্যে দুই শক্তিশালী ব্যক্তির যাত্রা প্রায় একই সময়ে শুরু হয়েছিল। তাঁরা সত্তর ও আশির দশকে অ্যাপল ও মাইক্রোসফটের মতো প্রতিষ্ঠান শুরু করেন। ৯ বছর আগে স্টিভ জবসের মৃত্যুর পর থেকেই বিল গেটস প্রায় সময়েই তাঁদের সম্পর্কের বিষয়টি উল্লেখ করেন।

সম্প্রতি আর্মচেয়ার এক্সপার্ট পডকাস্টে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিল গেটস স্টিভ জবসকে ‘জিনিয়াস’ বলে উল্লেখ করেছেন। বিল গেটস বলেন, তিনি অ্যাপলের কিংবদন্তি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে তাঁর প্রতিভার কারণে তিনি ঈর্ষা করতেন।


বিল গেটস স্বীকার করেছেন, স্টিভ জবসের যে চমক ছিল তাতে তাঁর ঈর্ষা হতো। তিনি ছিলেন সহজাত প্রতিভাধর। অ্যাপলে ফিরে আসার পর স্টিভ জবস যা করেছিলেন তা আর কারও পক্ষে করা সম্ভব ছিল না। আমি নিজেও হয়তো তা করতে পারতাম না।

স্টিভ জবস মানুষকে অতি অনুপ্রেরণা দেওয়ার ক্ষেত্রে দারুণ জাদুকর ছিলেন।
বিল গেটস

মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, মানুষকে অনুপ্রেরণা দেওয়ার ক্ষেত্রে স্টিভ জবস জাদুকর ছিলেন। তিনি স্টিভ জবসের এ গুণটার কারণেই তাঁকে বেশি ঈর্ষা করতেন।
কৌতুক করে বিল গেটস বলেন, স্টিভ জবস মানুষকে অতি অনুপ্রেরণা দেওয়ার ক্ষেত্রে দারুণ জাদুকর ছিলেন। তিনি নিজেও অবশ্য ছোটখাটো জাদুকর ছিলেন বলে জবসের জাদুর শিকার হননি। তিনি জবসকে জাদু করার বিষয়টি দেখতে পেতেন।


এর আগের অনেক সাক্ষাৎকারে বিল গেটস জবসের প্রশংসা করে বলেন, প্রতিভাধর ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে জবসের তুলনা ছিল না। এ ছাড়া তাঁর নকশা জ্ঞান ছিল চমৎকার।


বিল গেটসের ভাষ্য, স্টিভ জবস অ্যাপলে ফিরে আসার আগে প্রতিষ্ঠানটি হারিয়ে যাওয়ার পথে ছিল। জবস এসে অ্যাপলকে উদ্ধার করেন। অনেক মানুষ তাঁকে নকল করার চেষ্টা করেন এবং তাঁর সম্পর্কে খারাপ ভবিষ্যদ্বাণী করেন। কিন্তু জবস তাঁর দৃঢ়তা দিয়ে দারুণ ইতিবাচক জিনিসগুলো কিনতে সক্ষম হয়েছিলেন।


অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারের সঙ্গে দীর্ঘদিন লড়েছিলেন স্টিভ। হার মেনে ২০১১ সালের ৫ অক্টোবর ৫৬ বছর বয়সে মারা যান। আজও শ্রদ্ধাভরে তাঁকে স্মরণ করেন অ্যাপলপ্রেমীরা।

মাত্র ২০ বছর বয়সে এক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ির গ্যারেজে বসে যে ম্যাক কম্পিউটারের ডিজাইন করেন স্টিভ, তার ১০ বছরের মাথায় সেই উদ্যোগই পরিণত হয় দুই বিলিয়ন ডলারের অ্যাপল কোম্পানি আর চার হাজার কর্মীর জীবিকার ক্ষেত্র।

৩০ বছর বয়সে স্টিভ বাজারে ছাড়েন তাঁর অসাধারণ সৃষ্টি ম্যাকিন্টোশ। সেই বছরই অ্যাপল থেকে স্টিভকে বের করে দেওয়া হয়। যে কোম্পানি তিনি নিজের হাতে গড়েন, সেখান থেকে তাঁকেই বের করে দেওয়া, কেবল বিপর্যয়ই নয়, স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যাওয়া আরেক গল্পের সূচনা।


স্টিভ যখন কী করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না, তখন তাঁর মনে হলো, উদ্যোক্তা হওয়ার সম্ভাবনায় যে প্রজন্ম তাঁর হাতে তুলে দিয়েছিল সামনে এগিয়ে চলার ব্যাটন, তাদের হতাশ করে ব্যাটনটি তিনি মাটিতে ফেলে দিয়েছেন। কাজটি ঠিক নয় বুঝতে পেরে আবারও এগিয়ে চলেন স্টিভ জবস। তাঁর মনে হলো অ্যাপল থেকে তাঁর বিদায় জীবনের বড় বাঁক পরিবর্তন। তিনি আবার নতুন করে শুরু করার মন্ত্র পেলেন।

পরের পাঁচ বছরে স্টিভ নেক্সট এবং পিক্সার নামের দুটি নতুন কোম্পানি গড়লেন, ঠিক এই সময়ে প্রেমে পড়লেন লরেন্স নামের এক অসাধারণ নারীর। বিশ্বের প্রথম কম্পিউটার অ্যানিমেটেড ফিচার চলচ্চিত্র ‘টয় স্টোরি’ তৈরি করল পিক্সার। আর ঠিক এই সময়ে অ্যাপল কিনে নিল নেক্সট—স্টিভ নাটকীয়ভাবে আবারও ফিরে এলেন অ্যাপলে। নেক্সটে যে প্রযুক্তি স্টিভ ও তাঁর টিম উদ্ভাবন করে, সেটিই পরবর্তী সময়ে চলে আসে অ্যাপলের প্রাণকেন্দ্রে, যাকে তাঁরা বলছেন অ্যাপল রেনেসাঁ।

স্টিভ জীবনের এই বাঁকগুলোকে অনিবার্য মনে করে এগিয়ে চলেন নিজের গন্তব্যে। তিনি মনে করেছিলেন, অ্যাপল থেকে তাঁকে সেদিন জোর করে বের করে না দিলে হয়তো আজকের ‘এই তিনি’ কোনো দিনই হয়ে উঠতে পারতেন না।


স্টিভ জবসের হাতে গড়া সেই অ্যাপল কোম্পানি গত বুধবার প্রথম মার্কিন কোম্পানি হিসেবে দুই ট্রিলিয়ন ডলার স্পর্শ করল। ২০১৮ সালে এক ট্রিলিয়ন ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করে অ্যাপল। মাত্র দুই বছরের মধ্যে পুঁজিবাজারে কোম্পানির মূল্য দুই ট্রিলিয়ন হয়ে গেল (১ ট্রিলিয়ন সমান ১ লাখ কোটি)।


অ্যাপলের বর্তমান প্রধান নির্বাহী হন টিম কুক দায়িত্ব পান ৯ বছর আগে। প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবসের কাছ থেকে দায়িত্ব পান তিনি। ৪৪ বছর আগে এই কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন জবস। তিনি যখন মারা যান, তখন অ্যাপলের বাজারমূল্য ছিল ৩৫০ বিলিয়ন (৩৫ হাজার কোটি) ডলার। কোম্পানির মূল্য বাড়লেও বিগত দশকে আইফোনের মতো কোনো ‘গ্রাউন্ড ব্রেকিং’ পণ্য আনেনি অ্যাপল।