অভাগীর স্বর্গ
সৃজনশীল প্রশ্ন
শুধু বিঘে দুই ছিল মোর ভুঁই আর সবই গেছে ঋণে।
বাবু কহিলেন, ‘বুঝেছ উপেন, এ জমি লইব কিনে।’
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতায় জমিদার বাবুর নিষ্ঠুরতার এক বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে। সাত পুরুষের স্মৃতিবিজড়িত দুই বিঘা জমি উপেন দিতে না চাইলেও মিথ্যে মামলা দিয়ে জমিদার সে জমি দখল করে নেয়। ভিটেছাড়া হয়ে উপেন বাধ্য হয় পথে বের হয়।
প্রশ্ন
ক. শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কোন গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন?
খ. রসিক দুলে তার পায়ের ধুলা দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলল কেন?
গ. উদ্দীপকে ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের কোন দিকটি ফুটে উঠেছে—ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের সমগ্র ভাব ফুটে ওঠেনি—মন্তব্যটির যথার্থতা বিশ্লেষণ করো।
উত্তর
ক. শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় দেবানন্দপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
খ. স্বামীর প্রতি অভাগীর শ্রদ্ধাপূর্ণ মনোভাব দেখে রসিক দুলে কেঁদে ফেলল।
রসিক দুলে অভাগীর স্বামী। কিন্তু স্ত্রীর প্রতি কোনো কর্তব্যই সে পালন করেনি। রসিক দুলে আর একটি বিয়ে করে অন্য এক গ্রামে অবস্থান করত। এদিকে অভাব-অনটনের মধ্যেই অভাগীর দিন কাটতে থাকে। অসুস্থ হয়ে পড়লে বিনা চিকিৎসায় অভাগী যখন মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়, তখন সে রসিক দুলের পায়ের ধুলা প্রত্যাশা করে। স্ত্রীর এই শ্রদ্ধাবোধ দেখে রসিক দুলে কেঁদে ফেলে।
গ. উদ্দীপকে ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের সাধারণ মানুষের প্রতি জমিদারের নিষ্ঠুর আচরণের দিকটি ফুটে উঠেছে।
‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে জমিদারি প্রথার নির্মমতা প্রকাশ পেয়েছে। হতদরিদ্র মানুষের প্রতি তাদের যে নিষ্ঠুর আচরণ ও শোষণ, তা চরম অমানবিক। এই নিষ্ঠুরতার শিকার হয় সাধারণ মানুষ।
‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে অভাগীর জীবনের করুণ কাহিনি লক্ষ করা যায়। মৃত্যুপথযাত্রী অভাগীর শেষ ইচ্ছা ছিল, মৃত্যুর পর তাকে যেন ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে পোড়ানো হয় এবং ছেলের হাতের আগুন দেওয়া হয়। কিন্তু জমিদারের লোকজনের নিষ্ঠুর ও অমানবিক আচরণের কারণে অভাগীর শেষ ইচ্ছা পূরণ হয়নি। অভাগীর নিজের হাতে রোপণ করা বেলগাছটাও রসিক তার স্ত্রীর শব পোড়ানোর জন্য পায়নি। উদ্দীপকেও জমিদারের নির্মম এবং নিষ্ঠুর আচরণের বর্ণনা পাওয়া যায়। উপেন অনেক চেষ্টা করে পূর্বপুরুষের স্মৃতিবিজড়িত এই দুই বিঘা জমি রক্ষা করতে চায়। অবশেষে নানা কূটকৌশলে জমিদার এই দুই বিঘা জমি কেড়ে নেয়। এভাবেই উদ্দীপক ও ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে জমিদারি প্রথার নির্মমতা ফুটে উঠেছে।
ঘ. উদ্দীপকে ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের সমগ্র ভাব ফুটে ওঠেনি—মন্তব্যটির যথার্থতা রয়েছে।
অনেক জমিদার প্রজাদের কল্যাণ সাধন না করে প্রজাদের ওপর নির্মম অত্যাচার করে থাকে। শাসনের নামে তারা তাদের শোষণ করে। ফলে হতদরিদ্র প্রজাদের জীবনে নেমে আসে অবর্ণনীয় কষ্ট। ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে তা স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছে।
‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে জমিদারি প্রথার নির্মম রূপ ফুটে উঠেছে। অভাগীর শেষ ইচ্ছা পূরণ হয়নি জমিদারের হৃদয়হীন লোকদের কারণে। উদ্দীপকেও আমরা একজন জমিদারের নিষ্ঠুর আচরণের চিত্র দেখতে পাই। যার শিকার হয়েছে দরিদ্র উপেন। উদ্দীপক ও ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের এসব দিক সাদৃশ্যপূর্ণ হলেও ‘অভাগীর স্বর্গ’ রচনায় আরও নানান বর্ণনা রয়েছে। যেমন ঠাকুরদাস মুখুয্যের বর্ষীয়সী স্ত্রীর শবযাত্রার বর্ণনা, দূর থেকে অভাগীর সেই দৃশ্য দেখা, অভাগীর প্রতি তার স্বামী রসিকদাসের দায়িত্বহীনতা, কাঙালির বেতের কাজ শেখা, অভাগীর শেষ ইচ্ছা পূরণ না হওয়া ইত্যাদি।
উদ্দীপকে ‘অভাগীর স্বর্গ’ রচনায় উল্লিখিত জমিদারি প্রথার নির্মমতা প্রকাশ পেয়েছে। ‘অভাগীর স্বর্গ’ রচনায় আরও নানান বর্ণনার সমাবেশ ঘটেছে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের সমগ্র ভাব প্রকাশ পায়নি।
শরীফুল ইসলাম শরীফ, সিনিয়র শিক্ষক , আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল, ঢাকা
এই বিষয়ের প্রকাশিত পূর্বের সৃজনশীল প্রশ্ন