ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ভর্তি পরীক্ষায় ‘মুনাফা’ ১৭ কোটি টাকা
খরচ সংকুলানের কথা বলে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফি বাড়িয়ে ১০০০ টাকা করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার খরচ বিদ্যমান ফি দিয়ে সংকুলান না হওয়ার কথা বলে গত তিন শিক্ষাবর্ষে তা তিন দফায় বাড়ানো হয়েছে। উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান দাবি করেছিলেন, এই ফি বাড়ানোর পেছনে ‘মুনাফার’ কোনো চিন্তা নেই। প্রকৃতপক্ষে ভর্তির আবেদন ফি বাড়িয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মুনাফা করেছে। সর্বশেষ ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা থেকে ১৭ কোটি টাকা ‘লাভ’ হচ্ছে কর্তৃপক্ষের। এই মুনাফাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় বলা হচ্ছে।
২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ৬ হাজার ৩৫টি আসনের বিপরীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি ইউনিটে (ক, খ, গ, ঘ ও চ) ২ লাখ ৯০ হাজার ৪৮০ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেছিলেন। ১৭ জুন চ ইউনিটের মধ্য দিয়ে এবারের পরীক্ষা শেষ হয়েছে। এবারের ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি ছিল ১০০০ টাকা। প্রতি আবেদনে অনলাইন সার্ভিস চার্জ ও ব্যাংক পেমেন্ট সার্ভিস চার্জ বাবদ ৪৩ টাকা ৫০ পয়সা খরচ ছিল। এই খরচ বাদ দিলে আবেদন ফি থেকে ২৭ কোটি ৭৮ লাখ ৪৪ হাজার ১২০ টাকা সংগ্রহ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি ছিল ৩৫০ টাকা। ১০০ টাকা বাড়িয়ে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ফি ৪৫০ টাকা করা হয়। এর পরের শিক্ষাবর্ষে (২০২০-২১) আরও ২০০ টাকা বাড়িয়ে আবেদন ফি করা হয় ৬৫০ টাকা। সর্বশেষ ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির আবেদন ফি একলাফে ৩৫০ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার টাকা করা হয়।
২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে আবেদন ফি ১০০ টাকা বাড়ানোর কারণ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছিল, ভর্তি পরীক্ষায় প্রথমবারের মতো লিখিত অংশ থাকায় ফি ‘সামান্য’ বাড়ানো হয়েছে। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ২০০ টাকা বাড়ানোর কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল প্রথমবারের মতো ঢাকার বাইরে বিভাগীয় শহরের কেন্দ্রে পরীক্ষা নেওয়ার অতিরিক্ত খরচের কথা। ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ৩৫০ টাকা বাড়ানোর কারণ হিসেবে খরচ সংকুলান না হওয়ার কথা বলা হয়।
গত ৬ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমিটির সভায় ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে আবেদন ফি এক হাজার টাকা করার সিদ্ধান্ত হয়। ওই সভার পর উপাচার্য আখতারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি বাড়ানোর পেছনে মুনাফার কোনো চিন্তা নেই। বিভাগীয় শহরগুলোতে ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র হওয়ায় আমাদের ব্যয়টা অনেক বেশি। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে অনেক ভর্তুকি দিতে হয়েছে। যে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে, খরচ তার চেয়েও বেশি হতে পারে। ভর্তুকি যাতে না দিতে হয়, সে জন্য হয়তো শিক্ষকেরা স্যাক্রিফাইস (ত্যাগস্বীকার) করবেন৷ শিক্ষকদের অনেক কাজই বিনা পয়সায় করতে হবে।’
তবে ১৬ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক সিনেট অধিবেশনে অনুমোদিত বাজেট পর্যালোচনা করে উপাচার্যের ওই বক্তব্যের সত্যতা পাওয়া যায়নি। বাজেট ঘেঁটে দেখা গেছে, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) পরীক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ হয়েছে ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে শিক্ষক ও অন্যদের পারিশ্রমিক-পারিতোষিক হিসেবে ৮ কোটি, কাগজ ও মুদ্রণ খরচ হিসেবে ১ কোটি ৮৫ লাখ এবং বিবিধ ব্যয় হিসেবে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। অন্যদিকে এই শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা থেকে আয় হিসাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটে ১৭ কোটি টাকা আয় ধরা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আখতারুজ্জামান এখন দেশের বাইরে আছেন। ভর্তি পরীক্ষা থেকে ‘মুনাফার’ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য (প্রশাসন) মুহাম্মদ সামাদ উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
এ বিষয়ে আরেক সহ–উপাচার্য (শিক্ষা) এ এস এম মাকসুদ কামাল কোষাধ্যক্ষ মমতাজ উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। কোষাধ্যক্ষ প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, বাজেটে ভর্তি পরীক্ষা থেকে আয়-ব্যয়ের যে হিসাব দেখানো হয়েছে, তা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চাপিয়ে দেওয়া হিসাব। ভর্তি পরীক্ষা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ের কোনো সুযোগ নেই। পরীক্ষার পেছনে খরচ অনেক বেশি।