এইচএসসি ২০২২ - ভূগোল ১ম পত্র | অধ্যায় ৮ : সৃজনশীল প্রশ্ন

অধ্যায় ৮

সৃজনশীল প্রশ্ন

নিচের চিত্র দেখে প্রশ্নের উত্তর দাও।

প্রশ্ন

ক. জোয়ার-ভাটা কাকে বলে?

খ. জোয়ারের বান কী? ব্যাখ্যা করো।

গ. ওপরের চিত্রে ‘A’ চিহ্নিত স্থানে যে ধরনের জোয়ারকে বোঝানো হয়েছে, তা ব্যাখ্যা করো।

ঘ. উদ্দীপকে সৃষ্ট জোয়ার বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে কী প্রভাব ফেলে, বিশ্লেষণ করো।

উত্তর

ক. চন্দ্র-সূর্যের আকর্ষণ শক্তি এবং পৃথিবীর কেন্দ্রাতিগ শক্তি প্রভৃতির কারণে সমুদ্রের পানি নির্দিষ্ট সময় অন্তর একেক জায়গায় ফুলে ওঠে, আবার অন্য জায়গায় নেমে যায়। সমুদ্রের পানির প্রভাবে ফুলে ওঠাকে জোয়ার এবং নেমে যাওয়াকে ভাটা বলে।

খ. জোয়ারের সময় সমুদ্রের পানি উঁচু হয়ে মোহনা দিয়ে দ্রুত নদীতে প্রবেশ করে, ফলে নদীর পানিও তখন বৃদ্ধি পায়। এভাবে জোয়ারের পানি নদীতে আসার সময় মাঝেমধ্যে অত্যধিক উঁচু (৫-৭ মিটার) হয়ে প্রবল বেগে নদীতে প্রবেশ করে। তখন একে বান (Tidal Bore) বলে। অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে নদীতে জোয়ারের সময় বান ডাকার ফলে অনেক সময় নৌকা, লঞ্চ প্রভৃতি ডুবে যায়।

গ. উদ্দীপকে প্রদর্শিত চিত্রে ‘A’ চিহ্নিত স্থানে মুখ্য জোয়ার বোঝানো হয়েছে। চন্দ্র ও সূর্যের আকর্ষণ ও আবর্তনশীল পৃথিবীর কেন্দ্রাতিগ শক্তির প্রভাবেই জোয়ার-ভাটা সংঘটিত হয়। পৃথিবীর উপরিভাগ সর্বত্র সমান জলরাশি দ্বারা আবৃত। পৃথিবীর পৃষ্ঠে ‘A’ স্থান চন্দ্রের সর্বাপেক্ষা নিকটবর্তী। সুতরাং, চন্দ্রের আকর্ষণ ‘A’ স্থানেই সর্বাপেক্ষা বেশি। পানি তরল পদার্থ বলে পৃথিবীর কঠিন অংশ অপেক্ষা সহজেই এবং বেশি পরিমাণে আকৃষ্ট হয়। কাজেই ‘A’ স্থানের পানি ফুলে ওঠে এবং উক্ত স্থানে জোয়ার হয়। এ জোয়ারের নাম মুখ্য বা প্রত্যক্ষ জোয়ার।

ঘ. উদ্দীপকে সৃষ্ট জোয়ার বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে যেভাবে প্রভাব ফেলে, তা নিচে অলোচনা করা হলো:

ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধা: জোয়ার-ভাটার ফলে সমুদ্রগামী জাহাজ চলাচলে তথা ব্যবসায়-বাণিজ্যের বিশেষ সুবিধা হয়। জোয়ারের সময় নদীর মোহনায় ও তার অভ্যন্তরে পানি বেশি উঁচু হয়। ফলে বড় বড় সমুদ্রগামী জাহাজ আমদানি করা পণ্য নিয়ে বাধাহীনভাবে নদীতে প্রবেশ করতে পারে এবং ভাটার টানে এসব জাহাজ রপ্তানি করা পণ্য নিয়ে সহজেই সমুদ্রে নেমে আসতে পারে।

নদীর পানি নির্মল থাকে: জোয়ার-ভাটার ফলে নদীর পানি নির্মল থাকে। দৈনিক দুবার জোয়ার-ভাটা হওয়ার ফলে নদীতে সঞ্চিত সব আবর্জনা ধুয়েমুছে যায়।

নদীমুখে নৌ চলাচলযোগ্য জায়গা থাকা: জোয়ার-ভাটার জন্য পলিমাটি পড়ে নদীর মুখ বন্ধ হয়ে যেতে পারে না। ফলে ওই স্থান নৌ চলাচলযোগ্য থাকে। ইংল্যান্ডের টেমস নদীতে জোয়ার-ভাটার ফলে পলি জমতে পারে না বলে সর্বদা নাব্য থাকে।

লবণ উৎপাদনকেন্দ্র: জোয়ার-ভাটার ওপর নির্ভর করে সমুদ্র উপকূলে লবণ তৈরির কারখানা গড়ে ওঠে। জোয়ারের সময় সমুদ্রের পানি লবণ উৎপাদনকেন্দ্রের অগভীর বিস্তীর্ণ জলাভূমিতে প্রবেশ করে।

সেচকাজে সুবিধা: উপকূলীয় অনেক নদীর পাশে খাল খনন করে পানি আটকিয়ে জমিতে সেচ দেওয়া হয়। মৎস্য বন্দর ও মৎস্য ব্যবসাকেন্দ্র: জোয়ার-ভাটার প্রভাবে সমুদ্রের মৎস্য বন্দর ও মৎস্য ব্যবসায় কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশের উপকূল রেখার সর্বত্রই অসংখ্য ছোট-বড় নদীর মোহনা ও খাঁড়ি বিদ্যমান। এসব মোহনা ও খাঁড়িতে মৎস্যখাদ্যের প্রাচুর্যের কারণে অসংখ্য মৎস্য এসে ভিড় জমায় এবং প্রচুর মাছ ধরা পড়ে। মাছ দেশ-বিদেশের বাজারে বিক্রি করে প্রচুর অর্থ উপার্জিত হয়।

জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে সুবিধা: বিশ্বের বহু দেশে বিশাল আকারের জলাধার তৈরি করে জোয়ারের পানি ধরে রাখে। ভাটার সময় ওই পানি সরু পথ নির্মাণ করে তথায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। কর্মসংস্থান: উপকূলীয় অঞ্চলে লবণ উৎপাদন, মৎস্য শিকার, মৎস্য বিক্রয়কেন্দ্র, মৎস্য প্রজনন ব্যবস্থা কেন্দ্র, ধৃত মাছ শুঁকিয়ে শুঁটকি করা প্রভৃতি কাজে বহুসংখ্যক লোক নিয়োজিত থাকার ফলে দেশের বেকারত্ব হ্রাস পায়। শেষে বলা যায়, জোয়ার–ভাটা বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে মৎস্য চাষ, মৎস্য শিকার, লবণ চাষ, ব্যবসা-বাণিজ্য, নৌ চলাচল, কক্সবাজার ও কুয়াকাটার পর্যটনশিল্প প্রভৃতি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর ব্যাপকভাবে প্রভাব রয়েছে।

মো. শাকিরুল ইসলাম, প্রভাষক, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা

পূর্বের দিনের পড়া