মজুরির পর বোনাসও কম পাবেন পোশাকশ্রমিকেরা
রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্পের শ্রমিকেরা গতবারের তুলনায় অর্ধেক ঈদ বোনাস পাবেন। বাকি অর্ধেক পরবর্তী ছয় মাসে সমন্বয় করে দেবে মালিকপক্ষ। ফলে মজুরির পর আপতত ঈদ বোনাসও কম পাবেন পোশাকশ্রমিকেরা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আজ শনিবার আয়োজিত সভায় পোশাকশ্রমিকদের বোনাস পরিশোধ নিয়ে সিদ্ধান্তটি হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক, সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী ও শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বিকেএমইএর সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান, সাবেক নৌমন্ত্রী ও শ্রমিকনেতা শাজাহান খান, শ্রমিকনেতা আমিরুল হক, বাবুল আক্তার, তাসলিমা আখতার, সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, শ্রমিক সংগঠনের নেতারা মূল মজুরির শতভাগ বোনাস দাবি করেন। তবে মালিকপক্ষের নেতারা ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিতসহ নানা কারণ দেখিয়ে বলেন, মূল মজুরির ৫০ শতাংশের বেশি বোনাস দেওয়া সম্ভব নয়। প্রায় চার ঘণ্টা আলোচনার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বোনাসের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানান।
সভার সিদ্ধান্তের বিষয়ে বাবুল আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, শ্রমিকদের গতবারের মতোই ঈদ বোনাস দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যেসব মালিকের সামর্থ্য আছে তাঁরা ঈদের আগে শতভাগ দেবেন। আর যাঁদের সামর্থ্য নেই তাঁরা গতবারের মতো ৫০ শতাংশ দেবেন। তবে কেউ ৫০ শতাংশের কম দিতে পারবেন না। বাকি অংশ মালিকপক্ষ শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপ–আলোচনা করে দেবে।
অন্যদিকে সভার সিদ্ধান্তের বিষয়ে পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও সাংসদ আব্দুস সালাম মুর্শেদী প্রথম আলোকে বলেন, শ্রম আইন অনুযায়ী গতবার পোশাকশিল্পের মালিকেরা যে পরিমাণ বোনাস দিয়েছিলেন, এবার তার অর্ধেক দেবেন। বাকি অর্ধেক আগামী ছয় মাসের মধ্যে সমন্বয় করা হবে। কারণ তিন মাসের মধ্যে আরেকটি ঈদ আছে। তা ছাড়া জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে পোশাকের ক্রয়াদেশ থাকে কম।
আব্দুস সালাম মুর্শেদী আরও বলেন, চলতি মাসের পুরো মজুরি আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে পরিশোধ করবেন মালিকেরা। তা ছাড়া এপ্রিল মাসের মজুরির ৫ শতাংশও আগামী মাসের মজুরির সঙ্গে দেওয়া হবে।
গত বৃহস্পতিবার শ্রম প্রতিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ত্রিপক্ষীয় সভা অনুষ্ঠিত হলেও বোনাসের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। সেটির ধারাবাহিকতায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আজকের সভাটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। তার আগে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ত্রিপক্ষীয় সভায় সিদ্ধান্ত হয়, গত এপ্রিল মাসে কারখানা বন্ধের সময় শ্রমিকেরা ৬৫ শতাংশ মজুরি পাবেন। তবে ৬০ শতাংশ মে মাসে ও বাকি ৫ শতাংশ জুনে দেওয়া হবে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে পোশাকশ্রমিকেরা এমনিতেই জটিল অবস্থার মধ্যে রয়েছেন। পুরো মজুরির পরিবর্তে ৬৫ শতাংশ দেওয়ায় তাঁরা বিপর্যস্ত। এই অবস্থায় বোনাসও যদি শ্রমিকেরা পুরোটা না পান, তাহলে তাঁদের পরিবার–পরিজন নিয়ে নিয়ে ঈদের দিনও সংকটে যাবে।
এদিকে মাসের অর্ধেক সময় পেরিয়ে গেলেও অধিকাংশ পোশাক কারখানা এখনো মজুরি পরিশোধ করতে পারেনি। যদিও সরকারের গঠিত তহবিল থেকে ঋণ নিয়েই অধিকাংশ কারখানার মালিক এপ্রিল, মে ও জুনের মজুরি দেবেন। অন্যদিকে শতভাগ মজুরিসহ বকেয়া মজুরির দাবিতে আজও গাজীপুর, আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জের অনন্ত ১৬টি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেছেন।
শিল্প পুলিশ জানায়, গাজীপুর, আশুলিয়া-সাভার, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও খুলনার ৭ হাজার ৬০২টি শিল্পকারখানার মধ্যে ২ হাজার ৫৫২টি গত মাসের মজুরি পরিশোধ করেছে। তার মধ্যে বিজিএমইএর ১ হাজার ৮৮২ সদস্য কারখানার মধ্যে মজুরি দিয়েছে ৭৪০টি। বিকেএমইএর সদস্য ১ হাজার ১০১টি সদস্য কারখানার মধ্যে ৩১০টি শ্রমিকের মজুরি দিয়েছে। এ ছাড়া বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর সদস্য ৩৮৯টি কারখানার মধ্যে ১৪২টি মজুরি পরিশোধ করেছে। তবে বিজিএমইএর ৫১ ও বিকেএমইএর ৪০টি সদস্য কারখানা এখন পর্যন্ত গত মার্চেও মজুরি দেয়নি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে শিল্প পুলিশের সদর দপ্তরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন জানান, বকেয়া মজুরির দাবিসহ অন্য দাবিতে গাজীপুরের আলফা ড্রেসেস, এটিএস সোয়েটার, টার্গেট ফ্যাশনওয়্যার, স্টাইলিশ গার্মেন্টস, তাসনিটওয়্যার, বেলি সীমা অ্যাপারেল, ডেল্টা গ্রুপসহ কয়েকটি কারখানায় শ্রম অসন্তোষের ঘটনা ঘটে। তা ছাড়া আশুলিয়ার ৫টি ও নারায়ণগঞ্জের ১টি কারখানায় শ্রম অসন্তোষের ঘটনা ঘটেছে।